Site icon রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম

সামজে প্রবীণদের গুরুত্ব অনেক বেশি পিকেএসএফ কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন শেখ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রি কলেজে নবীন-প্রবীণ মেলা ও প্রীতি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান-২০১৯ অনুষ্ঠিত হয়েছে।  গত কাল মঙ্গলবার প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া এবং সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রয়াসের ইউনিট-১০, সমৃদ্ধি-১ রানীহাটির আওতায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউÐেশন (পিকেএসএ)’র সহযোগিতায় এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পিকেএসএফ’র ব্যবস্থাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন শেখ। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি এক প্রবীণ ব্যক্তির গল্প তুলে ধরেন। তিনি সে সময়ে ওই প্রবীণ ব্যক্তির সাথে কাটানো মূহুর্তগুলোর কথা বলেন। ওই ব্যক্তি প্রতিদিন অফিস শেষ করে বাসায় ফিরে আসেন। বাসায় আসার পর ফ্রেশ হয়ে আমার সঙ্গে গল্প করতেন। এভাবেই প্রায় প্রতিদিনই আমাকে ডেকে নিয়ে গল্প করতেন। কিন্তু এক পর্যায়ে দেখলাম এটা বন্ধ হচ্ছে না। রাত ৮/১০টা পর্যন্ত অধিকাংশ দিনই গল্প করতেন।  তিনি জিজ্ঞেস করলেন তুমি যখন কাজ করতে করতে বিরক্ত হও তখন কি করো? তখন আমি বললাম বিশ্রাম নেয়। তিনি বললেন, আমি ওই সময় গল্প করি। গল্প করেই আমি ক্লান্তি দূর করি।  পরবর্তীতে আমি তাঁর একথা শুনে এটা বুঝতে সক্ষম হই যে, গল্প করেও ক্লান্তি দূর হয় এবং ওই গল্পের মাধ্যমেও কিছু শিক্ষাগ্রহণ করা যায়।  বিশেষ করে আমরা কখনও বোঝার চেষ্টা করি না যে, প্রবীণদের ক্লান্তি কিভাবে দূর হয়। পৃথিবীর বেশ কিছু দেশের মধ্যে একটা দেশে গিয়ে দেখেছি তারা প্রবীণদের ক্লান্তি কিভাবে দূর করে। আমি দক্ষিণ কোরিয়ায় দেখেছি, তাদের দেশের প্রবীণ ব্যক্তি কখনও সফল হয়েছেন কখনও ব্যর্থও হয়েছেন। বর্তমানে তাদের এ সফলতা-ব্যর্থতার গল্প তারা তরুণদের শোনান। তারা যেন ভবিষ্যতে ব্যর্থ না হন। এক্ষেত্রে প্রবীণদের গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রবীণরাও চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন সফলতার সাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে নিজেকে। তারা তাদের সফলতা-ব্যর্থতার গল্প তুলে ধরে তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করতে চায়। কোরিয়াতে প্রবীণদেরকে সমাবেশে উপস্থিত করে তাদের জীবনের গল্পগুলো শোনা হয়। তাই আমরা আমাদের সমাজের প্রবীণদের কাছ থেকেও অনেক কিছুই শিখতে পারব বলে মনে করেন তিনি।
এরকম একটা আয়োজন করার জন্য প্রয়াসকে এবং প্রয়াসের সকল কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। পিঠা উৎসবে প্রবীণ ও নবীনদের একটা ফুটবল ম্যাচ করার জন্যও ধন্যবাদ দেন। খেলায় প্রবীণরায় জয়লাভ করেন। এক্ষেত্রে যদিও নবীনরা তাঁদেরকে সম্মান করেছেন। সারাদিন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যেসব প্রতিযোগিরা অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকে অভিনন্দন জানান।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, রানীহাটি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ মো. সায়েম আলী তিনি তার বক্ত্যবে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি পিকেএসএফ এর ম্যাধ্যমে যে কাজ করছে সেই কাজের মূল্য যদি আমরা দিতে যাই তাহলে তা দেওয়া সম্ভব নয়। তার বেশকিছু ভিক্ষুককে লক্ষাধিক টাকা দিয়ে ভিক্ষা বৃত্তি থেকে পুনর্বাসন করছে। অনেক অসহায় মানুষকে গরু দান করেছে, অনেককে রিকশা, সেলাই মেশিনসহ বিভিন্ন উপকরণ কিনে দিয়েছে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছে। তারা আমাদের জন্য যে কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করেছে তার জন্য আমরা চির কৃতজ্ঞ প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির কাছে। এছাড়াও সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় আমাদের এলাকার ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষা দান করছে। তারা যে কাজগুলো করছে তার জন্য তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে।
প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান তিনি বলেন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া আয়োজন করার জন্য প্রয়াসের সকল কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন বিশেষ করে আজকের এই প্রবীণ-নবীনদের নিয়ে যে ফুটবল খেলা উপভোগ করেছি। এগুলো খেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে মাদকমুক্ত সমাজ ও জঙ্গিবাদ নিরশনে কাজ করতে পারি। আমরা এই ধরণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। আমি আশা করব আমরা যা করছি সমাজের বিত্তবান যারা আছে তারাও যেন এই ধরণের অনুষ্ঠান করতে পারেন। এই ধরণের কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে আমরা যেন সমাজকে সুস্থ্য জাতি হিসেবে গঠন করতে পারি সেজন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সেই আশা রাখছি।
কনিষ্ঠ সহকারী পরিচালক মু. তাকিউর রহমান প্রয়াসের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন ১৯৯৩ সালে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে অদ্যাবধি জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য রানীহাটি ইউনিয়নে ৪০ টি স্কুল রয়েছে। সেখানে আমাদের ৪০জন শিক্ষকা রয়েছেন প্রত্যেকটি গ্রামে রয়েছে একজন করে স্বাস্থ্য পরিদর্শক।
এছাড়াও যুব কমিটি রয়েছে যারা এই গ্রামের যেকোন বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে। আমরা আশা করছি আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন।
প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির রানীহাটি ইউনিয়ন সভাপিত আলহাজ্ব মো. আনোয়ারুল হকসহ প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির সমৃদ্ধি কর্মসূচির কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কর্মসূচির আওতায় সকাল থেকে বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য ৫০ মিটার দৌড়, গণিত প্রতিযোগিতা, মোরগ লড়াই, দড়ি লাফ, বালিশ খেলা, চেয়ার খেলা, চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান, বল নিক্ষেপ প্রবীণ-যুব ও নারীদের রশি টানাটানি। এছাড়াও প্রবীণ ও নবীনদের নিয়ে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়। ফুটবল খেলায় নবীনদের ৩-১ গোলে পরাজিত করেন প্রবীণরা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও যে তারা রাঙ্গিয়ে দিতে পারেন সেটা তাদের এই প্রীতি ফুটবল ম্যাচের মাধ্যমেই দেখা যায়। আলোচনা সভা শেষে বার্ষিক ক্রাড়া প্রতিযোগিতা ও প্রীত ফুটবাল ম্যাচের বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিলেন দৈনিক গৌড় বাংলা ও রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফ.এম।

Exit mobile version