সু চির কাছে রোহিঙ্গাদের কথা জানতে চাইলেন ট্রুডো

255

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির সঙ্গে ৪৫ মিনিটের বৈঠক করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। জাতিগত নিধনের শিকার পৃথিবীর সবথেকে ওই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর খোঁজ-খবর নিতে ভিয়েতনামে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অনুষ্ঠিতব্য অ্যাপেক সম্মেলনে অংশ নিতে সেখানে অবস্থান করছেন দুই নেতা। বিভিন্ন কানাডীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বৈঠকে রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রশ্নে সু চির অবস্থান জানতে চেয়েছেন ট্রুডো। নিপীড়ন বন্ধ না হওয়ার কারণও জানতে চেয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে সংকট উত্তোরণের পথ নিয়েও কথা বলেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী।
কানাডার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাখাইনে সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সৃষ্টি হওয়া মানবিক সংকটের সম্ভাব্য সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে ৪৫ মিনিটের এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। মিয়ানমারে ট্রুডোর বিশেষ দূত বব রে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিজেও এর আগে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের দৃশ্য দেখে গেছেন এবং ট্রুডোকে সেসব বিষয়ে অবহিত করেছেন।
ট্রুডোর বিশেষ দূত বব রে জানান: রোহিঙ্গাদের উপর চলমান নিপীড়ন বন্ধ এবং তারা নিজ দেশ থেকে যেসব কারণে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো দ্বিধাহীনভাবে সু চির সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ” আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে সরাসরি এসব কথা শোনা অত্যন্ত জরুরি ছিল সু চির জন্য। আমি আরও মনে করি যে, এ বিষয়ে তার (সু চির) বক্তব্য শুনতে পাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। সু চি মনে করছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আমার বিবেবচনায় এই চেষ্টা আরও করতে হবে এবং আরও করা যেত বলাটাই সমীচীন।”
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সভায় প্রস্তাব উঠানো হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন: শুধু কানাডাই এমনটা অনুভব করছে তা নয়, এসব প্রশ্ন উত্থাপনের ক্ষেত্রে আমরা সংখ্যালঘু নই।
নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে ইতোমধ্যে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। কক্সবাজারের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের উপর চলমান নিপীড়নকে ‘টেক্সট বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার মতো গণহত্যার দৃষ্টান্ত’ বলে উল্লেখ করা হয়। তবে মিয়ানমার সরকার সংকটের সমাধান না করে নানাভাবে রোহিঙ্গাদের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কার্যত নীরব থাকায় সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা থেকে নোবেল বিজয়ী সু চির সমালোচনা হচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বরে সু চির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তখনও তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন ট্রুডো। সেসময় রাখাইনে বিশেষ দৃষ্টি দিতে সু চিকে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। ফোনে কথা বলার পর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী। ওই চিঠিতে তিনি বলেছিলেন: অবিলম্বে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সন্ত্রাস বন্ধ করে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনুন।