বিজয় দিবসে বীর শহীদদের প্রতি বিজিবি মহাপরিচালকের শ্রদ্ধা

বিজয় দিবসে বীর শহীদদের প্রতি বিজিবি মহাপরিচালকের শ্রদ্ধা মহান বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। আজ সকালে ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। এ সময় বিজিবির একটি সুসজ্জিত চৌকস দল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। এর আগে, দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবির সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর, ব্যাটালিয়ন ও ইউনিটগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিজিবি মহাপরিচালক প্রত্যুষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
মহান বিজয় দিবস আজ

মহান বিজয় দিবস আজ আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এ বিজয় দিবস বাঙালি জাতির আত্মগৌরবের একটি দিন। এ বছর এ দিনটিতে বাঙালি জাতির বিজয়ের ৫৪ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৭১ সালের এদিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব-মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম হানাদার মুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও গৌরবগাঁথা গণবীরত্বে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় বাঙালি জাতি। বাঙালি জাতি তার অধিকার আদায়ে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে উঠে। ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় জাতি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও ভ্রান্ত দ্বিজাতির তত্ত্বের ভিত্তিতে যে অসম পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় তার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয় বাঙালি জাতিকে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরু থেকে বাঙালি জাতির ওপর শুরু হয় বৈষম্য, শোষণ, অত্যাচার নির্যাতন। অর্থনৈতিক, সরকারি চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য সব দিক থেকে বঞ্চিত হতে থাকে বাঙালি তথা এ ভূখণ্ডের মানুষ। পাকিস্তানের এই শোষণ বঞ্চনা আর অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি সোচ্চার হতে থাকে এবং ধাপে ধাপে পাকিস্তানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। বাঙালির এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে নেতৃত্বে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির এই আন্দোলনকে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইট নামে বাঙালিদের হত্যা যজ্ঞে মেতে উঠে। এরপর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতার ঘোষণায় সারা দিয়ে সর্বস্তরের বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী ছাত্র, শিক্ষক, যুবক, নারী, সাংস্কৃতিক কর্মী, পেশাজীবী মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। আধুনিক অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে নামে এবং জীবন দেয়। জীবনের নিশ্চিত ঝুঁকি নিয়ে বাংলার দামাল ছেলে, মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের পাশে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত। সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ এবং কোটি বাঙালিকে আশ্রয় দিয়ে ভারত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ওই সময় পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন দিয়ে সরাসরি বাংলাদেশের পক্ষ নেয়। বিশ্ব জনমতও গড়ে উঠতে থাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালির সাহসিকতার কাছে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ১৬ ডিসেম্বর বীর বাঙালির বিজয় দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। প্রতি বছর বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে বিজয় দিবস উদযাপন করেন।
সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিংয়ে বাংলাদেশের

সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিংয়ে বাংলাদেশের বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর উপলক্ষে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা নিয়ে সর্বাধিক প্যারাস্যুটিং করে বিশ্বরেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। এতে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকা হাতে স্কাই ডাইভিং করেন। আজ বেলা ১২টার দিকে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এই প্যারাস্যুটিং করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন বাহিনী প্রধান, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ‘টিম বাংলাদেশ’ এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপারের এই পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন বিশ্বের সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী। এটি একটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। ১২ হাজার উচ্চতা থেকে এই ফ্রি ফল জাম্পে অংশ নেওয়া এই ৫৪ জন হলেন- সেনাবাহিনীর ৪৬, নৌ বাহিনীর ৫, বিমান বাহিনীর ২ জন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। ৪৯ থেকে ৫৪ নম্বরধারী ফ্রি ফল জাম্পাররা সুদানে নিহত ৬ জন শান্তিরক্ষীদের নাম বুকে ধারণ করেন। এই ফ্রি ফল জাম্পের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন এবং ড্রপ জোন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এম ইমরুল হাসান। এছাড়া তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে মহান বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী পৃথকভাবে ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শন করে। এখানে একটি বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শো আয়োজন করা হয়।
বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি-প্রধান উপদেষ্টা

বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি-প্রধান উপদেষ্টা ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ সূর্যোদয়ের সময় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করেন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা। প্রথমে সকাল ৬টা ৩৩ মিনিটে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এর কিছুক্ষণ পর সকাল ৬টা ৫৬ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ১৬ ডিসেম্বর প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবস উদযাপন শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকাসহ ব্যানার, ফেস্টুন এবং রঙিন পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে।