৩৮তম বিসিএস : প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াইয়ের ফল পেলেন গোমস্তাপুরের রহিম

176

প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াইয়ের ফল পেলেন আবদুর রহিম। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান রহিম ৩৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছেন। দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে আজকে এ সফলতার মুখ দেখলেন। দরিদ্র পিতা শরিফুুল ইসলামের প্রেরণা আর নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করে কেবলই এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। এখন তার পরিবারে আনন্দের বন্যা।
আবদুর রহিমের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বসনইল গ্রামে। অর্থকষ্টের মধ্য দিয়েই শিক্ষাজীবন শেষ করতে হয়েছে তাকে। প্রাথমিকের পাঠ গ্রামের স্কুলেই। এরপর রহনপুর এবি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০০৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন রহিম। ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে। ২০১০ সালে এইচএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ-৫ পেয়ে মেধার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। পরবর্তীতে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। সুযোগ পান সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট)। ২০১৬ সালে সেখান থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। এমএসসির জন্য ভর্তি হন বুয়েটে। পাশাপাশি বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
আবদুর রহিমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রহনপুর এবি সরকারি স্কুলে পড়ার সময় সংসারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। সংসারের সচ্ছলতা আনার জন্য সে সময় তাকে বাবার সাথে জমিতে কাজ করতে হয়েছে। অনার্সের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বাবার শেষ সম্বল জমিটুকুও বিক্রি করতে হয়।
তবে মেধাবী আবদুর রহিমের সফলতা দেখতে পেলেন না তার মা। রুয়েটে প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ই ২০১২ সালে মাকে হারান তিনি। এরপর ছোট ভাই ও বোনদের পড়াশোনার দায়িত্ব তার ঘাড়ে এসে পরে। কোচিংয়ে ক্লাস ও টিউশন করে নিজের পাশাপাশি ভাইবোনদের খরচ চালাতেন। ভাইবোনরাও মেধাবী। ছোটভাই ঢাকায় শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ বর্ষে এবং ছোটবোন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষে পড়াশোনা করছেন।
আবদুর রহিম জানান, বাবার ইচ্ছাশক্তি ছিল অদম্য। আর আমারও চেষ্টা ছিল কিছু করার। সে জায়গা থেকে বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে জয় করে অবশেষে লক্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ‘সহকারী প্রকৌশলী’ পদে কর্মরত রয়েছেন বলে জানান তিনি।