মাদকাসক্তদের জন্য হবে পৃথক কারাগার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, মাদকাসক্তদের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে পৃথক কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা আছে সরকারের। একই সঙ্গে সাতটি বিভাগীয় শহরে মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন করা হয়েছে।  মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।
মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করে মাদকের চাহিদা হ্রাস এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ২৬ জুনকে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে দিবসটি পালনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও সরকারিভাবে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত আজকের অনুষ্ঠানে সরকারের মাদকবিরোধী নানা কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “যেকোনো দেশের উন্নতির প্রধান নিয়ামক হলো কর্মক্ষম বিপুল যুবশক্তি। ভবিষ্যতে উন্নত এবং সফল রাষ্ট্রের কাতারে উপনীত হতে হলে তরুণ সমাজকে মাদক থেকে অবশ্যই মুক্ত রাখতে হবে। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানাভাবে মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। আমাদের দেশে মাদক চোরাচালানের একটি ভয়াবহ বিষয় হলো নারী, শিশু এবং কিশোরদেরকে এ গর্হিত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে, তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনই তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে। উপদেষ্টা বলেন, “প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বিভিন্ন দেশে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও পাচার বাড়ছে। নতুন ধরনের মাদক প্রতিরোধে আমাদেরকে নতুনভাবে কর্মকৌশল তৈরি করতে হচ্ছে। নতুন ধরনের মাদক সম্পর্কে দেশের সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থা সজাগ আছে এবং এগুলোর বিস্তার রোধে উদ্যোগ গ্রহণ অব্যাহত আছে।”

সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে মাদকের বড় চালান জব্দের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, কোস্টগার্ডের পাশাপাশি নোডাল এজেন্সি হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় ইতোমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (কর্মকর্তা-কর্মচারী) অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতিমালা-২০২৪ প্রণীত হয়েছে এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রথম ব্যাচকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারকে বহুমাত্রিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।