নাচোলে ভ্যানচালক রাজু হত্যা মামলায় ৩ জন গ্রেপ্তার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে রাজু আহম্মেদ (২১) নামের ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান চালক হত্যা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার উত্তর সিঙ্গেরগাড়ী তেলমনপাড়া গ্রামের মো. তরিকুল ইসলাম ওরফে ভ্যালেনের ছেলে মধু বিক্রেতা মো. খাদেমুল ইসলাম মধু (২৪) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর মসজিদপাড়ার মো. আমানত আলীর ছেলে রিকশাভ্যান মেকার আমিনুর রহমান (২২) ও তার পিতা মো. আমানত আলী।
শনিবার (২৮ জুন) বেলা ১১টায় পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এ.এন.এম. ওয়াসিম ফিরোজ এসব তথ্য জানান।
জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, নিহত রাজু আহম্মেদ ও মধু গত ২২ জুন রবিবার রাতে একসঙ্গে মাদক সেবন করে। এ সময় রাজুকে পরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত মদ পান করায় মধু। সে (মধু) বছর দশেক আগে নীলফামারী থেকে নাচোলে এসে বিয়ে করে বসবাস শুরু করে এবং বিভিন্ন স্থানে মধু সংগ্রহ করে। মধুকে সবাই একজন মধু বিক্রতা হিসেবে চিনে। মাঝে স্ত্রীকে তালাকের পর নাচোল রেলস্টেশন পাড়ায় বসবাস শুরু করে। সেখনেই ভ্যানচালক রাজুর সঙ্গে তার পরিচয়। তারা একসঙ্গে মাদক সেবন করত।
ওয়াসিম ফিরোজ আরো জানান, রাজুর ভ্যানটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে মধু। ঘটনার দিন রাজু ও মধু একসঙ্গে চোলাইমদ পান করে। রাজু অতিরিক্ত মদ পান করায় সে আর ভ্যান চালাতে পারেনি। মধুই ভ্যান চালিয়ে ফতেপুর ইউনিয়নের পারিলা গ্রামের একটি আমবাগানের পাশে নিয়ে গিয়ে মধুর চাক ভাঙার ধারালো চাকু দিয়ে রাজুকে গলা কেটে হত্যা করে রাস্তার পাশে মরদেহ ফেলে ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায় মধু। পরে সে আমিনুর রহমানের কাছে নগদ ১৪ হাজার টাকায় রিকশাভ্যানটি বিক্র করে তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারী চলে যায়।
মধুকে জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে হত্যাকারী হিসেবে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি আরো জানান, ঘটনার পর দিন সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত রাজু আহম্মেদের মা মোছা. সুলতানা বেগম (৪৮) বাদী হয়ে নাচোল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়। এরপর মামলার অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ও নাচোল থানা পুলিশ যৌথভাবে জোর তৎপরতা শুরু করে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৭ ভোর রাতের দিকে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানা এলাকা হতে রাজু হত্যায় সরাসরি জড়িত মো. খাদেমুল ইসলাম মধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মধু জানায়, সে একজন মধু ব্যবসায়ী; দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় মধুর ব্যবসা করে আসছে। এলাকার সবাই তাকে মধুওয়ালা বলে চিনে। একসময় নাচোলের বীরেনবাজার এলাকায় বিয়ে করে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করত। তার একটি ছেলেসন্তানও রয়েছে। কিন্তু প্রায় ৪ মাস আগে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে সে নাচোল রেলস্টেশন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে। একই এলাকায় রাজুও বসবাস করায় তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। তারা একসঙ্গে নিয়মিত গাঁজা সেবন করত।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, হত্যাকাণ্ডের পর মরদেহ পাশেই ফেলে দিয়ে ভ্যানে থাকা ন্যাকড়া দিয়ে ভ্যানের রক্ত মুছে ভ্যানটি নিয়ে মিরকাডাঙ্গা গ্রামের দিকে যায় মধু। কিছুদুর যাওয়ার পর ভ্যান থামিয়ে রাস্তার পাশে জমিতে জমে থাকা পানিতে নিজের হাত ধুয়ে নেয়। সেখানেই রক্তমাখা ন্যাকড়াটি ফেলে দেয় (যা পর দিন উদ্ধার হয়) এবং মৃত রাজুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি কাদার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে, যা আসামির দেখানো মতে পরে উদ্ধার করা হয়। ওই রাতে আসামি খাদেমুল মল্লিকপুর, গোমস্তাপুর ও চাঁনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানটি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে। রাত শেষ হলে সকাল অনুমান সাড়ে ৮টার দিকে রিকশাভ্যান মেকার আমিনুর রহমান ও তার পিতা মো. আমানত আলীর কাছে ২০ হাজার টাকায় দরদাম ঠিক করে নগদ ১৪ হাজার টাকা নিয়ে ভ্যানটি বিক্রি করে দেয়। বাকি টাকা বিকাশে নিবে বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী বাজারে অবস্থান করে পর দিন সকালে বিআরটিসি বাসে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় মধু। গ্রেপ্তার খাদেমুলের দেওয়া তথ্য মতে, ২ ও ৩ নং আসামির বাড়ি হতে মৃত রাজু আহাম্মেদের ভাড়ায়চালিত অটোভ্যানটিসহ তিনটি রিকশা ভ্যান উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন গোমস্তাপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসান তারেক, জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ শাহীন আকন্দ ও নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।