৪০০ জনকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ১২০০জনকে শীতবস্ত্র প্রদান পুনাকের

44

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ পিছিয়ে পড়া চারশ মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং ১ হাজার ২শ শীতার্ত মানুষকে কম্বল দিল বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি-পুনাক। নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর কলেজ মাঠে এই দুটি কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আজ সকালে এই সেবা নিতে মির্জাপুর কলেজ মাঠে হাজির হন সেবাগ্রহীতারা। প্রধান অতিথিসহ অন্য অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা এবং ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি পুনাক সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী। নিজস্ব সংগীত ও নৃত্যের ছন্দে অতিথিদের স্বাগত জানান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী পুরুষ ও শিশুরা। মেডিসিন, গাইনি, চক্ষুরোগসহ বিভিন্ন রোগীদের জন্য খোলা হয় আলাদা আলাদা বুথ। সেইসব বুথে ঢাকা থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিকিৎসকগণ চিকিৎসা প্রদান করেন। চিকিৎসা বুথগুলো ঘুরে দেখেন অতিথিরা। পরে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন এবং শীতবস্ত্র বিতরণ করেন পুনাক’র সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন,বাংলাদেশ পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার ছাইদুল হাসান এবং ধন্যাবদ জ্ঞাপন করেন পুনাক’র সাধারণ সম্পাদক নাসিম আমিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পুনাকের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদা নূপুর। ‘মানবতা বোধ, জাগ্রত হোক, বিবেকের তাড়নায়’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি-পুনাক এই শীতবস্ত্র বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা কর্মসূচির আয়োজন করে। পুনাক’র সভানেত্রী ডা. তৈয়বা মুসাররাত জাঁহা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ নারী কল্যাণ সমিতি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলায় আছে। বাংলাদেশের যে অবহেলিত জনগোষ্ঠী আছে তাদের জন্য আমরা কিছু করতে চাই। সে জায়গা থেকে প্রথমে সাঁওতালদের কথা ভাবা হয় যার জন্য আমরা এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসেছি। তিনি বলেন এখানে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে এবং আগামীতে আমরা আরো বিভিন্ন ধরণের কাজ করবো। তিনি আরো বলেন, আপনাদের এখানে আমি উপস্থিত হতে পেরে আনন্দিত। তিনি বলেন, আমরা পুনাককে বাংলাদেশের সংস্কৃতির বাহক হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই। পুনাক ছোট একটি সংগঠন একটি শো-রুমের মাধ্যমে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। এখন আমরা বিভিন্ন সমাজকল্যানমূলক কাজে অংশগ্রহণ করছি। আমরা চাই আগামীতে পুনাক আরো বড় সংগঠনে পরিণত হোক। পুনাক সভানেত্রী আরো বলেন, আমরা আজকে এখানে না আসলে সাঁওতালদের সম্পর্কে জানতে পারতাম না। ইতিহাসে তাদের অনেক অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাঁওতালদের অংশগ্রহণ আপনাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দেয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন একজন আদিবাসী নারী। বাংলাদেশসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে তাদের সংখ্যা ৩ লক্ষেরও বেশি। আমি আশা করি সাঁওতাল সম্প্রদায় পিছিয়ে থাকার মত না। ওদের ইচ্ছা থাকলে ওরা অনেক সামনে এগিয়ে আসতে পারবে। রাজশাহী রেঞ্জের উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক আনিসুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ জনবান্ধব হিসেবে কাজ করছে একসময় জনগণ ও পুলিশের মাঝে যে দূরত্বের কথা আপনারা জানতেন বা বলতেন সেই জায়গা থেকে আমরা অনেকটা বেরিয়ে এসে আপনাদের সাথে কাজ করতে পারছি। আমরা কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এবং সাধারণ জনগণের সাথে আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কাজ করছে পুলিশ। মানবিক গুণবলি সম্পন্ন অফিসার এবং ফোর্সের পরিচয় দিচ্ছেন আমাদের অফিসাররা। গত করোনার সময় কেউ ছিলোনা সেখানে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছিল। তিনি বলেন, এছাড়াও আমারাদের বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির একটি সংগঠন রয়েছে। যারা জনগণের কলাণে কাজ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য আজকে কম্বল বিতরণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা এবং স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুনাক সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের কল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি আমার পুলিশ কর্মকর্তাদের বলে রেখেছি, যে কোনো ঘটনার খবর সাংবাদকিরা জানতে চায়লে সঠিক তথ্যটি দেবার জন্য। তাহলে ভুল তথ্য প্রচারের সম্ভাবনা থেকে যায়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী রেঞ্জের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) ফয়সাল মাহমুদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ ) পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত আবুল কালাম সাহিদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তাদের সহধর্মিণীরা। বিনামূল্যে চিকিৎসা ও শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা পরিবেশন করে প্রয়াস ফোক থিয়েটার ইনস্টিটিউটের শিল্পীবৃন্দ। এছাড়াও ওই এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবারকে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন তৈরি করে দিয়েছে পুনাক। পুনাকের এই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী।