সেপ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প প্রস্তাবনা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

326

সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (সেপ) প্রকল্পের উপ-প্রকল্প প্রস্তাবনা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর সহযোগিতায় ও প্রয়ান মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির বাস্তবায়নে আজ বিকেলে জেলা শহরের বেলেপুকুরে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নকীব হোসেন মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলায় আম চাষে বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আমকে শক্তিশালী অর্থনীতিনির্ভর ফলে পরিনত করতে চাষীদের করনীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন আমচাষী ও আলোচকবৃন্দ। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের জামপ্লাজম কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জোহরুল ইসলাম, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষনা কেন্দ্র্যের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির পরিচালক মো. মুখলেসুর রহমান, কনিষ্ঠ সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ তাকিউর রহমান, সহকারী কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মো. ফারুক আহম্মেদ, গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসজাদুর রহমান মান্নু, প্যানেল চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী মো. তাসেম আলী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আমচাষীরা।

আমচাষীরা তাদের বক্তব্যে জানান, আম চাষে প্রতি বছর যেকোন সময় ঝড়ের কারনে বিপুল পরিমানে পরিপক্ক আম ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই ক্ষতিগ্রস্থ আমগুলো নেয়ার মতো ক্রেতা খুজে পাওয়া যায়না। সেই আমগুলো নষ্ট করতে বাধ্য হয় আমচাষীরা। তাই সেইসময়ে ওই আমগুলো যদি জুস, মোরব্বা, জেলি, দই, আচার, আমস্বত্ব, আইসক্রিম আকারে বাজারজাত করা যায়, তাহলে কৃষকরা আমের নায্য মূল্য পাবে এবং অনেকটা লাভবান হতে পারবে। বর্তমানে সবগুলো আমই একসাথে পেকে যাওয়ার কারনে চাষীরা সঠিক মূল্য পায় না। তাই বরোমাসী আম চাষের প্রতি গুরুত্ দিতে হবে। পরিবহনের সময় অনেক আম নষ্ট হয়ে যায়। তাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত উপায়ে পরিবহন করা সম্ভব হলে আম নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। তাছাড়া অন্য জেলার আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে। আপেলের মতো করে আমে স্টিকার ব্যবহার করা গেলে এই জেলার আমের আলাদাভাবে ব্র্যান্ডিং করা সম্ভব হবে।

গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী মো. তাসেম আলী বলেন, বর্তমানে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যের কথঅ বিবেচনা না করে আমে বিভিন্ন নিষিদ্ধ হরমোন অথবা ফরমালিন প্রয়োগ করছে। অতীতের মতো সুস্বাদু আম আর পাওয়া যাচ্ছে না। যার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জেলার আমের অর্থনীতি।

প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির পরিচালক মো. মুখলেসুর রহমান বলেন, দীর্ঘসময় কিভাবে আমকে সংরক্ষন করা যায় এবং তা থেকে আমচাষীরা কিভাবে লাভবান হতে পারে সে বিষয়ে কৃষকদের আরও বেশি সচেতনতা বৃদ্বি করতে হবে। আম চাষে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রান্তিক চাষীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারলে জেলার আমচাষীরা অধিক পরিমানে লাভবান হতে পারবে।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষনা কেন্দ্র্যের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, জেলায় আমের উৎপাদন নিয়ে কোন সমস্যা নেয়। পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি আম উৎপাদন হচ্ছে। তবে আম চাষে গুড এ্যাগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (গ্যাপ) অধিক পরিমানে ব্যবহার করতে হবে। চাষীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পরামর্শ হচ্ছে, আগাম জাতের আম চাষ না করে, নাবী জাতের আম চাষাবাদ করলে ভালো মূল্য পাওয়া যায়। গৌরমতী, বারি-১১, থাই বারোমাসী এইধরনের জাতের আম চাষ করলে ভালো ফলন ও দাম পাওয়া যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের জামপ্লাজম কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জোহরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামেও আমে হরমোন ব্যবহার করা হয়। তবে অব্যশই তারা সেটা প্রয়োজনীয় মাত্রায় ব্যবহার করে। আমাদের দেশে সরকার যেটিকে এখনও নিষিদ্ধ রয়েছে। কারন আমাদের দেশের চাষীরা সেটি প্রয়োগের অনুমতি পেলে চাষীরা ইচ্ছেমতো ব্যবহার করবে।
তিনি আরও বলেন, নষ্ট আমও এদেশে অনেক বেশি দামে বিক্রি হবে। তবে এটির জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার। আর এমন প্রযুক্তির ব্যবহার করলে, যেমন জেলার অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে, তেমনিভাবে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। সর্বোপরি আম চাষে বিল্পব ঘটবে।