স্থানীয় সরকারের চাহিদার ভিত্তিতেই প্রণয়ন করতে হবে উন্নয়ন প্রকল্প

314

স্থানীয় সরকারের চাহিদার ভিত্তিতেই প্রণয়ন করা হবে প্রকল্প। কেন্দ্র থেকে এখন আর কোনো প্রকল্প প্রণয়ন করা হবে না। বরং স্থানীয় চাহিদাকেই গুরুত্ব দেয়া হবে। প্রকল্প তৈরির পর তা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে এবং একনেকে অনুমোদনের পর প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি করে পাঠাতে হবে বলে জানানো হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও তাদের নির্বাচনী এলাকায় অনেক প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিচ্ছেন। ওসব প্রকল্প একনেকেও অনুমোদন করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এসব প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ওসব প্রকল্পের কোন সুফলই জনগণ পাচ্ছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে কোনো এক রাস্তার মাঝখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, অথচ এর সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় সেতুটি জনসাধারণের কোন কাজে আসছে না। বছরের পর বছর ওই সেতুটি সংযোগ সড়কবিহীন অবস্থায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। একসময় অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি বরাদ্দের অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে সেতুর প্রয়োজনই নেই যে এলাকায়, সেই এলাকার স্থানীয় এমপি বা মন্ত্রীরা ব্যক্তিগত আগ্রহে ওই ধরনের প্রকল্পে অনুমোদন নিচ্ছেন। ওসব প্রকল্প সম্পর্কে ওই এমপি বা মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষও কিছু জানেন না। তাছাড়া কোন এলাকায় একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রাস্তার মাঝখানে একটি খালের ওপর সেতু নির্মাণের কোনো প্রকল্প নেই। ফলে নির্মিত রাস্তাটি ব্যবহার হচ্ছে না। আবার কোন এলাকায় সেতু থাকলেও তার ১০০ গজ দূরেই হয়তো আরেকটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং বড় কোন নেতার আগ্রহে ওসব প্রকল্প তৈরি করা হয়। কখনও ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হয়তো এমপি বা স্থানীয় অন্য কোন নেতার।
সূত্র জানায়, আর্থিক সুবিধা পেতেই স্থানীয় সংসদ সদস্য বা নেতারা নিজেদের ইচ্ছেমতো বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প তৈরি করছেন। অথচ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ বা জেলা পরিষদ কর্মকর্তারাও ওসব প্রকল্পের বিষয়ে জানেন না। এমন ধরনের জটিলতা এড়াতেই প্রকল্প তৈরির সময় স্থানীয় চাহিদার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা সম্বলিত প্রকল্প না হলে সেসব প্রকল্প একনেকে উত্থাপন না করারও সিদ্ধান্তও নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক একনেক সভায় বলেছেন, ‘স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে তৈরি না হলে কোন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হবে না। কমিশন দেয়া-নেয়ার উদ্দেশে কোন প্রকল্প নয়। একই সাথে প্রকল্প অনুমোদন হবে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে না বা জনগণের কল্যাণে আসবে না এমন ঘটনা সহ্য করা হবে না।’ জনসাধারণের প্রয়োজনে আসবে এমন প্রকল্প কেউ পাঠালে তা একনেকে অনুমোদন দেয়ার দেবে। প্রধানমন্ত্রী ওই সময় আরো বলেন, ‘অনেক কাজ আছে যা স্থানীয় সরকার ও সিটি কর্পোরেশনের করার কথা। কিন্তু প্রকল্প তৈরি হচ্ছে না। সে কারণে ২০১৫ সালে আমি বলে যাওয়ার পরেও ২০১৭ সালে ওই প্রকল্প তৈরি হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, জটিলতা এড়াতেই স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি, অনুমোদন এবং প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্থানীয় ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি না হলে, অনেক প্রকল্প অপ্রয়োজনীয় হওয়া সত্ত্বেও তা অনুমোদন হচ্ছে। পরে তা জনসাধারণের কাজে আসেনি।