ইউরোপ ছেড়ে মেসির দলে ডি পল

ইউরোপ ছেড়ে মেসির দলে ডি পল ইউরোপীয় ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) পা রাখছেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার রদ্রিগো ডি পল। ৩১ বছর বয়সে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ ছাড়ছেন তিনি, যোগ দিচ্ছেন লিওনেল মেসির দল ইন্টার মায়ামিতে। দীর্ঘদিন ধরেই ডি পলকে দলে টানার চেষ্টা করছিল ইন্টার মায়ামি। অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্যকে নিজেদের দলে নিচ্ছে ফ্লোরিডাভিত্তিক এই ক্লাব। ইএসপিএনের তথ্য অনুযায়ী, আপাতত ধারে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ডি পল। আগামী বছরের জুনে অ্যাতলেটিকোর সঙ্গে তার বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তিনি স্থায়ীভাবে মায়ামির হয়ে খেলবেন। অ্যাতলেটিকো ডি পলের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে না। মূলত তার বয়স এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কারণেই তাকে ছাড়ার পথে হাঁটছে স্প্যানিশ ক্লাবটি। এরই মধ্যে তারা ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় রেখেছে আরেক তরুণ আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার থিয়াগো আলমাদাকে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত চুক্তি করেছে আলমাদার সঙ্গে। একইসঙ্গে রিয়াল বেতিস থেকে মার্কিন মিডফিল্ডার জনি কার্ডোসোকেও দলে ভিড়িয়েছে তারা।অ্যাতলেটিকোর হয়ে ডি পল খেলেছেন ১৩৪টি ম্যাচ, গোল করেছেন ১১টি। ক্লাবটির মাঝমাঠে তার ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তবে থিয়াগো আলমাদা ও জনি কার্ডোসোর মতো তরুণদের আগমনে নতুন চেহারা পাচ্ছে সিমিওনের দল। ডি পলকে ছেড়ে দিয়ে লাভবান হবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। ইন্টার মায়ামির জন্য ডি পল হতে পারেন বড় এক সংযোজন। মেসি, বুসকেটস, জর্দি আলবার মতো অভিজ্ঞদের সঙ্গে তার রসায়ন মাঠে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। শুধু বিশ্বকাপজয়ী সতীর্থ হিসেবেই নয়, ব্যক্তিগতভাবেও মেসির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডি পলের আগমন ক্লাবের মাঝমাঠে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছে মায়ামি কর্তৃপক্ষ।

থমথমে সিরিয়া, নি*হত ছাড়ালো ৩৫০

থমথমে সিরিয়া, নি*হত ছাড়ালো ৩৫০ সিরিয়ার দক্ষিণের সুবাইদা প্রদেশে গত সপ্তাহের শেষ দিকে থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩৫০ জন ছাড়িয়েছে। বার্তাসংস্থা এএফপি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস নামে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে। এর আগে নিহতের সংখ্যা ৩০০ বলে জানানো হয়েছিল। সংস্থাটি জানিয়েছে, রোববার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৭৯ জন দ্রুজ যোদ্ধা এবং ৫৫ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। এই সাধারণ মানুষদের মধ্যে ২৭ জনকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্যরা। সংঘর্ষে প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৮৯ সদস্য এবং ১৮ জন বেদুইন যোদ্ধাও প্রাণ হারিয়েছেন। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সুবাইদায় নিহতদের মধ্যে একজন মিডিয়া কর্মীও রয়েছেন, তার নাম হাসান আল-যাবি। সিরিয়ান সাংবাদিক ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ‘অবৈধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ গুলিতে তার মৃত্যু হয়। তবে তিনি কোন সংবাদমাধ্যমে কাজ করতেন, তা উল্লেখ করা হয়নি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ার ভেতরে তাদের নিজস্ব তথ্যসূত্রের ওপর নির্ভর করে কাজ করে। তারা আরও জানিয়েছে, দক্ষিণ সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় ১৫ জন প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্য নিহত হয়েছেন।

ইরাকে শপিংমলে আগুন, নি*হত ৫০

ইরাকে শপিংমলে আগুন, নি*হত ৫০ ইরাকের একটি শপিংমলে আগুন লেগেছে। এতে হতাহত হয়েছে কমপক্ষে ৫০ জন এবং আরও ১১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আজ ইরাকের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর কুতের একটি শপিংমলে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন। ওয়াসিত প্রদেশের গভর্নর মোহাম্মদ আল-মিয়াহি সরকারি সংবাদ সংস্থা আইএনএকে জানিয়েছেন, ইরাকি মিডিয়ার শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে ৫ তলা একটি শপিং মল বিশাল আগুন এবং ধোঁয়ায় ঢেকে আছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

ঢাকায় গাছের অক্সিজেন যোগান ৫ শতাংশ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

ঢাকায় গাছের অক্সিজেন যোগান ৫ শতাংশ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি বিশুদ্ধ বাতাস ও অক্সিজেন মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকা বর্তমানে মারাত্মক বায়ুদূষণ ও অক্সিজেন ঘাটতির মুখোমুখি। একদিকে শহরজুড়ে গাছ কাটা ও নির্মাণকাজ চলছে ব্যাপকভাবে, অন্যদিকে ধূলিকণা, ধোঁয়া, ও বিষাক্ত গ্যাসে ঢাকার বাতাস হয়ে উঠছে বিপজ্জনক। ফলে নগরবাসী মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকার আয়তন প্রায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ (২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য)। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম শহর। জনঘনত্বের দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ২৩ হাজার লোক বসবাস করে। ঢাকা শহরের প্রশাসনিক কাঠামো দুই ভাগে বিভক্ত। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়তন প্রায় ১৯৬.২২ বর্গকিলোমিটার এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আয়তন প্রায় ১০৯.২৫ বর্গকিলোমিটার। দুই সিটিতে (৫৪+৭৫) ১২৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে ১ কোটির বেশি মানুষ বসবাস করলেও এই বিপুল জনসংখ্যার বিশুদ্ধ অক্সিজেন যোগান দেওয়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত গাছপালা। ১৯১৭ সালের পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, ঢাকা হবে একটি বাগানের শহর। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ন, আবাসন ও জনসংখ্যার চাপে ঢাকা শহর থেকে সবুজ, মাঠ ও জলাশয় হারিয়ে গিয়েছে। ঢাকা নগরের আওতায় ছোট বড় মিলিয়ে মাত্র ৪৮টি উদ্যান ও প্রায় ২৫টি খেলার মাঠ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব উদ্যান দখল, অবহেলা বা অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে অকেজো হয়ে পড়েছে। সরকারের বন বিভাগ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সংস্থা ইউএস ফরেস্ট সার্ভিসের করা এক বৃক্ষ জরিপ (২০২০) থেকে জানা যায়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ছোট–বড় প্রায় ১৩ লাখ গাছ রয়েছে। ১৩ লাখ গাছের মধ্যে ঢাকা উত্তরে রয়েছে ৬ লাখ ৮২ হাজার ৬০০টি, আর ঢাকা দক্ষিণে আছে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ গাছ। ঢাকায় প্রতি সাতজনের বিপরীতে রয়েছে মাত্র একটি গাছ। তথ্যে জানা যায়, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দৈনিক ৫৫০ লিটার অক্সিজেন গ্রহণ করে। সেই হিসেবে মহানগরে প্রায় ১ কোটি মানুষের জন্য দৈনিক প্রায় ৫৫০ কোটি লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা মহানগরের গাছপালাগুলো মিলে দৈনিক যোগান দিতে পারে মাত্র ১৮ কোটি লিটার, যা প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ৩-৫ শতাংশ। বাকি অক্সিজেন আসছে বাইরে থেকে অথবা উৎপাদনশীল গাছের পরিবর্তে কিংবা দূষণপূর্ণ বাতাস থেকে। বাতাসে সাধারণভাবে প্রায় ২১ শতাংশ অক্সিজেন থাকে, যা শহর ও গ্রামের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য করে না। কিন্তু পার্থক্য হয় বাতাসের বিশুদ্ধতায়। শহরের বাতাসে ধুলাবালি, ধোঁয়া, ও বিষাক্ত গ্যাস বেশি মিশে থাকে, যা শ্বাস নেওয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। দূষণের কারণ অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন, বহুতল ভবন, মার্কেট, কংক্রিট স্থাপনায় নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। ফলে সবুজায়ন কমছে, সেই সাথে অক্সিজেনের মাত্রা ও কমছে। ঢাকা ও এর আশেপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা ও ফ্যাক্টরি থেকে পিএম ২.৫ (প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা-পিএম ২.৫) উপস্থিতিসহ বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে অক্সিজেন। ঢাকার অক্সিজেন দূষণের প্রধান কারণ হলো মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির নির্গত কালো ধোঁয়া, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি বায়ুতে মিশে যায়। ঢাকার বাইরে থেকে আসা হাজার হাজার ট্রাক ও দূরপাল্লার যানবাহনের ধুলা ও ধোঁয়ার পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণের জন্য এখানকার বায়ু দূষিত হয়ে পড়ে। মহানগর এলাকায় পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। খোলা ডাস্টবিন, লেক, পুকুর, ড্রেনেজের নর্দমা ও আবর্জনার পচনশীল গন্ধযুক্ত গ্যাস বাতাসে বিষ মিশিয়ে দেয়। তাছাড়া দীর্ঘদিন খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজের সামগ্রী রাস্তায় পড়ে থাকা ধুলা বাতাসকে দূষিত করে পিএম ১০/পিএম ২.৫-এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫ ও পিএম ১০-এর উপস্থিতি। এর ফলে প্রায় দিনই দূষিত তালিকায় রয়েছে ঢাকা। পিএম ২.৫ ও পিএম ১০ হলো বাতাসে ভাসমান অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার মাপ। এই কণাগুলো মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে নানা ধরনের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। অক্সিজেন সংকটে স্বাস্থ্যঝুঁকি বিশুদ্ধ অক্সিজেন সংকটে মানুষকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বৈশ্বিক বায়ুদূষণের ঝুঁকি বিষয়ক ‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের যে পাঁচটি দেশের শতভাগ মানুষ দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করে, তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ। বায়ু দূষণজনিত মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পঞ্চম। দূষিত বায়ুর কারণে ২০১৭ সালে দেশে মারা গেছে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ। সেন্টার ফর রিসার্চ অন অ্যানার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরআইএ) এক গবেষণার তথ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বায়ুদূষণের প্রভাবে প্রতি বছর পাঁচ হাজার ২৫৮ শিশুসহ এক লাখ দুই হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকালমৃত্যু হচ্ছে। একই কারণে প্রতি বছর নয় লাখ মায়ের অপরিণত গর্ভধারণ হচ্ছে এবং প্রায় সাত লাখ কম ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। আর এ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে প্রতিবছর ছয় লাখ ৭০ হাজার রোগী জরুরি বিভাগে ভর্তি হচ্ছেন যার ফলে সম্মিলিতভাবে বছরে ২৬ কোটি ৩০ লাখ কর্মদিবস হারাচ্ছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভাবস্থায় কম বায়ুদূষণের শিকার মায়েদের তুলনায় অধিক বায়ুদূষণে ভোগা মায়েদের ‘প্রিটার্ম বার্থ’ (সময়ের আগে জন্মদান) ও কম ওজনের বাচ্চা প্রসবের ঝুঁকি অনেক বেশি। জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) তথ্য মতে, দূষিত অক্সিজেনের অভাবে শিশুদের মধ্যে হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার হার বেড়েছে ২৮ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি ৩ গুণ বেড়েছে। কর্মক্ষম মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন স্লিপ ডিসঅর্ডার, মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি ইত্যাদিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য মতে, বায়ু দূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর ঢাকায় বায়ুদূষণে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট বিশেষজ্ঞ কনসালট্যান্ট ডা. মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বিশুদ্ধ অক্সিজেনের অভাবে মানুষ পালমোনারি হাইপারটেনশন, তীব্র শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, সিওপিডি ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। তবে প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্বাসকষ্টের রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় জানতে চাইলে ডা. রিয়াজ বলেন, প্রথমত আমাদের ঘনবসতি এলাকাগুলোকে পরিকল্পনা মাফিক আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি ঢাকা শহরের ভেতরের কলকারখানাগুলোকে পরিবেশবান্ধবভাবে গড়ে তোলা। বেশি বেশি সবুজায়ন কর্মসূচি করতে হবে। কঠোর আইন প্রয়োগ করে কালো ধোঁয়া থেকে রাজধানীকে মুক্ত করতে হবে। তাহলেই আমরা বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাব। নগরের বাসিন্দারাও রোগমুক্ত থাকবে। মহাখালী জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. এটিএম কামরুল হাসান বলেন, দূষিত বায়ু গ্রহণের ফলে ফুসফুস ক্যান্সার, প্রসাবের থলির ক্যান্সারসহ অনেক ক্যান্সার বাতাসে মিশ্রিত কার্সিনোজেন লেড, ক্রমিয়াম হয়ে থাকে। এই রোগগুলো থেকে মুক্তি পেতে রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি এই তিন পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে মাস্ক ব্যবহার করা, ধূমপান পরিহার, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে বনায়ন কর্মসূচি পালন এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দূষণের বিরোধী কর্মসূচির উদ্যোগ নিলে অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। বিশুদ্ধ অক্সিজেন সংকট থেকে উত্তরণে উপায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি দূষিত অক্সিজেন থেকে রক্ষা

প্রাথমিকের ৬৫ হাজার প্রধান শিক্ষককে দশম গ্রেডে উন্নীত করতে আইনি নোটিশ

প্রাথমিকের ৬৫ হাজার প্রধান শিক্ষককে দশম গ্রেডে উন্নীত করতে আইনি নোটিশ দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করতে সরকারের পাঁচ সচিব বরাবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্ল্যাহ মিয়া রেজিস্ট্রি ডাকযোগে গতকাল আইনসচিব, জন প্রশাসনসচিব, শিক্ষাসচিব, অর্থসচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব বরাবর এ নোটিশ পাঠান। সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের পদের সংখ্যা প্রায় ৬৫। নোটিশে প্রধান শিক্ষকদের বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তা না হলে বিষয়টি আদালতের নোটিশে আনা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড ও দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা কার্যকর করা হয়নি। পরে ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিট নিষ্পত্তি করে ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০তম গ্রেড ও দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আপিল খারিজ হলে পরে রিভিউ করা হয়। এ বছরের ১৩ মার্চ সেটিও খারিজ হয়। এরপর ৪৫ জন প্রধান শিক্ষককে গত ৭ জুলাই ১০ম গ্রেড ও দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অথচ এর সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। সবাই মামলা না করলেও বাকি প্রধান শিক্ষকদেরও রায় অনুযায়ী সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের তা না দেওয়ায় লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি। আশা করি, এই নোটিশ পাওয়ার পর তাদের ১০তম গ্রেড ও দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দিতে উদ্যোগ নেবে সরকার।

২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলায় খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু

২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলায় খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষের আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে। আজ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। আসামি পক্ষে রয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১ ডিসেম্বর ওই রায় দেন। ১৯ ডিসেম্বর রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। গত ১ জুন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাটি চালানো হয়। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। তদন্ত শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১১ জুন দেওয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা হয় ৫২। মোট ৫২ আসামির মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুফতি হান্নান এবং তার সহযোগী শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড অন্য মামলায় কার্যকর হয়। তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলার আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ জনে। এ ঘটনার মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দেওয়া বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন- লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম (কারাগারে মারা যান), কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জ্বল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (কারাগারে মারা যান), হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ। পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ (কারাগারে মারা যান), মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু। তাদের দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগনে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত। পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর মামলার বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে। পাশাপাশি কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন। গত বছরের ৩১ অক্টোবর আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শুরু হয়। এরপর গত ১ ডিসেম্বর দুটি মামলায় রায় দেন হাইকোর্ট।