Site icon রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম

সবার জন্য দৌড় উপযুক্ত ব্যায়াম নয়

রক্তসঞ্চালন ও হৃদযন্ত্র সচল রাখার জন্য দৌড়ানোকে সবচেয়ে কার্যকর ব্যায়াম হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ব্যায়ামের জন্য বাহারি উপকরণ লাগবেই ব্যাপারটা এমন নয়। ¯্রফে জুতো জোড়ার ফিতে বেঁধে দৌড় শুরু করলেই হলো। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, দৌড় কি সবার জন্য উপযুক্ত? অনেকের ক্ষেত্রে দৌড় ভালো ব্যায়াম হলেও সবার ক্ষেত্রে তা না-ও হতে পারে।
নিয়মিত এ ব্যায়াম করা মনে হতে পারে স্বাভাবিক ও আনন্দের বিষয়। কিন্তু যথাযথ পূর্ব সতর্কতা ছাড়া দৌড়াতে গেলে অস্বস্তি বোধ করা থেকে শারীরিক ক্ষতির শিকার পর্যন্ত হতে পারেন। যদি আপনি দৌড়াতেই চান তাহলে আপনাকে কয়েকটা বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে।

আসুন তাহলে খেয়াল করি:
আপনার শরীরের গঠন কেমন? দৌড় শুরু করার আগে ভাবতে হবে আপনার শরীরের গঠন কেমন। পৃথিবীতে যারা ভালো দৌড়ান তাদের দেহের গঠন হালকা-পাতলা, গঠন শক্তপোক্ত আর কিছুটা পেশীবহুল। যখন মানুষ দৌড়ানোর সময় প্রতিক্ষেপে যে ওজন পড়ে তা শরীরের তিনগুণ।তাই শরীরের গঠন জানাটা জরুরি।বৈজ্ঞানিকভাবে শরীরের গঠন তিন প্রকার। যেমন: এক্টোমর্ফ, এন্ডোমর্ফ এবং মেসোমর্ফ।
এক্টোমর্ফ: যাদের শরর কৃশকায়, লম্বা এবং সহজে ওজন বাড়ে না।
এন্ডোমর্ফ: যাদের শরীর বিশালাকায়, শরীরে চর্বির আধিক্য, নাশপাশির মতো বেশ গোলগাল আর সহজেই চর্বি জমার প্রবণতা আছে।
মেসোমর্ফ: যাদের দেহ পেশীবহুল, সুগঠিত আর যাদের হজমশক্তি খুব ভালো। সেই সঙ্গে যাদের শরীরের কোষ খুব সজীব আর প্রাণবন্ত। অনেকের শরীরে গঠন বড় হয়ে থাকে তার মানে এই নয় যে, তারা মেসোমর্ফ। কিছুকিছু বড় শরীরের মানুষ এক্টোমর্ফ ও এন্ডোমর্ফ -এই দুয়ের বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়া। আবার কিছু বড় শরীরের মানুষ এক্টোমর্ফ ও মেসোমর্ফ -এই দুই বৈশিষ্ট্য নিয়ে গড়া। যাদের গঠন খাটো ও পাতলা তারা ভালো দৌড়াতে পারবেন। আপনার অঙ্গ-প্রতঙ্গের গঠন দীর্ঘ কিনা সেটা বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে দৌড়ানোর সময় আপনি পরিমাণ কি শক্তি ব্যয় করে থাকেন। অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, খাটো গঠনের লোকেরা লম্বাদের চাইতে বেশি দৌড়াতে পারে। যখন দীর্ঘ ও বড় পা নিয়ে সামনে এগুনো কঠিন হয়ে পড়ে তখন কম ওজন নিয়ে ছোট গড়নের মানুষেরা বেশি দৌড়াতে পারে। যাদের ওজন বেশি তারা দৌড়ানোর সময় ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন।

দৌড়ানোর সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন :
১. আপনি যদি প্রথম প্রথম দৌড়ানো শুরু করতে চান তাহলে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ জুতার ধরন, দৌড়ের পরিবেশ এবং দৌড়ানোর সক্ষমতা বিষয়ে পরামর্শ আপনার কাজে লাগবে।
২. বেশি ওজনের মোটা মানুষদের জন্য দৌড়ানো প্রতিবন্ধকতাময়। বেশি ওজনের কারণে সে বেশি দৌড়াতে পারবে না। তাকে প্রথমে হাঁটার অভ্যেস করতে হবে, পরে আরো জোরে হাঁটার, স্ট্যামিনা বাড়ানোর পরই কেবল দৌড়ানোর কাজে মন দিতে হবে।
৩. যাদের বেশি ওজন, দৌড়ানোর কারণে তাদের শরীরে ব্যথা হতে পারে বা আঘাত লাগতে পারে। দৌড়ার কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বেড়ে যায়। দৌড় শুরু করার আগে তাই জরুরি কাজ হচ্ছে রক্তের স্পন্দন বা পালস মেপে নেওয়া।
৪. প্রথম প্রথম যারা দৌড়াবেন তাদের জন্য জরুরি হচ্ছে অল্প সময় পরপরই বিশ্রাম নেওয়া। শরীরকে কষ্টের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দিন। হঠাৎই কঠিন পরিশ্রমে নেমে শরীরকে বেশি কষ্টের মুখে ঠেলে দেবেন না।আপনাকে দৌড়ের ক্ষেত্রে নিয়মিত বিরতিতে যেতে হবে। এটা আপনার স্ট্যামিনাকে ধীরে ধীরে আরো বাড়িয়ে দেবে।
৫. দৌড়ের আগে বেশি খাবেন না। ক্ষুধা লেগে গেলে অগত্যা দৌড় শুরুর আগে হালকা কিছু খেয়ে নিন। পেট পুরে খাবার পর অন্তত তিন পার না হওয়া পর্যন্ত দৌড়াতে যাবেন না।
৬. পানি হচ্ছে অন্যতম চালিকাশক্তি। বের হওয়ার আগে অন্তত আধা লিটার পানি পান করুন। শরীরকে পানিশূন্য হতে দেবেন না।
৭. শরীরকে হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে গরম করবেন।
৮. সহজ ও আরামদায়কভাবে আপনার দৌড় শুরু করেন। হঠাৎ করে দৌড়ের গতি না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে বাড়ান।
৯. শরীর কি বলে তা মন দিয়ে শুনুন। যদি বিশ্রাম চায় তাহলে বিশ্রাম নিন, তারপর আবার দৌড় শুরু করুন।
১০. বিশেষজ্ঞের কাছে শুনে নিন আপনি কতটুকু দৌড়াতে পারবেন।
১১. কঠিন জায়গার ওপর দিয়ে দৌড়াবেন না। এর ফলে আপনার হাঁটুর ক্ষতি হতে পারে।
১২. দৌড় শেষ হবার পর শরীরকে শীতল হতে দিন।ধীরে ধীরে শরীরকে এলিয়ে দিন। চাপমুক্ত করুন। এটা আপনাকে ব্যথামুক্ত রাখতে সহায়তা করবে।

Exit mobile version