সাকিবও টেস্টে মাশরাফিকে চান

217

তাঁর ইচ্ছে আছে আবার টেস্ট খেলার। সেই সামর্থ্যও নিজের আছে বলে বিশ্বাস করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু কখন আবার সাদা পোশাক ও লাল বলের ক্রিকেটে নেমে পড়তে চান বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক? তাঁর কাছ থেকে অন্তত এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর মিলছে না। টানা ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলে যথার্থ প্রস্তুতি নিয়ে তবেই টেস্ট খেলার কথা ভাবতে চান ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।
যদিও খেলোয়াড়মহলে তাঁকে টেস্টে ফেরানোর ভাবনা শুরু হয়ে গেছে আরো অন্তত দুই মাস আগে থেকেই। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁর যা পারফরম্যান্স, তাতে অনেকেই মনে করেন টেস্টে ফিরলেও খারাপ করবেন না তিনি। সেই অনেকের অন্যতম বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। এই অলরাউন্ডারের মাশরাফিকে টেস্টে ফেরাতে চাওয়ার ভাবনার জানান গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ। বাংলাদেশ দলের সাবেক এ অধিনায়ক নিজেও মাশরাফিকে সব ফরম্যাটেই দেখতে চান।
তিনি জানালেন সাকিবের সঙ্গে এক আড্ডাতেই উঠেছিল মাশরাফিকে টেস্টে ফেরানোর প্রসঙ্গ, ‘‘বিষয়টি ওরকম আনুষ্ঠানিক কিছু নয়। একদিন সাকিবই গল্পচ্ছলে বলছিল যে, ‘সুজন ভাই, মাশরাফি ভাই হলে তো ভালোই হয়। খারাপ হয় না। টেস্ট ম্যাচে নতুন বলে ৫-৬ ওভার বোলিং করবেন। মাঝখানে করবেন আরেকটি স্পেল। সারা দিনে যদি ১৫-১৬ ওভার বোলিং করে দিতে পারেন, আমি তাতেই খুশি। উনি থাকলে খুবই ভালো হয়। টেস্ট ম্যাচের ব্যাটিংটাও একটু পারেন। নতুন বলে ওনার চেয়ে ভালো বোলিং তো কেউ করে না। খুব ভালো জায়গায় বোলিং করেন। টেস্ট ম্যাচের জন্য একেবারে আদর্শ লাইন বলতে যা বোঝায়, তিনি বোলিং করেন সেই লাইনেই।’’
সম্ভবত সামনের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের কথা মাথায় রেখেই সাকিবের মনে উঁকি দিয়েছিল মাশরাফিকে টেস্টে ফেরানোর চিন্তা। যদিও এরপর আর তেমন অগ্রগতি নেই বলেও নিশ্চিত করেছেন মাহমুদ, ‘এই কথা সাকিব কবে বলেছে? দুই-তিন মাস তো হবেই। অবশ্য ওই গল্প হওয়া পর্যন্তই। এরপর আর বিষয়টি এগোয়নি। তা ছাড়া মাশরাফি টেস্ট খেলতে চায় কি না, সেটিও তো একটা বড় ব্যাপার।’ গত মার্চে শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় নিদাহাস টি-টোয়েন্টি ট্রফির আগে তাঁকে সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে ফেরার প্রস্তাব দেওয়া হলেও মাশরাফি সায় দেননি তাতে। যেহেতু গত বছর তাঁকে এই ফরম্যাট থেকে একরকম জোর-জবরদস্তি করেই বিদায় দেওয়া হয়েছিল।চন্দিকা হাতুরাসিংহে-পরবর্তী সময়ে টি-টোয়েন্টিতে মাশরাফির প্রয়োজনটা আবার নতুন করে অনুভূত হতে শুরু করেছে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনও কিছুদিন আগে মন্তব্য করেছিলেন, ‘মাশরাফি যদি টেস্ট খেলতে চায়, তাহলে খেলবে। কিন্তু আমরা চাচ্ছি, ও টি- টোয়েন্টিতে ফিরুক। ওখানেই ওকে আমাদের বেশি দরকার।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসানও ওয়ানডে অধিনায়কের টি-টোয়েন্টি প্রত্যাবর্তন দেখতেই বেশি আগ্রহী, ‘বড় দৈর্ঘ্যরে ক্রিকেটে খেলাটা মাশরাফির নিজের এবং ফিজিওর ওপর নির্ভর করছে। আমাদের ধারণা, সে ওয়ানডে খেলতে পারলে টি-টোয়েন্টিও খেলা উচিত। ১০ ওভার যদি করতে পারে, ৪ ওভারও ওর করতে পারা উচিত।’
অবশ্য মিনহাজুল কিংবা নাজমুলের মতো অবস্থান নয় মাহমুদের। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার মাশরাফিকে চান সব ফরম্যাটেই। তবে শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, তরুণদের ‘মেন্টর’ হিসেবেও। তিনি মনে করেন, তরুণদের অনেক কিছু শেখার আছে মাশরাফির কাছ থেকে, ‘আমি তো মাশরাফিকে চাই। ওকে আমি সবখানেই চাই। ওর দলে থাকা মানেই তরুণদের অনেক কিছু শেখার সুযোগ। ওর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’
কিন্তু মাত্রই এক বছর পর একটি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেই কি টেস্ট ম্যাচের দাবি মেটানো সম্ভব মাশরাফির পক্ষে? মাহমুদের এ নিয়ে সংশয়ই নেই কোনো, ‘তা ছাড়া মাশরাফির ইচ্ছাশক্তি সাংঘাতিক। আমি নিশ্চিত, ও টেস্ট খেললে পারফরমও করবে।’ ওদিকে আবার মাশরাফি যে টানা ফার্স্ট ক্লাস খেলে তবেই টেস্টে ফেরার চিন্তা করতে চান। সে ক্ষেত্রে মাত্রই একটি ঘরোয়া ক্রিকেট মৌসুম শেষ হওয়ার পর লম্বা অপেক্ষায়ও থাকতে হবে তাঁকে সেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। অর্থাৎ আগামি বছরের আগে তাঁর টেস্টে ফেরার সম্ভাবনা সামান্য। মাহমুদ যৌক্তিক কারণেই অত অপেক্ষায় যেতে চান না, ‘মাশরাফির তো বয়সও হচ্ছে। ওকে পরে চেয়ে লাভ কী! চাইলে এখন থেকেই চাওয়া উচিত। ঠিক না? পরে চাওয়ার কী আছে!’ মাহমুদ এখনই চাচ্ছেন। সাকিব চেয়েছেন আরো দুই মাস আগে!