সেনসেটিভ বা সংবেদনশীল ত্বকের মেকআপ

115

একেক রকম ত্বকের জন্য একেক ধরনের মেকআপ প্রয়োজন হয়। তৈলাক্ত ত্বকের মেকআপ শুষ্ক ত্বকের জন্য মানানসই হয় না। আবার শুষ্ক ত্বকের মেকআপ স্বাভাবিক ত্বকেও ঠিকঠাক ফুটে ওঠে না। এ জন্য রূপচর্চা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ত্বকের ধরন অনুযায়ী মেকআপ ও প্রয়োজনীয় প্রসাধনসামগ্রী বেছে নেওয়া হয়।

তবে শুষ্ক, স্বাভাবিক ও তৈলাক্ত ত্বকের মেকআপে তেমন কোনো ঝামেলা না থাকলেও সেনসেটিভ বা সংবেদনশীল ত্বকের বিষয়টি আলাদা। এ ধরনের ত্বকে মেকআপ নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে দেখা যায়। বাজারে যেসব মেকআপ প্রসাধনী পাওয়া যায়, সেগুলোর বেশির ভাগই সংবেদনশীল ত্বকের জন্য উপযোগী নয়। এগুলো সংবেদনশীল ত্বকের মেকআপে ব্যবহার করলে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

তবে ইদানীং এমন ত্বকের উপযোগী মেকআপ সামগ্রী নিয়ে এসেছে কিছু ব্র্যান্ড। এগুলো সেনসেটিভ ত্বকের মেকআপে ভালো কাজ করে। হাইপোঅ্যালার্জেনিক নামে পরিচিত এসব মেকআপ তরুণীদের সৌন্দর্য সেবায় ব্যবহার বাড়ছে। নাজুক ত্বকের মেকআপ সাধারণত ত্বক পাতলা হলে বা অল্পতেই ত্বকে চুলকানি, অ্যালার্জি, লালচে ভাব, র্যাশ বা ফুসকুড়ি এবং জ্বালাপোড়া হলে ত্বক সংবেদনশীল ধরা হয়।

এমন ত্বকে সাধারণ প্রসাধনী দিয়ে মেকআপ করলে এজাতীয় লক্ষণগুলো আরো বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। তবে হাইপোঅ্যালার্জেনিক মেকআপে এ সমস্যা কম হয়। এ ধরনের মেকআপ পণ্যগুলোতে সুগন্ধি পরিহার করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি খনিজ বা নিষ্ক্রিয় উপাদানগুলোর প্রাধান্য দেওয়া হয়। ফলে সংবেদনশীল ত্বকের মেকআপে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না।

সংবেদনশীল ত্বকের জ্বালাপোড়া, লালচে ভাবের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেকআপ সামগ্রীতে থাকা রাসায়নিক সুগন্ধিকে দায়ী করা হয়। আবার ত্বকে রোজেশিয়া, সোরিয়াসিস, একজিমা, ব্রণ, র্যাশসহ কোনো চর্মরোগ থাকলেও সুগন্ধিযুক্ত মেকআপ পণ্যের কারণে অল্পেই সমস্যা হতে দেখা যায়। এ জন্য হাইপোঅ্যালার্জেনিক মেকআপ সামগ্রী বেছে নেওয়া উচিত।

সংবেদনশীল ত্বকে মেকআপ নেওয়ার পরও সাবধানে থাকা জরুরি। বৃষ্টিতে ভেজা বা রোদে বেশিক্ষণ থাকা উচিত নয়। এতে মেকআপ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। বৃষ্টির পানি বা রোদে ঘামার কারণে মেকআপ মিশে ত্বকের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

দেশের বাজারে এজাতীয় মেকআপের প্রচলন এখনো খুব কম। তবে বড় পার্লারগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে এই সেবা। এ জন্য মেকআপ পণ্য ক্রয়ের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সংবেদনশীল ত্বকের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে কি না বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এর পরই মেকআপ কেনা উচিত। মাইকা, বিভিন্ন ধরনের প্যারাবেন, বেনজাইল অ্যালকোহল, ফরমালডিহাইড, বেনজোনজাতীয় উপাদান, হোমোসালফেট, এসেনশিয়াল অয়েল, রেটিনল, বিভিন্ন ধরনের এসিডমুক্ত মেকআপ সামগ্রী বেছে নিতে হবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি প্রসাধনী পণ্য ব্যবহার করতে হবে মেকআপ করার সময়। সংবেদনশীল ত্বক তো বটেই, সব ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রেই মেকআপের আগে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এ ছাড়া মেকআপ করার সামগ্রীগুলোও যথাযথ পরিষ্কার হওয়া জরুরি। নইলে এগুলো থেকেও সংক্রমণ হতে পারে সংবেদনশীল ত্বকে।

উন্নত বিশ্বের দেশগুলো সংবেদনশীল ত্বকের জন্য আলাদা ও বিশেষভাবে তৈরি মেকআপ সামগ্রী ব্যবহারে এগিয়ে। বেশ কিছু বিদেশি ব্র্যান্ড; যেমন—ক্লিনিক, কালারসায়েন্স, জেন আয়ারডেল, টার্টে কসমেটিকস, বার্টস বিজ, ফিজিশিয়ানস ফর্মুলা, জর্জিও আরমানি, নিউট্রিজিনা, আলমাই, গ্লো স্কিন বিউটি, মার্সেলের মতো ব্র্যান্ড সংবেদনশীল ত্বকের জন্য আলাদা মেকআপ পণ্য তৈরি করে। এগুলো ডার্মাটোলজিস্ট ও চক্ষু বিশেষজ্ঞরা পরিচালনা করেন।

এত কিছুর পরও সংবেদনশীল ত্বকের মেকআপে আলাদা সাবধানতার কথাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, মেকআপে থাকা যেকোনো একটি উপাদানই সংবেদনশীল ত্বকের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। এ জন্য ব্যবহারের আগে পণ্যটি নিজের ত্বকে একবার পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। গলা বা হাতের উল্টো দিকে পণ্যটির সামান্য অংশ লাগিয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। যদি ওই অংশে কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয়, তবে পণ্যটি আপনার ত্বকের জন্য নিরাপদ। এবার পুরোপুরি মেকআপের জন্য ব্যবহার করা যাবে পরীক্ষা করা পণ্যটি।

শুধু হাইপোঅ্যালার্জেনিক মেকআপ করলেই হবে না। সংবেদনশীল ত্বকের মেকআপ তোলার ক্ষেত্রে আলাদা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি ক্লিনজার এমন ত্বকের জন্য বেশি উপকারী। স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। গরম বা ঠাণ্ডা পানিতেও প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এরপর সুগন্ধিমুক্ত ও অ্যালকোহলবিহীন টোনার ব্যবহার করতে হবে। এরপর ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে হালকাজাতীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।