সৌদি জোটের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে কাতার

446

সৌদি জোটের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে কাতার। এজন্য কাতারের পক্ষ থেকে সুইজারল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত আইনি প্রতিষ্ঠান ‘ল্যালিভ’কে নিযুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ খবর নিশ্চিত করেছে। কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, গত শনিবার মানবাধিকার কমিশন ও ল্যালিভের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। কাতারের ওপর জারিকৃত অবরোধ প্রত্যাহারে সৌদি জোটের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে গতকাল রোববার রাতে। তবে গত শনিবার পর্যন্ত কাতারকে নিজ অবস্থানে অনড় থাকতে দেখা গেছে। অগ্রহণযোগ্য শর্ত না মানার ইঙ্গিত দিয়ে কাতার জানিয়েছে, কেবল শর্তহীন আলোচনায় রাজি আছে তারা। তবে শর্ত পূরণ না হলে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগাম হুমকি দিয়ে রেখেছিল সৌদি জোট। সময়সীমা শেষে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য রয়েছে উদ্বেগে। আল-জাজিরা জানিয়েছে, সৌদি অবরোধকে আইনগত পরিসর থেকে মোকাবেলা করতে কাতারের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে ল্যালিভকে নিয়োগ করা হয়েছে। ৫ জুন সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসরসহ ৬ দেশ। এরপর সম্পর্ক পুনর্গঠনে কাতারকে ১৩টি শর্ত দেয় ৪ দেশ। জবাব দেওয়ার জন্য বেধে দেওয়া হয় ১০ দিনের সময়। শর্তে কাতারকে দেশটির সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক হ্রাস ও তুরস্কের একটি সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করতে বলা হয়। এ ছাড়া মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন, কথিত সন্ত্রাসী হসন্তান্তর, সৌদি জোটের প্রতি আনুগত্য এবং আইএস–আলকায়েদা আর হিজবুল্লাহর মতো সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলা হয়েছে কাতারকে। সৌদি জোটের নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন প্রায় আড়াই হাজার দেশি-বিদেশি ব্যক্তি,পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমান নিরুপণ করছে ল্যালিভ। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের পর এ বিষয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছে ওই আইনি প্রতিষ্ঠান। ল্যালিভের আইনজীবী ভিজো হিসকেনান বলেন, ‘সৌদি জোটের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বৈধ নয়। আর কোন রাজনৈতিক অভিযোগের কারণে নাগরিক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উপর অবরোধ করা যায় না।’ শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানালেও আরব প্রতিবেশীদের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভ নিরসনে বৈঠকে বসে আলোচনার জন্য দোহা প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “নীতিগত অবস্থান থেকে কাতার সৌদি জোটের শর্ত প্রত্যাখ্যান করছে। তারপরও আমরা সংলাপে বসতে রাজি আছি। তবে সংলাপের জন্য উপযুক্ত শর্ত প্রস্তুত করতে হবে।” তবে আলোচনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা মানতে নারাজ কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, একটি সার্বভৈাম রাষ্ট্রের জন্য কোনও সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার অধিকার কারও নেই। অবশ্য আলোচনার মাধ্যমে এসব দাবির কোনো মীমাংসা করা যাবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে ওই আরব দেশগুলো। রাশিয়ায় নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আভাস দিয়েছেন, এসব দাবি না মানলে কাতারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।