৬০০ টাকা ম্যাচ ফি নারী ক্রিকেটারদের

353

৭ কোটি ৬০ লাখ থেকে বেড়ে ১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার- আট বছরের চক্রে আইসিসি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেতে যাচ্ছে বিসিবি। দাবি করা হয়, বিপিএল আয়োজন দারুণ সফল। মাঠের ক্রিকেটে সাফল্যের সঙ্গে বাড়ছে স্পন্সরদের জোয়ার। ফুলে ফেঁপে উঠছে বিসিবির কোষাগার। অথচ মেয়েদের ম্যাচ ফি বলবে, দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে বিসিবি!
জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে নারী ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি নির্ধারিত হয়েছে ৬০০ টাকা! আগামী ১৬ মে থেকে আটটি বিভাগীয় দলকে নিয়ে এই টুর্নামেন্ট হবে কক্সবাজারে।
ছেলেদের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ চলছে এখন। কিন্তু মাঠ সঙ্কটের কারণে মেয়েদের প্রিমিয়ার লিগ মাঠে গড়ানো অনিশ্চিত। মাঠ সঙ্কটের এই অজুহাত নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় অনেক। তার পরও এই সময়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত কিছুটা হলেও প্রশংসনীয়। তবে ম্যাচ ফির বিব্রতকর অঙ্ক জল ঢেলে দিয়েছে পুরো ব্যাপারটিতেই।
বিসিবির উইমেন্স উইং চেয়ারম্যান এমএ আউয়াল চৌধুরির কণ্ঠে শুধু নাই আর নাই। এত কম ম্যাচ ফির জন্য এই বিসিবি পরিচালক দায় দিলেন স্পন্সর না পাওয়াকে।
“ছেলেদের ন্যাশনাল টিমের স্পন্সর স্বত্ব থেকে কোটি কোটি টাকা আসছে। কিন্তু মেয়েদের আলাদা স্পন্সর আসছে না। তাই নারী ক্রিকেট দলকেও ছেলেদের চুক্তির সঙ্গে একত্রিত করা হচ্ছে। এটা মেনেও নিতে হচ্ছে। কেননা কেউ এগিয়ে আসছে না। বড় বড় কোম্পানিকে আমরা বলি। কেউ আসে না। এবার আলাদা করে স্পন্সর নেওয়ার প্রস্তাব করেছি। সেটি না হলেও উইমেন্স উইংয়ের জন্য আলাদা করে যেন চুক্তি হয়।”
উইমেন্স উইং চেয়ারম্যান স্পন্সরের অভাবকে দায় দিলেও এটি আসলে গোটা ক্রিকেট বিশ্বেরই বাস্তবতা। সব দেশেই মেয়েদের ক্রিকেটে স্পন্সর অনেক কম বা নেই বললেই চলে। বোর্ডের অন্যান্য সব খাতের আয় থেকে ভর্তুকি দিয়েই মেয়েদের ক্রিকেটকে অনুপ্রাণিত করতে হয়, উৎসাহ দিতে হয়, এগিয়ে নিতে হয়। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মত দেশগুলির বোর্ড এভাবে প্রণোদনা দিয়েই মেয়েদের ক্রিকেটকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে। বিসিবি উল্টো পথে।
ছেলেদের জাতীয় লিগে প্রথম স্তরে ম্যাচ ফি ২৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় স্তরে ২০ হাজার। বিসিএলে ম্যাচ ফি ৫০ হাজার টাকা। মেয়েদের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ যদিও ছেলেদের জাতীয় লিগের মত বড় দৈর্ঘ্যরে ম্যাচ নয়, একদিনের ম্যাচ। তার পরও ৬০০ টাকা লজ্জাজনকই।
ছেলেদের ক্রিকেটে ম্যাচ ফির বাইরেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের মাসিক বেতনও আছে। ১২০ জন দিয়ে শুরু হয়ে এখন প্রথম শ্রেণির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার ৮৫ জন। তিনটি ক্যাটেগরিতে বেতন দেওয়া হয় তাদের। মেয়েদের কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরের ক্রিকেটারদের আর কোনো বেতন নেই। কেন্দ্রীয় চুক্তির অঙ্কটিও খুব ভদ্রস্থ কিছু নয়। তিনটি গ্রেডে দেওয়া হয় ৩০, ২০ ও ১০ হাজার টাকা।
এসব টানাপোড়েনের মধ্যেই ম্যাচ ফির এই অঙ্ক মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে বিসিবির দৃষ্টিভঙ্গি ফুটিয়ে তুলল আরও একবার।