সিলেটের টানা দুই রোমাঞ্চকর জয়ে

324

ডোয়াইন ব্রাভোর বলটি থার্ডম্যান দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়েই ডাগ আউটের দিকে ছুটলেন নুরুল হাসান সোহান। খ্যাপাটে চিৎকার, লাফ দিয়ে যেন ছুঁতে চাইলেন আকাশ। বাইরে তখন মাঠে ছুটে গেছেন বাকি সতীর্থরা। নুরুলকে ঘিরে চলল বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস। সিলেট সিক্সার্সের আরেকটি জয়। গ্যালারিতে তখন চলছে স্বাগতিক দর্শকদের গর্জন।
আগের দিনের জয় এসেছে অনায়াসে। শেষ ওভারে নুরুলের সৌজন্যে এবারের জয় নাটকীয়, রোমাঞ্চকর। বিপিএলে রোববার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে সিলেট সিক্সার্স। কুমিল্লার ১৪৫ রান নাসির হোসেনের দল টপকে যায় ১ বল বাকি রেখে।
টুর্নামেন্টের নতুন দলটি টানা দুই দিনে ঘরের মাঠে হারাল গত দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন দলকে। উচ্ছ্বাসে ভাসাল ঘরের মাঠের দর্শকদের।
শেষ দিকে যখন বাড়ছে রান বলের টানাপোড়েন, তখন নুরুলের আগে সিলেট ব্যাটিংয়ে পাঠায় লিয়াম প্লাঙ্কেটকে। তাতে ভ্রু কুঁচকে গিয়েছিল অনেকেরই। শেষ পর্যন্ত প্লাঙ্কেট স্ট্রাইক পাওয়ার আগেই গেলেন নুরুল। ৫ বলে দলের প্রয়োজন ১০ রান। প্রথম বলেই ডোয়াইন ব্রাভোকে নুরুলের ছক্কা। পরের দ্ইু বলে দুটি সিঙ্গেল। পঞ্চম বলে বাউন্ডারিতে দলের জয়।
রান তাড়ায় সিলেটকে অর্ধেক পথ এগিয়ে দিয়েছিল উদ্বোধনী জুটিই। আগের দিন ১২৫ রানের জুটির পর এবারও উপুল থারাঙ্গা ও ফ্লেচারের জুটি পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। প্রথম ওভারেই আরাফাত সানিকে দুটি চার মারেন থারাঙ্গা। দ্বিতীয় ওভারে নবিকে চার-ছক্কায় স্বাগত জানান ফ্লেচার।
এরপর রশিদ খান, ব্রাভোদেরও অনায়াসে খেলে এই জুটি অর্ধশত করে ফেলে ৩২ বলেই। শেষ পর্যন্ত নবম ওভারে ভাঙে ৭৩ রানের জুটি। ২৯ বলে ৩৬ করে ব্রাভোর স্লোয়ারে রশিদের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার ফ্লেচার।
থারাঙ্গা করেছেন টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। তবে এদিন থাকতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। তাতে তার দায় সামান্যই। নাসিরের ডাকে সাড়া দিয়ে রান আউট হয়েছেন অতিরিক্ত ফিল্ডার রকিবুলের দুর্দান্ত সরাসরি থ্রোতে। আগের দিন ৬৯ করার পর লঙ্কান ওপেনার এদিন করেছেন ৪০ বলে ৫১।
রশিদ খানের দারুণ বোলিংয়ে এরপর চাপে পড়ে যায় সিলেট। ১৮ রান করলেও নাসির খেলেন ২০ বল। রস হোয়াইটলি তো পড়তেই পারছিলেন না রশিদকে। এরপরও টুকটাক করে এগোতে থাকে সিলেট।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১০ রান। প্রথম বলেই শুভাগতকে বোল্ড করে দিয়েছিলেন ব্রাভো। কিন্তু শেষে ক্যারিবিয়ান এই ক্রিকেটারকে ছাপিয়ে গেলেন নুরুল।
কুমিল্লার ইনিংসে নায়ক ছিলেন মারলন স্যামুয়েলস। দলকে দেড়শ কাছে নিয়ে যান এই ক্যারিবিয়ানই।
এর আগে টসে হেরে ইমরুল ও লিটনের ব্যাটে কুমিল্লার শুরুটা খারাপ হয়নি। আবুল হাসানের স্লোয়ারে বিশাল ছক্কা মারেন লিটন। দুজনের ব্যাটে আসে আরও দুটি করে চার।
তবে দুজনের কেউই টেনে নিতে পারেননি ইনিংস। পঞ্চম ওভারে নাসিরের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে এনেছেন ইমরুল। ভালো খেলতে থাকা লিটনকে (১৯ বলে ২১) স্টাম্পড করে দেন তাইজুল।
তাইজুল পরে ফিরিয়ে দেন পারিশ্রমিকে কুমিল্লার সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার জস বাটলারকে। ২ রানে লেংথ বল আলতো করে লং অফের হাতে তুলে দেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
৮ রানের মধ্যে কুমিল্লা হারায় ৩ উইকেট। চতুর্থ উইকেটে মারলন স্যামুয়েলস ও অলক কাপালি গড়েন ৪২ রানের জুটি। দুই ছক্কায় ১৯ বলে ২৬ রান করা অলক আউট হয়েছেন তৃতীয় ছক্কার চেষ্টায়।
দলকে টেনে নেওয়া আর রান বাড়ানো, দুটিই করতে হয়েছে স্যামুয়েলসকে। ঝড় তুলতে পারেননি অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি। ৪৭ বলে ৬০ করে স্যামুয়েলস ফেরেন শেষ ওভারের প্রথম বলে।
শেষ ওভারে একটি ছক্কা মারলেও ঝড়ো ইনিংস আসেনি ডোয়াইন ব্রাভোর ব্যাট থেকে। কুমিল্লার রানও তাই ছুঁতে পারেনি দেড়শ।
সিলেটের দারুণ উদ্বোধনী জুটির পরও লড়াই জমেছিল দারুণ। শেষ পর্যন্ত শেষ ১০ ওভারের নাটকীয়তার পর শেষের নায়ক নুরুল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৪৫/৬(লিটন ২১, ইমরুল ১২, স্যামুয়েলস ৬০, বাটলার ২, অলক ২৬, নবি ৫, ব্রাভো ১১*, সাইফ উদ্দিন ১*; নাসির ১/১৮, সান্টোকি ২/৩০, আবুল হাসান ০/৪১, প্লাঙ্কেট ১/৩১, তাইজুল ২/২২)।
সিলেট সিক্সার্স: ১৯.৫ ওভারে ১৪৭/৬ (থারাঙ্গা ৫১, ফ্লেচার ৩৬, সাব্বির ৩, নাসির ১৮, হোয়াইটলি ১০, শুভাগত ৭, প্লাঙ্কেট ১*, নুরুল ১১*; সানি ০/৯, নবি ১/২২, আল আমিন ০/২৭, রশিদ ১/১৮, ব্রাভো ০/৩৪, সাইফ ০/৯, স্যামুয়েলস ০/২২)।
ফল: সিলেট সিক্সার্স ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: উপুল থারাঙ্গা