Site icon রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম

সঠিক খাবার ইফতারে

রোজায় সারাদিন কোনো খাবার এবং পানীয় গ্রহণ না করলেও আমরা আমাদের ব্যক্তিগত, সাংসারিক ও পেশাগত দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যাই নিয়মিত। জীবনের গতিশীলতার প্রয়োজনে শরীরের অভ্যন্তরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং প্রতিটি সিস্টেমকেই সচল থাকতে হয়। আর এই সচলতার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত শক্তি। আর এই শক্তির জন্য যে জ্বালানী প্রয়োজন তা আসে খাবার থেকে। রোজার সময় আমরা সেহরি ও ইফতারে যে খাবার খেয়ে থাকি তা থেকেও শরীর সারাদিনের জন্য শক্তি পেয়ে থাকে। রমজান মাসে টানা ১২-১৩ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়। এ সময় দিনের বেলা আমাদের শরীর যকৃত্ ও পেশিতে জমানো শর্করা ও ফ্যাট থেকে শক্তি লাভ করে। শরীরে পানি জমা থাকে না। ঘাম ও প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়, পানিশূন্যতা হয় বলে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা দেখা দেয়। কাজে মনোযোগ দেওয়া যায় না। এ ছাড়া অ্যাসিডিটি, গ্লুকোজ কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয় রোজার মাসে। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের প্রথম খাবার হলো পানীয়। পানীয় নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। ইফতার শুরু করা উচিত তাজা ফলের রস কিংবা লেবুর রসের শরবত দিয়ে। বাজারের রঙ্গিন শরবত বর্জন করা উচিত। কারণ রঙ্গিন শরবতে ব্যবহূত হয় কৃত্রিম রং, যা ক্যান্সারের উদ্রেককারী বলে স্বীকৃত। যেকোনো তাজা ফলের শরবত শরীরকে তাজা রাখবে, শরীরে মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করবে। তরমুজ এবং খেজুরের জুস ইফতারে একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়। কয়েক টুকরো তরমুজের সঙ্গে এক বা দুইটি খেঁজুর ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিলেই চমত্কার স্বাদের এই পানীয়টি তৈরি হয়ে যায়। অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার না করায় এটি খুবই স্বাস্থ্যকর পানীয়। ডাবের পানি ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ইফতারে মাঝে মাঝে ডাবের পানি পান করা ভালো। শরবতের পর রাখা যেতে পারে যেকোনো মৌসুমী ফল। ফল সহজপাচ্য ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পূরণ করে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
রোজা নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণারোজা নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা : ইফতারির প্রচলিত মেন্যুর মধ্যে বুট, ছোলা, মুড়ি স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর, কিন্তু তেলেভাজা পিঁয়াজু ও বেগুনি জাতীয় খাবার গ্যাসের উদ্রেক করে বদহজমের সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া এসব খাবার পুরনো তেলে ভাজা হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
গরমে দিনশেষে ইফতারে একটি উত্কৃষ্ট খাবার হতে পারে দই-চিড়া। ভেজানো চিড়ার সঙ্গে টক দই, কলা ও খাঁটি গুড় বা মধু দিয়ে মাখিয়ে খেলে একটি পরিপূর্ণ ইফতার যেমন হয় তেমনি প্রায় সব ধরনের পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হয়। এতে হজম প্রক্রিয়া শক্তিশালী হয় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দূর হয়।
ইফতারে প্রচুর পানি পান করতে হবে। খেতে হবে কম মসলাযুক্ত খাবার। ইফতারে মিষ্টি জাতীয় খাবার রাখাও মন্দ নয়, যদি তা খেতে চিকিত্সকের নিষেধ না থাকে। তবে বেশি খাওয়া যাবে না। ইফতারে খেজুর-খুরমা রাখাও ভালো। খুরমা খুব দ্রুত শরীরের গ্লুকোজ ঘাটতি মেটাতে পারে ও শরীরের দুর্বলতা দূর করে। সালাদ বা স্বাস্থ্যকর খাবারে সৃজনশীল হোন। তেলে ভাজা বা ভারী খাবার না খেয়ে খাবারে বৈচিত্র্য আনতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত নিত্যনতুন খাবার তৈরি করুন। বিভিন্ন ধরনের ও রঙের সবজি ও ফল দিয়ে বিভিন্ন সালাদ তৈরি করে খান। এতে করে পুষ্টি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সমন্বয় হবে যা আপনার দেহ এবং দেহ কোষকে এই মাসে ভালো রাখতে সাহায্য করবে। রাতের খাবারে ভাত, শাক, সবজি, মাছ এবং ডাল খাওয়া যেতে পারে। কোনো কোনো দিন রাতের মেন্যুতে ভাত, ভর্তা, সবজি, ডিম খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন।

Exit mobile version