সমৃদ্ধি নিয়ে চীনের আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই : শি

198

নিজেদের সমৃদ্ধি নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গতকাল মঙ্গলবার ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) বার্ষিক অধিবেশনের সমাপ্তিতে তিনি বলেছেন, চীন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে দাঁড়িয়ে আছে, কেবল সমাজতন্ত্রই একে রক্ষা করতে পারবে। পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তৃতায় শি তাইওয়ানের চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রচেষ্টার ব্যাপারেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে খবর বিবিসির। এনপিসির এবারের অধিবেশনেই ‘কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে চীনের রাষ্ট্রপতি থাকতে পারবে’- বিধানটি তুলে দেওয়ায় শি-র আজীবন ক্ষমতায় থাকার পথ খুলে গেছে। অধিবেশন শুরুর দিনই প্রায় তিন হাজারের মতো প্রতিনিধির সম্মতিতে সংবিধানের এ ধারাটি বিলুপ্ত হয়। চীনের এ ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস বছরে একবার বসে; সাধারণত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) শীর্ষ নেতৃত্বের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোই এখানে অনুমোদিত হয়।
গ্রেট হল অব দ্য পিপলে দেওয়া ভাষণে শি চীনকে নিয়ে তার মহাপরিকল্পনার কথা জানান। বলেন চীনের পুনর্যৌবন ও সভ্যতার অগ্রগতিতে অবদান রাখার আকাঙ্খার কথা। সমাজতন্ত্রই যে চীনকে রক্ষা করতে পারে, এটা ইতিহাসে প্রমাণিত এবং এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে, বলেন শি।
চীনের অগ্রগতিতে ‘জনগণই সত্যিকারের নায়ক’ মন্তব্য করে প্রেসিডেন্ট সাধারণ জনগণের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের কঠোর পরিশ্রম করারও আহ্বান জানান। ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে কাগজ ও বারুদের উদ্ভাবন, চীনের প্রাচীর নির্মাণ ও কনফুসিয়াসের দর্শনের মতো বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য অর্জনের কথাও স্মরণ করেন শি। বিশ্ব ব্যবস্থায় চীনের উচ্চাকাঙ্খার স্বরূপ নিয়েও কথা বলেন তিনি। শক্তিশালী হলেও চীন কখনোই আগ্রাসী নীতি নেবে না এবং বিশ্বব্যাপী নিজেদের ভূখ- বিস্তৃতিতে মনোযোগী হবে না বলেও মন্তব্য তার।
চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে তাইওয়ানের যে কোনো প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়া হবে বলেও জানান প্রেসিডেন্ট। চীনের জনগণ একই বিশ্বাস ধারণ করে, যে কারণে এটি কখনোই অনুমোদিত হবে না। আমাদের মহান দেশ চীনের ভূখ- থেকে এক ইঞ্চি ভূমিও বিচ্ছিন্ন হতে দেওয়া হবে না, বলেন তিনি।
স্বায়ত্তশাসিত তাইওয়ানকে চীন নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ বলে দাবি করে আসছে; কোনো একদিন ওই প্রদেশকে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে একত্র করারও স্বপ্ন দেখে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এক আইনে তাইওয়ানে আরও বেশি কর্মকর্তার সফর বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টির কয়েকদিনের মাথায় শি-র এ হুঁশিয়ারি এল। কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক কোনো সম্পর্ক নেই; আন্তর্জাতিক মহল তাইওয়ানকে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করছে, এমন যে কোনো ধরনের পদক্ষেপের তীব্র প্রতিক্রিয়াও জানিয়ে আসছে বেইজিং।
সিপিসির গত কংগ্রেসের পর থেকে শি জিনপিংকে চীনের কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এনপিসির এবারের অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শি-র দ্বিতীয় মেয়াদ এবং সংবিধানে ‘শি জিনপিং মতবাদ’ অন্তর্ভুক্তির অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। সমাপনী অধিবেশনে শি-র বক্তব্যের আগে বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে চীনের স্টেট কাউন্সিলের প্রিমিয়ার লি কেকিয়াং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এনপিসির এ অধিবেশনে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ এবং প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পদে নতুন নিয়োগের পাশাপাশি দুর্নীতি দমনে একটি শক্তিশালী সংস্থা করার আইনও অনুমোদিত হয়। সমালোচকদের ধারণা, এ সংস্থার মাধ্যমে শি দলে তার বিরোধীদের সাইডলাইনে সরিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেলেন।