৪ মাসে ঘাটতি সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার

415

বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-অক্টোবর সময়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৩১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের ঘাটতির ১২৪ শতাংশ বেশি। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের (জুলাই-অক্টোবর) তুলনায় ৭৪২৫ শতাংশ বেশি।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশের লেনদেন ভারসাম্যে ৪ কোটি ৪ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল। আর অর্থবছর শেষ হয়েছিল ১৪৮ কোটি ডলারের ঘাটতি নিয়ে। আমদানি বাড়তে থাকায় এ অর্থবছরের বাকি সময়েও ঘাটতির এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত। তবে পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকায় উদ্বিগ্ন হওয়ার খুব বেশি কারণ তিনি দেখছেন না। নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, জ¦ালানি তেল, খাদ্যপণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি বাড়ায় আমদানি খাতে ব্যয় বেড়েছে। সে তুলনায় রপ্তানি আয় খুব একটা বাড়েনি। ফলে অর্থবছরের শুরুতেই লেনদেন ভারসাম্যে এই বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু দিন বিশ্ববাজারে জ¦ালানি তেলের দাম কম থাকায় আমদানি খরচ কম হচ্ছিল। কিন্তু বছর খানেক ধরে তেলের দাম বাড়ায় পরিস্থিতি বদলেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল (প্রায় ১৫৯ লিটার) অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ ডলার। এখন তা ৬০ ডলার ছাঁড়িয়েছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে জ¦ালানি তেল আমদানিতে খরচ বেড়েছে ৪১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর খাদ্যপণ্য (চাল ও গম) আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ২৪০ দশমিক ৫ শতাংশ। পাশাপাশি পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতেও ব্যয় বেড়েছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বেড়েছে যথাক্রমে ২৮ শতাংশ এবং ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে আমদানি ব্যয় যেখানে ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে, সেখানে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এই ঘাটতিতে এখনই বিচলিত হওয়ার কারণ নেই মন্তব্য করে জায়েদ বখত বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বৃদ্ধি মানে দেশে বিনিয়োগ বাড়া, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া। সেটাই হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে যেহেতু প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ আছে, সেহেতু আমদানি ব্যয় মেটাতে তেমন কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করেন না জায়েদ বখত। আমদানি ব্যয় বাড়ায় জুলাই-অক্টোবর সময়ে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭৯ কোটি ১০ লাখ (৫.৮ বিলিয়ন) ডলার; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এই চার মাসে ১ হাজার ৭১৪ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। আর বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে এক হাজার ১৩৫ কোটি ডলার।