সবার জানা উচিৎ ব্রেইন টিউমারের যে ১০ টি বিষয়

860

হু (WHO) এর মতে, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (CNS) উচ্চ মাত্রার (৩ ও ৪ মাত্রার) টিউমারকেই ব্রেইন ক্যান্সার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ব্রেইন টিউমার এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যা যেকোন বয়সের, যেকোন লিঙ্গের, যেকোন আকারের, যেকোন বর্ণের এবং যেকোন বাসস্থানের মানুষের হতে পারে, যদিও ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে এর ধরন ও স্তরে পার্থক্য হতে দেখা যায়। চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন ব্রেইন ক্যান্সারের জিনকৌশল এবং চিকিৎসার বিষয়টি বোঝার। ব্রেইন ক্যান্সার নির্ণয়ের উপায় এবং নিরাময় এর বিষয়ে যে বিষয়গুলো জানা থাকা উচিৎ সেরকম ১০ টি বিষয়ই জানবো আজকের ফিচারে।

১। সব ব্রেইন টিউমারই ক্যান্সার নয়। কিছু আছে সম্পূর্ণ অক্ষতিকর আবার কিছু আছে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষের দলা বা পিন্ড যা মস্তিষ্কের গাঠনিক টিস্যুকে টার্গেট করে। ক্যান্সার কোষগুলো শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে।

২। আপনি মনে করে থাকেন যে ব্রেইন ক্যান্সার এমন এক ধরণের ক্যান্সার যা শুধু মস্তিষ্কের কোষ বা কলাতেই প্রভাব ফেলে, তাহলে আপনি ভুল জানেন। বস্তুত বিভিন্ন ধরণের ব্রেইন টিউমার আছে যা আকার, অবস্থান, কোষের উৎপত্তি ও মাত্রার উপর ভিত্তি করে শ্রেণী বিভক্ত করা হয়। তাই বলা যায় যে, সব ব্রেইন টিউমার এক রকমের নয়।

৩। ব্রেইন টিউমার সাধারণত দুটি ভাগে বিভিক্ত যেমন- প্রাইমারী টিউমার এবং সেকেন্ডারি টিউমার। প্রাইমারী টিউমার মস্তিষ্কের কলা আক্রান্ত করে এবং সেখানেই বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে সেকেন্ডারি টিউমারকে মেটাস্ট্যাটিক টিউমার বলে এবং এটি শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গ যেমন- ফুসফুস, ব্রেস্ট, কিডনি, পাকস্থলী ও অন্ত্র এবং সময়ের সাথে সাথে মস্তিস্কেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রাইমারী টিউমারের চেয়ে সেকেন্ডারি টিউমার বেশি হয়ে থাকে।

৪। ব্রেইন টিউমারের একটি সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে তীব্র মাথা ব্যথা হওয়া যা সকালের দিকে তীব্র আকারে দেখা দেয়। ব্রেইন ক্যান্সারের অন্য সাধারণ লক্ষণগুলো হচ্ছে হাত ও পায়ের দুর্বলতা, হাঁটার সময় ভারসাম্যহীনতা, ঝাপসা দৃষ্টি, খিঁচুনি আসা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, স্মৃতি হারানো, বমি এবং হটাৎ করেই মেজাজ বা ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি। যদি আপনার এধরণের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। তবে মনে রাখবেন যে, রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া ছাড়া শুধু এই উপসর্গগুলো দেখা দিলেই ভাববেন না যে আপনার ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে।

৫। যদি চিকিৎসক সন্দেহ প্রকাশ করেন যে আপনার ব্রেইন টিউমার হয়েছে তাহলে ক্লিনিক্যাল টেস্ট করাতে হবে আপনার স্নায়ুতন্ত্রের মূল্যায়নের জন্য। চিকিৎসক আপনাকে সিটি স্ক্যান, এমআরআই স্ক্যান করাতে বলবেন ক্যান্সারের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য। টিউমারের পর্যায় নির্ণয়ের জন্য টিউমার টিস্যুর বায়োপসি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মাথার খুলি খুলে টিউমার অপসারণ করতে হতে পারে।

৬। WHO এর গাইডলাইন অনুযায়ী, টিউমার কোষের তীব্রতা ও অস্বাভাবিকতার উপর নির্ভর করে ব্রেইন টিউমারকে ৪ টি গ্রেডে ভাগ করা হয়েছে, যেমন-

ক্স গ্রেড ১ – এই কোষগুলো দেখতে বিনাইন ধরনের হয় এবং আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়। এরা অন্য টিস্যুতেও ছড়িয়ে যেতে পারে।

ক্স গ্রেড ২ – কোষগুলোকে সামান্য অস্বাভাবিক দেখায়। আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায় এবং এরা অন্য টিস্যুতেও ছড়িয়ে যেতে পারে।

ক্স গ্রেড ৩ – কোষগুলোকে অস্বাভাবিক দেখায়। টিউমার আক্রমণাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ক্স গ্রেড ৪ – কোষগুলোকে অস্বাভাবিক দেখায় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যায়ের টিউমার জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ।

৭। ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরন বা মাত্রা, বয়স এবং সাধারণ ফিটনেস এর উপর। গ্রেড ১ ও গ্রেড ২ ব্রেইন টিউমারের ক্ষেত্রে অপারেশন করে টিউমারের আকার কমানো হয় এবং লক্ষণগুলো দূর হয়। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ক্ষেত্রে (গ্রেড৩ ও গ্রেড ৪) রেডিয়েশন থেরাপি ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে। কেমোথেরাপি মুখে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শিরায় প্রয়োগ করা হয়। টিউমারের গ্রেড যত বেশি হবে এর থেকে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা তত কম হবে। চতুর্থ পর্যায়ের ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত মানুষ ১৫ মাস বেঁচে থাকতে পারে।

৮। জিনগত পরিব্যাক্তি হচ্ছে ব্রেইন টিউমারের প্রমাণিত রিস্ক ফ্যাক্টর। জিনগত পরিব্যাক্তি আপনি জন্মগত ভাবেও পেতে পারেন অথবা সময়ের সাথে সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তৈরি হতে পারে। জীবনধারা বা অভ্যাস এক্ষেত্রে স্পষ্ট কারণ নয়। চিকিৎসার সময়ে জীবনধারার ভালো অভ্যাস আপনার জটিলতা এড়াতে সাহায্য করবে।

৯। চিকিৎসা পরবর্তী যতœ যেমন- নিয়মিত ফলোআপে যাওয়া পুনরায় টিউমারের উৎপত্তিকে শনাক্ত করতে সাহায্য করবে। ক্যান্সারের ধরনের উপর নির্ভর করে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ঝুঁকির বিষয়ে এবং চিকিৎসা পরিকল্পনার বিষয়ে আপনার চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। ব্রেইন ক্যান্সারের রোগীদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।