২০১৮ বিশ্বকাপ শুরুর আগ পর্যন্ত ২৪০ টি পেনাল্টি কিকে ১৭০টিতে গোল হয়েছে

224

পেনাল্টি শুটআউট প্রথম প্রবর্তন করা হয় ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপে। সেবার বিশ্বকাপ আয়োজন হয়েছিলো আর্জেন্টিনায়। কিন্তু সেবছর কোন পেনাল্টি শুটআউট দরকার হয়নি। তবে প্রবর্তনের পর থেকে বিশ্বকাপ ফুটবলে এ পর্যন্ত ২৬ বার পেনাল্টি শুটআউট হয়েছে। ঠিক কিভাবে পেনাল্টি শট নিলে বল জালে ভরে দেয়া নিশ্চিত? ২০১৮ বিশ্বকাপ শুরুর আগ পর্যন্ত মোট ২৪০ টি পেনাল্টি কিক হয়েছে। যার মধ্যে ১৭০টিতে গোল হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি দশটির মধ্যে সাতটিতে গোল হয়েছে। ফুটবল সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ের উপাত্ত যাচাই করলে দেখা যায় বল নিচের দিকে দিয়ে এবং গোলকিপারের বাঁদিক দিয়ে পাঠানোর কায়দা পেনাল্টি কিক নেয়ার ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয়। গোল পোষ্টের মাঝামাঝি নিচু করে পাঠানো বল সবচাইতে কম সফল হয়েছে। এটিকে সবচাইতে বাজে ধরনের পেনাল্টির তালিকায় ফেলা হয় এবং এর সফলতার হার ৫৮ শতাংশ। তবে কোন খেলোয়াড় যদি মাঝ বরাবর বল পাঠাতেই চান তবে বল উঁচুতে পাঠালে সেটি বেশি সফল হয়। গোল কিপাররা এমন শট ঠেকাতে পারেন না। বলা হয় পেনাল্টি কিকে গোলের উপরের অংশকে বেছে নেয়া নাকি ভাল শট। গ্রুপ পর্বে পানামার বিপক্ষে খেলায় যেমনটা দেখিয়েছেন ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন।

ফুটবল বিষয়ক উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণকারী সংস্থা অপটা’র তথ্য অনুযায়ী উঁচুতে ও গোলের দুই পাশে পাঠানো শটের ৯০ শতাংশই সফল হয়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে টার্গেট মিস করার সম্ভাবনাও থাকে। ১৯৯৪ সালে ইতালির রবার্তো ব্যাজিও যা করেছিলেন। বারের উপর দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বল আর সেই সাথে সেবারের কাপ চলে গিয়েছিলো ব্রাজিলের কাছে। কিন্তু পেনাল্টি শট মিস করা যেমন একটা ব্যাপার তেমনি গোলকিপারের শট প্রতিহত করারও একটা বিষয়তো রয়েছে। এ সংক্রান্ত উপাত্ত বলে বিশ্বকাপের মোট ২৪০ টি পেনাল্টি কিকের ৪৯ টি প্রতিহত করেছেন গোলকিপার। এর মধ্যে সবগুলোই দুই পাশে ঝাঁপিয়ে পরে প্রতিহত করেছেন গোলকিপার। বিশ্বকাপ পেনাল্টির ১২ টি ব্যর্থ হয়েছে বল গোলপোস্ট অথবা ক্রসবারে লেগে। পেনাল্টিতে জার্মান রেকর্ড ভাঙা কি সহজ হবে?

পেনাল্টিতে এখনো পর্যন্ত সবচাইতে ভালো রেকর্ড জার্মানির। তবে জার্মানরা ইতিমধ্যেই ২০১৮ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। সেই ১৯৩৮ সালের পর এই প্রথম জার্মানি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিলো। জার্মানদের হয়ে মাত্র একজন ফুটবলার বিশ্বকাপে পেনাল্টি মিস করেছে। সেটি ছিল ১৯৮২ সালে, পেনাল্টি শুটআউট প্রবর্তনের পরের বিশ্বকাপ। সেমিফাইনালে পশ্চিম জার্মানির সাথে ফ্রান্সের খেলায়। এর পর থেকে জার্মানি চারবার শুটআউটে অংশ নিয়েছে এবং চারবারই সফল হয়েছে। তবে এবার বিশ্বকাপ থেকে আগে বিদায় নেয়ার কারণে জার্মান রেকর্ড আর্জেন্টিনার কাছে চলে যেতে পারে।

আইসল্যান্ডের সাথে খেলায় লিওনেল মেসি একটা পেনাল্টি কিকে ব্যর্থ হলেও তার দল পাঁচবার পেনাল্টি শুটে অংশ নিয়ে চারবারই সফল হয়েছে। আর এখনো পর্যন্ত বিশ্বকাপে সবচাইতে বেশিবার পেনাল্টি শুটআউটে অংশ নিয়েছে আর্জেন্টিনা। ২০০৬ সালে তারা শুটআউটে জার্মানির কাছে পরাজিত হয়েছিলো। পেনাল্টি শুটআউটে সবচাইতে খারাপ রেকর্ড ইংল্যান্ডের। বিশ্বকাপে তারা মোট তিনবার শুটআউটে অংশ নিয়ে তিনবারই পরাজিত হয়েছে।

এর মধ্যে ২০০৬ সালে পর্তুগালের সাথে শুটআউটে দুই দল মাত্র দুটি করে গোল করেছিলো। পর্তুগালের গোলকিপার রিকার্ডো একাই তিনটি গোল প্রতিহত করেছিলেন। তবে একটি শুটআউটে সবচাইতে বেশি গোল প্রতিহত করার ক্ষেত্রে রেকর্ড এটি। তবে সবমিলিয়ে বেশি পেনাল্টি প্রতিহত করার রেকর্ডধারী হলেন আর্জেন্টিনার গয়কোচিয়া এবং জার্মানির শুমাখার। তারা বিশ্বকাপে চারটি করে পেনাল্টি প্রতিহত করেছে। মেক্সিকোরও রয়েছে শুটআউটে খারাপ রেকর্ড। তবে যে দলটি বিশ্বকাপে পেনাল্টি শুটআউটে কখনোই কোন গোলই করতে পারেনি সেটি হল সুইজারল্যান্ড। চাপের মুখে শক্ত স্নায়ু

অনেক সময় পেনাল্টি শুটআউটকে লটারির সাথে তুলনা করা হয়। যেখানে ভাগ্য একটা বড় ব্যাপার। পেনাল্টিতে শুটআউটের এখন যে প্রথা তাতে দলগুলো একটি করে একজন আরেকজনের পরে শট নেয়। প্রথম শটটি কে নেবে তা কয়েন টস করে সিদ্ধান্ত হয়। টসে জেতা দলই সিদ্ধান্ত নেয় কে আগে যাবে। এখানে স্নায়ুর চাপ মোকাবেলার একটা বিষয় চলে আসে। এখনো পর্যন্ত ৬০ শতাংশ বার জয়ী হয়েছে প্রথমে শট নেয়া দল।

লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সের করা এক গবেষণা বলছে পরে শুরু করার ক্ষেত্রে একটা মানসিক চাপ কাজ করে যা পারফরমেন্স প্রভাবিত করে। সেই চাপের সামনে যার স্নায়ু যত শক্ত তার পেনাল্টি শট তত বেশি সফল হবে সেটাই বোধহয় স্বাভাবিক। আর যদি পেনাল্টি শুটআউটে কোন সিদ্ধান্ত না হয় তখন শুরু হয় ‘সাডেন ডেথ’। দুই দল একটি করে শট নেয়। কোন শট মিস করলেই অপর দল জয়ী। তবে এমন ঘটনা বিশ্বকাপের ইতিহাসে ঘটেছে মোটে দুবার। বিশ্বকাপের প্রথম শুটআউট যেবার খেলা হল সেই ১৯৮২ সালে। আর ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে আমেরিকায় কোয়ার্টার ফাইনালে রোমানিয়ার বিপক্ষে সুইডেনের খেলায়।

সূত্র : বিবিসি বাংলা