সুরিবানশির রশ্মিতে পুড়ে ছাড়কার গুজরাট
অবশেষে জয়পুরে রঙ ছড়াল রাজস্থান রয়্যালস। আরো সুক্ষভাবে বললে ১৪ বছরের এক কিশোরের ব্যাট রাঙাল রাজস্থানকে, একই সাথে সমগ্র ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনকেও। বৈভব সুরিয়াবনশি তার বিষ্ফোরণ ব্যাটিংয়ে ছড়ালেন মুগদ্ধতা ও বিষ্ময়। এই ম্যাচটা হারলেই তার দল রাজস্থানকে ছিটকে পড়তে হতো প্লে’অফের দৌড় থেকে। এমন পরিস্থিতিতে ১৪ বছরের বৈভব গোটা দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। প্রথমে ব্যাটিং করা গুজরাট ছুঁড়ে দিয়েছিল ৪ উইকেটের বিনিময়ে ২০৯ রানের বিশাল চ্যালেঞ্জ। সেই লক্ষ্যকে মামুলি বানিয়ে মাত্র ১৫.৫ ওভারে ৮ উইকেট হাতে রেখেই গন্তব্যে পৌঁছে যায় রাজস্থান। কিশোর সুরিয়াবানশি করেন রেকর্ড গড়া এক শতক এই অসাধ্য হেসেখেই সাধন করেছে স্বাগতিকরা। এবারের মৌসুমে টানা পাঁচ ম্যাচ হারার পর জয়ের মুখ দেখল রাজস্থান। পাশাপাশি আইপিএলের ইতিহাসে ২০০ বা তার বেশি রানের লক্ষ্যে সবচেয়ে কম ওভারে সফলভাবে পৌছাল রাজস্থান। টস জিতে প্রথমে গুজরাটকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় রাজস্থান। দুই ওপেনার সাই সুদর্শন এবং শুভমান ধীরগতিতে শুরু করলেও প্রথম উইকেটে গড়েন ৯৩ রানের জুটি। মাহীশ থিকসানা করে এই জুটি ভাঙেন সুদর্শনকে ৩৯ রানে ফিরিয়ে। তবে রাক প্রান্ত থেকে অধিনায়ক শুভমান ঠিকই আক্রমণ চালিয়ে যান। ৩৩ রানে একটি জীবন পাওয়ার পর তিনি ২৯ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন এবং শেষে সেই থিকসানার দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে ৮৪ রানে সাজঘরে ফেরেন। রাজস্থান এরপর দ্রুত আরো দুটি উইকেট তুলে নেয়। ওয়াশিংটন সুন্দর (১৩) এবং রাহুল তেওটিয়া (৯)। তবে গিল এবং বাটলার (২৬ বলে অর্ধশতক) জুটিতে ততক্ষণে শক্তিশালী ভিত পেয়ে যায় গুজরাট। মাহীশ থিক্ষানা ৪ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে ছিলেন সেরা বোলার। রান তাড়া শুরু থেকেই রাজস্থান আগুনে ঝড় তোলে। সুরিয়াবাংশি এবং যশস্বী জয়সওয়াল মিলে প্রথম উইকেটে ১৬৬ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়েন। তবে সুরিয়াবাংশির অসাধারণ ইনিংসটি আইপিএলের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১৪ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ইশান্ত শর্মার মতো অভিজ্ঞ পেসারের এক ওভারে ২৮ রান তোলেন। এরপর ওয়াশিংটন সুন্দরের প্রথম ওভারে নেন ২১ রান। মাত্র ১৭ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন তিনি, যা এই মৌসুমে সবচেয়ে দ্রুত। এর মাধ্যমে রাজস্থান তাদের পাওয়ার’প্লের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান (৮৭/০) তোলে।
রাশিদ খান দলীয় রান কিছুটা আটকে রাখলেও, সুরিয়াবাংশি ছিলেন সাবলীল। আইপিএলে অভিষিক্ত করিম জানাতের ওভারে তিনটি ছক্কা এবং তিনটি চার মারেন। পরের ওভারেই একটি বিশাল ছক্কা মেরে মাত্র ৩৫ বলে শতরান পূর্ণ করেন। এই ইনিংসে তিনি একাধিক রেকর্ড ভেঙে দেন সুরিয়াবানশি। সবচেয়ে কম বয়সে আইপিএলে শতরান করা ব্যাটসম্যান তিনি। আইপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম শতরান (৩৫ বল) করেন। তারচেয়ে কম বলএ এই কীর্তি গড়েছেন কেবল ‘ইউনিভার্স বস’ ক্রিস গেইলের (৩০ বলে)। অন্যদিকে জয়সওয়াল স্থির থাকেন এবং তার সঙ্গীকে সমর্থন দিয়ে যান। তিনি ৩১ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন এবং আইপিএলে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। যখন মনে হচ্ছিল এই দুই ব্যাটসম্যান ম্যাচ শেষ করে আসবেন, তখন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ একটি দুর্দান্ত ইয়র্কারে সুরিয়াবানশিকে ফেরান। তাঁর ১০১ রানের ইনিংসে ছিল ৭টি চার এবং ১১টি ছয়। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে নীতিশ রানা এসে একটি বাউন্ডারি মারার পর রাশিদ খানের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে হন। এরপর অধিনায়ক রিয়ান পরাগ মাঠে নেমে ১৫ বলে ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচ শেষ করে দেন। জয়সওয়াল অপরাজিত থাকেন ৯ চার ও ২১ ছক্কায় ৪০ বলে ৭০ রানে অপরাজিত থাকেন।
রাজস্থান ২৫ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। গুজরাটের বিপক্ষে এরআগে কেউ এত বড় রান সফলভাবে তাড়া করেনি। আগের রেকর্ডটি ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের, (২০৫ রান)। রাজস্থান ১০ ম্যাচ শেষে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে। গুজরাট টাইটান্স ৯ ম্যাচে ৬ জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।