ঘূর্ণিঝড় ফিনজালের তাণ্ডবে নিহত ১৮

ঘূর্ণিঝড় ফিনজালের তাণ্ডবে নিহত ১৮ ঘূর্ণিঝড় ফিনজালের প্রভাবে শ্রীলংকায় ১৫ জন, ভারতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে । এর প্রভাবে তামিলনাড়ু ও পুদুচেরীতে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে চেন্নাইয়ে ট্রেন চলাচল ও ফ্লাইট ওঠানামা ব্যাহত হয়। বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিমানবন্দর। ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার ৩০ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ফিনজাল স্থলভাগে আঘাত হানে। এরইমধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)। এরইমধ্যে তামিলনাড়ু র‍াজ্যটির স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বহু মানুষকে। রোববার ভোর ৪টা পর্যন্ত চেন্নাই বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট স্থগিত ছিল। তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ের কোথাও কোথাও বন্যা দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, শনিবার চেন্নাইয়ে বৃষ্টি সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনায় বিদ্যুতায়িত হয়ে কমপক্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ফিনজালের প্রভাবে শ্রীলঙ্কায় ১৫ জনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলেই মারা গেছে ১০ জন। ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।

রিভিউ শুনানি ১৯ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে

রিভিউ শুনানি ১৯ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা পৃথক তিন রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। রোববার ১ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির আপিল বিভাগ এ দিন ধার্য করেন। আদালতে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এর আগে সকালে বিএনপির পক্ষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ১ মাস সময় আবেদন করেন। এ সময় জামায়াতও এ বিষয়ে আবেদন করেন আদালতে।তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে তিনটি পৃথক রিভিউ আবেদন দায়ের করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। গত ২৩ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রিভিউ আবেদন দায়ের করে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে রিভিউ আবেদন দায়ের করেছেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এর আগে গত ১৬ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদিকে গত আগস্ট মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার পৃথক রিভিউ আবেদন দায়ের করেন। ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে পরবর্তী দশম ও একাদশতম নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আদালত। রায়ে বলা হয়েছিল এক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে সংসদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। প্রসঙ্গত, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম. সলিম উল্লাহসহ তিন জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ওই বছরের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০০৫ সালে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রিটকারীরা। আদালত এ মামলায় আট জন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ করে তাদের মতামত শোনেন। এদের মধ্যে পাঁচ জন সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। তারা হলেন- ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। অপর অ্যামিকাস কিউরি ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে মত দেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ড. এম জহির তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের পক্ষে মত দিয়ে তাদের প্রস্তাব আদালতে তুলে ধরেন। এছাড়া তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দেন।

পলি-প্লাস্টিকে দেশের নদীগুলোর মরণদশা

পলি-প্লাস্টিকে দেশের নদীগুলোর মরণদশা পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যে বাংলাদেশের অন্যতম দূষিত নদীতে পরিণত হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী ও সুরমা নদী। বর্তমানে এই নদীগুলোর মরণদশা। অন্যদিকে পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদী দিয়ে প্রতিদিন ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে মিশছে। এ কারণে সমুদ্রের তলদেশে যে হারে বাড়ছে পলিথিন-প্লাস্টিকের স্তর, তাতে আগামী ৫০ বছর পর সমুদ্রে মাছের চেয়ে পলিথিনের পরিমাণ বেশি হবে। পলি-প্লাস্টিকে নদীর মরণদশাজাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচি (ইউএনইপি) তাদের বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদী দিয়ে প্রতিদিন ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে মিশছে। এছাড়া ভারত, নেপাল ও চীনের বর্জ্য গঙ্গা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের মাধ্যমে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের অবাধ ব্যবহার নানা মাত্রায় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণের কারণে আমাদের বাস্তুতন্ত্র ও ভূমিতে ব্যাপক দূষণ ঘটায় গাছপালা ও অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহারে বর্ষাকালে নগর-মহানগরে পয়োনিষ্কাশনে ড্রেন, নালা-নর্দমা ভরাট হচ্ছে। প্লাস্টিক ও পলিথিন সাগরের তলদেশে জমে জীববৈচিত্র্য ও সামুদ্রিক জীবের মারাত্মক ক্ষতি করছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে। এই অনুপ্রবেশের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে ফুসফুস, কিডনিজনিত রোগ ও ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি তৈরি করছে। এটি মানবদেহের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পেটের পীড়া, হরমোনের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সারের মতো ভয়ংকর রোগের জন্য দায়ী এই প্লাস্টিকসামগ্রী। অথচ রাজধানীতেই প্রতিদিন ব্যবহার করা হচ্ছে দেড় কোটি পিস পলিথিন। আর পলিথিন উৎপাদনে সারা দেশে প্রায় দেড় হাজার অবৈধ কারখানা রয়েছে। পলিথিনের বাইরে দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহারও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। বছরে রাজধানীতে গড়ে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ২৪ কেজির বেশি। প্লাস্টিক ও পলিথিনের মাত্রাতিরিক্ত এই ব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী ও সাগর। প্লাস্টিক ও পলিথিনের কারণে বর্ষাকালে ভেঙে পড়ে দেশের ড্রেনেজব্যবস্থা। দেশে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার কী পরিমাণ বেড়েছে তার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এবং বিশ্বব্যাংক। ২০০৫ সালে দেশের শহরাঞ্চলে বছরে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল মাত্র তিন কেজি, যেটি ২০২০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৯ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে শুধু রাজধানীতেই একজন মানুষের বছরে প্লাস্টিকের ব্যবহার ছাড়িয়েছে ২৪ কেজি। যদিও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর বিধান অনুসারে দেশে ২০০২ সাল থেকে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বিপণন, পরিবহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে প্লাস্টিক-পলিথিনের বাজার ছাড়িয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশে। সারা দেশে কতসংখ্যক অবৈধ পলিথিন কারখানা রয়েছে সে জরিপ করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির কারখানা রয়েছে প্রায় দেড় হাজার, যার বেশির ভাগ রাজধানীর পুরান ঢাকা ও গাজীপুরকেন্দ্রিক। এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সম্পাদক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, ‘বাংলাদেশে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে মোবাইল কোর্ট নির্ভরতা কমাতে হবে। এ ছাড়া পরিবেশ আইনের সংশোধনের মাধ্যমে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক জরিমানার ক্ষমতা দিতে হবে। তাহলে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে আসবে। আর প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণসংক্রান্ত কার্যকর বিধিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে প্লাস্টিক ও পলিথিনের বিকল্প না থাকায় এর ব্যবহার কমানো যাচ্ছে না। ফলে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটপণ্যের, তন্তুজাতীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক উৎপাদনে প্রণোদনা ও উৎসাহ প্রদানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সহজে বহনযোগ্য পরিবেশবান্ধব পাট, তুলা, উল, শণ, বেত, কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বাজারে এর ব্যবহার কমিয়ে আনতে প্লাস্টিক পণ্যের ওপর কর আরোপ বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহারে পরিবেশদূষণের মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। আর এসবের ব্যবহার প্রতিরোধে কয়েক দশক ধরেই কার্যকর উদ্যোগের অভাব রয়েছে, যার ফলে পরিবেশদূষণ রোধে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম। বৈশ্বিক প্লাস্টিক-পলিথিন দূষণের প্রায় আড়াই শতাংশ সৃষ্টি হচ্ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১০ মিলিয়ন টন পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে। যদিও এসব প্লাস্টিক-পলিথিনের মাত্র ৩৭ শতাংশ রিসাইক্লিং করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমান সরকার যা করছে : অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের ঘোষণা অনুযায়ী, সারা দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সমন্বিত মনিটরিং টিম। এ ছাড়া পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধীন দপ্তর ও সংস্থার কার্যালয়ে ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গত ৫ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে সব সচিব, সিনিয়র সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই নির্দেশ দেয়। চিঠিতে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গত ২৯ আগস্টের এক চিঠির সূত্র উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে গত ৩ নভেম্বর থেকে অভিযান পরিচালনা করছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত কমিটি। এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ুু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এসংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পলিথিন শপিং ব্যাগের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর। এজাতীয় ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে সবাইকে সরকারের নির্দেশনা মানতে হবে, না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধে গত ৩ নভেম্বর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১৬৬টি অভিযান চালানো হয়েছে। এতে ৩৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই সময়ে ৪০ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধেও কাজ চলছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, বিকল্প সরবরাহ এবং নিয়ম বাস্তবায়নে একসঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

৪৬০ থানা সংকটে

৪৬০ থানা সংকটে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে না পুলিশ। নানা সংকটে জর্জরিত পুলিশ। গত ৫ আগস্টের আগে ও পরে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা এবং অবকাঠামোয় হামলার ক্ষত এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। বিপরীতে এর মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। মাঝেমধ্যেই ঘটছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। বেড়েছে চুরি-ডাকাতি ছিনতাইসহ বহুমাত্রিক অপরাধ। এখনো অনিরাপদ সড়ক-মহাসড়ক, শহর-জনপদ। যৌথ বাহিনীর সহায়তা ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনো শতভাগ ভূমিকা রাখতে পারছেন না পুলিশ সদস্যরা। স্বাভাবিক হয়নি এখনো পুলিশের দাপ্তরিক কার্যক্রম। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, গত জুলাই-আগস্টে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থানাসহ নানা স্থাপনায় ব্যাপক লুটপাট হয়। অস্ত্র-গুলি, মামলার নথিসহ কোটি কোটি টাকার মালামালের হদিস এখনো মেলেনি। সহিংস হামলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ১২০টি থানায়। এর মধ্যে ৫৮টি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুরের শিকার হয়েছে ৬২টি থানা। ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১৪টি। ১ হাজার ৭৪টি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলা থেকে রেহাই পায়নি পুলিশ সদর দপ্তরও। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকার বেশি। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উচিত হবে স্থানীয় পর্যায়ে দায়িত্বরত ফোর্সকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলে গিয়ে সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিদের সহায়তা নেওয়া। প্রয়োজনে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সহায়তা নিতে পারেন তারা। ওই সময় প্রয়োজনে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে রাখা যেতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার বিকল্প নেই। নয়তো সমাজে স্থিতিশীলতা আসবে না।পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেছেন, পুলিশের সবকিছু ভেঙে পড়েছে। পুলিশে মিলিটারাইজেশনের ফলে কী ক্ষতি হয়েছে, সেটা সবাই দেখছেন। এখন পুলিশে মিলিটারি ব্রেন ঢুকে পড়েছে। এ জন্য পুলিশে সংস্কার জরুরি। পলিটিক্যাল ভিশন না থাকলে কোনো সংস্কারই কার্যকর হবে না। তা ছাড়া জনগণকে সম্পৃক্ত করে পুলিশিং করলে বড়সংখ্যক পুলিশের প্রয়োজন হবে না। তবে নবনিযুক্ত আইজিপি বাহারুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি আমার কাজ শুরু করেছি। যদিও এটি একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবু শিগগিরই একটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাবেন। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট পূর্বাপর ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার হামলায় ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। যদিও এই সংখ্যা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছেন। এ ছাড়া হামলায় পুলিশের অনেক সদস্য আহত হন। যাঁদের মধ্যে ৫০৭ জন রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর লুট হওয়া অস্ত্রের বেশির ভাগ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। এ কারণে কাজ করতে খুব সমস্যা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে ৬৩৯টি থানার মধ্যে বেশির ভাগ থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আওতায় ৫০টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৫ ও ৬ আগস্ট ২১টি থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে আগুনে পুড়ে যায় ১৩টি থানা। লুট করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এর মধ্যে কিছু উদ্ধার হয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মব কন্ট্রোলে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছেন না পুলিশ সদস্যরা। আগাম সংবাদ পাওয়ার পরও অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে সক্ষম হচ্ছে না, এমন অভিযোগ উঠছে প্রায়ই। এর মধ্যে গত বুধবার হবিগঞ্জের আজমীরিগঞ্জের নোয়াগড় গ্রামে টানা দেড় ঘণ্টা দুই পক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ সদস্যরা ভয়ে প্রবেশ করতে পারেননি। আগে থেকেই বিষয়টি জেলা পুলিশ অবহিত হলেও সেই সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। সবশেষ যৌথ বাহিনীর সহায়তায় দেড় ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও সেই গ্রামে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। ডিএমপির ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলো হলো, উত্তরা পূর্ব থানা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, আদাবর, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, পল্টন, শেরেবাংলা নগর, শ্যামপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ভাটারা, ওয়ারী ও খিলক্ষেত। অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি এসব থানায় চালানো হয় ব্যাপক লুটপাট। সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত এসব থানার নিয়মিত কার্যক্রম (নাগরিক সেবা) পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। কোনোরকম চেয়ার-টেবিল পেতে প্রতিদিনের কাজ চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এই বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আবারও স্বাভাবিক কর্মকান্ডে ফেরার চেষ্টা করছে পুলিশ। ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৫ ও ৬ আগস্ট ডিএমপির ২১টি থানায় হামলা এবং ১৩টি থানায় অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি লুট করা হয়েছে অস্ত্র। এসব থানার মামলার নথিপত্র, পোশাক, গাড়ি ধ্বংসের পাশপাশি হাঁড়ি-পাতিল পর্যন্ত লুট করা হয়েছে। এর মধ্যে চার মাস পার হতে চললেও এখনো এসব থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক করা যায়নি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে যাত্রাবাড়ী, উত্তরা পূর্ব থানা, ভাটারা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডা, শ্যামপুর, খিলগাঁও, আদাবর, পল্টন, শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ওয়ারী ও খিলক্ষেত থানার। অন্য থানাগুলোরও যে ক্ষতি হয়েছে তা-ও এখনো পূরণ করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো এসব থানায় স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরেনি। তবে থানাগুলোতে মেরামতকাজ চলছে। আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর চেষ্টা চলছে। অবসরে যাওয়া সাবেক ডিআইজি শেখ সাজ্জাত আলীকে চুক্তিভিত্তিক ডিএমপি কমিশনার করে অন্তবর্তী সরকার ডিএমপির সদস্যদের মনোবল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করে তাদের সহায়তা চেয়েছেন। রাজধানীতে ৫০ বছর ধরে চলা চাঁদাবাজি বন্ধে নিজের প্রত্যয়ের কথাও বলেছেন সম্প্রতি একটি বৈঠকে। একই সঙ্গে পুলিশকে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। জানা গেছে, মিরপুর, বাড্ডা, আদাবর, ওয়ারী এবং শ্যামপুর ও শেরেবাংলা নগর থানার মামলার আলামত পুড়ে গেছে। হামলায় ক্ষতি হওয়া ভাটারা থানা সংস্কার করে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। ভাটারা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, আদাবর, পল্টন ও ওয়ারী থানায় ১ হাজার ২২৬টি মামলার নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার তালিকা করা হয়েছে। বাকি থানাগুলোতে কী পরিমাণে মামলার নথিপত্র পুড়ে গেছে তার তালিকা এখনো তৈরি করা হয়নি। ভাটারা, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, খিলক্ষেত ও খিলগাঁও থানার ওসিরা জানিয়েছেন, এই থানাগুলোতে লুট হওয়া, পুড়ে যাওয়া কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত মামলার নথিপত্রের হিসাব করা হচ্ছে। আতঙ্ক কাটিয়ে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন। সরেজমিন রাজধানীর আদাবর থানায় দেখা গেছে, ওই থানার চারটি গাড়ি, ২০টি মোটরসাইকেল, ৩০টি ল্যাপটপ ও কম্পিউটার, ৫টি এসি, টিভি, কক্ষের দরজা, ফ্যান, ফ্লোরের কার্পেটসহ অন্যান্য আসবাবে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগের ফলে ভবনের অবকাঠামো ঝলসে গেছে। ওই ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন এখনো বর্তমান থানার ভিতরে-বাইরে। গতকাল দুপুরে সরেজমিন এমন চিত্র দেখা যায়। মিরপুর মডেল থানার পুলিশ জানিয়েছে, থানায় ৬৬০টি মামলার নথিপত্র এবং মালখানায় থাকা বিভিন্ন মামলার ২৩০টি আলামত পুড়ে গেছে। থানা ভবনে থাকা নিবন্ধন (রেজিস্টার) খাতাও পুড়ে গেছে। বিভিন্ন মামলার কেস ডকেট বা সিডি (সব নথিপত্র) পুড়ে গেছে। আগুনে মোহাম্মদপুর থানার ৮৯টি মামলার নথি পুড়ে গেছে। তবে কতগুলো মামলার আলামত ছিল, তা জানাতে পারেনি পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানার ওসি ইফতেখার আহমেদ বলেন, থানার সব নিবন্ধনখাতা পুড়ে যাওয়ায় কতগুলো মামলার আলামত লুট হয়েছে বা পুড়ে গেছে বা ধ্বংস হয়েছে, সেই সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। শেরেবাংলা নগর থানায় মামলার সব নথিপত্র এবং দেড় শর মতো আলামত পুড়ে গেছে। ওয়ারী থানার ৭৪টি মামলার নথি এবং ২১৫টি মামলার আলামত পুড়ে গেছে ও লুট হয়েছে। শ্যামপুর থানায় পুড়ে গেছে বা লুট হয়েছে ২৩৯টি মামলার আলামত। বাড্ডা থানায় পুড়ে গেছে ১৩৭টি মামলার নথি ও ১৬০টি মামলার আলামত।  

 জিকা ভাইরাসের আতঙ্ক

 জিকা ভাইরাসের আতঙ্ক দেশে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে জিকা ভাইরাস। গত তিন মাসে আটজন জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও পাঁচজন জিকা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যেই নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে জিকা ভাইরাস নিয়ে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, জিকা ভাইরাস সংক্রমণ ১৯৪৭ সালে প্রথম উগান্ডার জিকা নামক বনাঞ্চলের বানরের মধ্যে শনাক্ত হয়। ১৯৫২ সালে উগান্ডা ও তানজানিয়ায় মানুষের মধ্যে প্রথম এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো এটি প্রধানত এডিস মশাবাহিত রোগ। পরে ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে এ রোগটি আফ্রিকা ও এশিয়ার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং মাইক্রোনেশিয়ার ইয়াপ দ্বীপে ২০০৭ সালে প্রথম বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ব্রাজিলে ২০১৫ সাল থেকে চলে আসা জিকা প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা চলছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জিকার সঙ্গে শিশুর জন্মগত মাইক্রোসেফালি (ক্ষুদ্রতর মস্তিষ্ক) ও ¯œায়ুর অবশজনিত রোগ (গিলেন-বারি সিনন্ড্রোম)-এর সম্পর্ক ধরা পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলে ঘোষণা করেছে। প্রাথমিকভাবে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবুপিক্টাস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ধরনের মশা সাধারণত দিনের বেলা (ভোর বেলা অথবা সন্ধ্যার সময়) কামড়ায়। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের জন্যও এই মশাই দায়ী। আক্রান্ত পুরুষ রোগীর সঙ্গে অনিরাপদ যৌন সংসর্গ করলে (কনডম ব্যবহার না করলে) পুরুষ থেকে নারীদের মধ্যে এ রোগ ছড়াতে পারে। গর্ভবতী নারী গর্ভের প্রথম তিন মাসের মধ্যে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, গর্ভের সন্তান এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া জিকা ভাইরাস আক্রান্ত রক্তদাতার রক্ত গ্রহণ করলে এবং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার সময় অসাবধানতাবশত এ রোগ ছড়াতে পারে। এ রোগের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে স্বল্প মাত্রার জ্বর অথবা চামড়ায় লালচে দানার মতো ছোপ (র‌্যাশ) এবং এর সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখ লাল হওয়া (চোখের প্রদাহ), মাংসপেশিতে ব্যথা, গিটে গিটে ব্যথার মতো যেকোনো একটি উপসর্গ দেখা দিলে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। জানা যায়, এডিস মশাবাহিত জিকা রোগ বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) সংরক্ষিত রক্তের নমুনা পরীক্ষায় তা জানা যায়। জিকায় আক্রান্ত ওই রোগী ছিলেন চট্টগ্রামের। ২০১৭ সালে আইইডিসিআরের একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের মাধ্যমে বিষয়টি প্রথম জানা যায়। গত বছর পাঁচজন জিকা রোগী শনাক্ত করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল। আইইডিসিআরের গবেষকরা ডেঙ্গু রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষার সময় জিকা ভাইরাস শনাক্ত করেছেন। অন্তত চারজনের নমুনা পরীক্ষায় জিকা শনাক্ত হয়েছে। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, গত দেড়-দুই মাসের নমুনা পরীক্ষায় জিকা শনাক্ত হয়েছে। জিকা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিরা রাজধানীর ধানমন্ডি, শ্যামলী ও বনানীর বাসিন্দা। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে পাওয়া মশার নমুনাতেও জিকা ভাইরাস পাওয়া গেছে। গত আড়াই মাসে আইসিডিডিআরবির সংক্রামক রোগ বিভাগের গবেষকরাও তাদের গবেষণাগারে নমুনা পরীক্ষায় জিকা রোগী শনাক্ত করেছেন। অন্তত চারজনের রক্তের নমুনা পরীক্ষায় জিকা শনাক্ত হয়েছে। আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির গবেষকরা গত তিন মাসে আটজনের জিকায় সংক্রমিত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। ঢাকার বাইরে কী পরিস্থিতি তা জানা নেই। কারণ, ঢাকার বাইরের নমুনা আইসিডিডিআরবি বা আইইডিসিআর পরীক্ষা করেনি। আইইডিসিআর জানিয়েছে, জিকার কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, এর চিকিৎসা উপসর্গভিত্তিক। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। জ্বর ও ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে কাছের সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে বা রোগীকে ভর্তি করাতে হবে।