হরমোনজনিত পিসিওএস সমস্যা নিয়ে যত ভুল ধারণা

109

হরমোনজনিত সমস্যা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস এখন আর কোনো বিরল রোগ নয়। প্রতি ১০ নারীর মধ্যে একজনের ৬-১৪% এই সমস্যা থাকে। পিসিওএস একটি জিনগত ত্রুটি ও পরিবেশগত ত্রুটির সমন্বিত ফল। এটি প্রতিরোধযোগ্য, নিরাময়যোগ্য।

মেয়েদের দেহে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে এর প্রভাবে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বড় হয়ে বের হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি হয় এবং এভাবে একসময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে নিয়মিত ঋতুচক্র বাধাগ্রস্ত হয়। সিস্ট দেখা না গেলেও আপনার এই রোগের নানা উপসর্গ থাকতেই পারে। আবার ডিম্বাশয়ে কোনো সিস্ট থাকা মানেই সেটা পিসিওএস রোগের লক্ষণ নয়। আরো নানা কারণে সিস্ট হতে পারে।

শরীরে অবাঞ্ছিত লোম থাকবে: যেহেতু পিসিওএস থাকলে মেয়েদের শরীরে ছেলেদের হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের ক্ষরণ বেশি হয়, তাই অনেক মেয়ের ঠোঁটের ওপরে, পেটের চারপাশে, থুতনি বা বুকে অত্যধিক লোম থাকতে পারে। তবে সবার একই রকম লক্ষণ থাকে না।

সন্তান ধারণে সমস্যা হবে: যেহেতু এই রোগের মূল সমস্যা ডিম্বাণু উৎপাদন না হওয়া, অনেক নারীকে প্রথমেই ভয় দেখিয়ে দেওয়া হয় যে মা হওয়া যাবে না। কিন্তু পরিস্থিতি একেবারেই তেমন নয়। পিসিওএস থাকা সত্ত্বেও বহু নারী স্বাভাবিক নিয়মেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে থাকেন।

অনিয়মিত ঋতুস্রাব মানেই পিসিওএস: মানসিক চাপ, জরায়ুতে ফাইব্রয়েড, পেলভিকে কোনো রকম প্রদাহ, থাইরয়েডের সমস্যা, খুব বেশি পরিমাণে ডায়েটিং বা এক্সারসাইজ, হরমোনের গোলমাল—অনেক কারণেই মেয়েদের ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে পারে। শুধু পিসিওএসই অনিয়মিত ঋতুস্রাবের একমাত্র কারণ নয়।

পিসিওএস থাকলেই ওজন বাড়বে: বেশির ভাগ মেয়ের ক্ষেত্রে এই রোগ থাকলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এত বেশি থাকে যে ওজন ঝরানো মুশকিল হয়ে পড়ে এবং খুব তাড়াতাড়ি তাদের ওজন বেড়েও যায়। পিসিওএস থাকলে মেয়েদের মধ্যে স্থূলতা দেখা যায় ঠিকই, কিন্তু অনেকের এই রোগ থাকা সত্ত্বেও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। মনে রাখতে হবে, এই রোগের উপসর্গ অনেক এবং প্রত্যেক মেয়ের ক্ষেত্রেই এগুলো আলাদা হতে পারে। তাই আপনার জীবনধারায় কী ধরনের বদল আনলে আপনি উপকৃত হবেন, তা জানতে হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা