সমুদ্রে সবচেয়ে জোরে শব্দ করে ছোট্ট এক চিংড়ি !

সমুদ্রে সবচেয়ে জোরে শব্দ করা প্রাণী শুনলে অনেকেই তিমির কথা ভাবেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সমুদ্রের গভীরে সবচেয়ে জোরে শব্দ করে আঙুলের সমান ছোট একটি চিংড়ি। এই বিশেষ প্রজাতির নাম স্ন্যাপিং শ্রিম্প বা পিস্তল চিংড়ি। আকারে ছোট হলেও শব্দের দিক থেকে এরা বিশাল প্রাণীকেও ছাড়িয়ে গেছে।

স্ন্যাপিং শ্রিম্পের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এর একটি দাঁড়া সাঁড়াশির মতো। এই দাঁড়াটি তারা অস্ত্রের মতো ব্যবহার করে। দাঁড়া খুব দ্রুত বন্ধ করার সময় পানির ভেতরে এক ধরনের শক্তিশালী প্রবাহ বা জেট তৈরি হয়। এতে পানিতে একটি ক্যাভিটেশন বাবল (তীব্র চাপের কারণে তৈরি বুদ্‌বুদ) সৃষ্টি হয়। সেই বুদ্‌বুদ ফেটে প্রচণ্ড শব্দ হয় এবং সামান্য আলোও দেখা যেতে পারে। এই ঘটনাকে বলা হয় শ্রিম্প লুমিনেসেন্স।

জীববিজ্ঞানীদের মতে, রক কনসার্টের শব্দ সাধারণত ১১০ থেকে ১২০ ডেসিবেল হয়। একটি জেট ইঞ্জিনের শব্দ প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ ডেসিবেল। কিন্তু হাজার হাজার স্ন্যাপিং শ্রিম্প একসঙ্গে শব্দ করলে তা ২১০ ডেসিবেল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। অর্থাৎ এই ছোট চিংড়ির দল জেট ইঞ্জিনের চেয়েও বেশি শব্দ করতে সক্ষম।

এই তীব্র শব্দ সামুদ্রিক গবেষণার জন্য বড় সমস্যা তৈরি করছে। বিজ্ঞানী রামেশ আইয়ার জানান, অনেক সময় এই চিংড়ির আওয়াজ জাহাজের ইঞ্জিনের শব্দকেও ঢেকে দেয়। ফলে সমুদ্রের তলদেশের মানচিত্র তৈরি বা ম্যাপিং কাজে বাধা সৃষ্টি হয়। অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ও যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলে ডলফিন ও তিমির চলাচলের পথ পর্যবেক্ষণেও এই শব্দ সমস্যা তৈরি করছে।

কার্টিন ইউনিভার্সিটির গবেষক ক্রিস্টিন এরবে বলেন, বিষয়টি এমন যেন আতশবাজির ভেতরে দাঁড়িয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেষ্টা করা। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে। এতে স্ন্যাপিং শ্রিম্পের শব্দ করার প্রবণতাও বাড়ছে।

তবে এর একটি ইতিবাচক দিকও আছে। এক্সেটার ইউনিভার্সিটির গবেষক লুসিল চ্যাপুইসের মতে, এই চিংড়ির উপস্থিতি অনেক সময় সুস্থ ও প্রাণবন্ত প্রবাল প্রাচীরের সংকেত দেয়। অর্থাৎ সমস্যা থাকলেও, প্রকৃতির ভারসাম্য বোঝার ক্ষেত্রে এই শব্দ কখনো কখনো সহায়কও হতে পারে।