শুভ জন্মদিন দ্য ফিজ

592

২০১৫ সালে ক্রিকেট বিশ্বে যে নামটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে তা নির্দ্বিধায় মুস্তাফিজুর রহমান। কেননা ১৯ বছর বয়সী এই বিস্ময় বালকের দূর্বোধ্য বোলিংয়ে বাংলাদেশের কাছে একই বছরে ধরাশায়ী হয়েছিল পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় বড় দলগুলো। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, ফাপ ডু প্লেসির মতো বিশ্বমানের খেলোয়াড়দেরও সেদিন তরুণ মুস্তাফিজের সামনে নিতান্তই অসহায় মনে হচ্ছিল। কেননা মুস্তাফিজের সেই দুর্বোধ্য কাটারকে বোঝা যে এক প্রকার অসম্ভবই ছিল তাদের কাছে! আর সে থেকেই ক্রিকেট বিশ্বে মুস্তাফিজ হয়ে ওঠেন এক আতঙ্কের নাম। আর টাইগাররা খুঁজে পায় নতুন এক সম্ভাবনাকে। বিস্ময়কর প্রতিভাকে।আজ এই বিশ্বমাতানো কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের জন্মদিন। ১৯৯৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর খুলনার সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করেন এই ক্রিকেটার। শুভ জন্মদিন কাটার মাস্টার, দ্য ফিজ।

জন্মদিনে চলুন দেখে নেওয়া যাক ক্রিকেটের সবুজ গালিচায় তরুণ এই বোলারের পথচলা…
ক্রিকেটে হাতেখড়ি : ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি বেশ ঝোঁক ছিল তার। স্বপ্ন ছিল একদিন তার পছন্দের ক্রিকেটার মোহাম্মদ আমিরের মতো প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের উইকেট গুড়িয়ে দেবেন। আর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতেই সাতক্ষীরার মুস্তাফিজ নিজেকে খুলনা ডিভিশন ক্রিকেটে জড়ান। আর সেই সাথে খুলনা ডিভিশন ক্রিকেটে সবথেকে কম বয়সী ক্রিকেটার হওয়ার মুকুটটিও পেয়ে যান বাঁহাতি এই ক্রিকেটার। মূলত খেলার হাতেখড়িটা তখন থেকেই।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ : আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশটা অনেকটা মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো। হুট করেই পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক হয় বাঁহাতি এই পেসারের। অভিষেক টি-টোয়েন্টিতেই সবার নজর কাড়েন তিনি।  চার ওভার বল করে সেবার মাত্র ২০ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন মূল্যবান ২ টি উইকেট! এরপর থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। তবে টি-টোয়েন্টি অভিষেকে যতো না আলোচনায় এসেছিলেন তার চেয়ে দ্বিগুণ আলোচনায় ছিলেন ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকের পর। কেননা অভিষেক ম্যাচেই অসাধারণ সব কাটারে সেদিন তুলে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট! ক্যারিয়ারের পরের গল্পটাও অভিষেকের মতো এরকম সোনায় মোড়ানোই বটে। পুরো বিশ্বে এখন এই পেসার কাটার মাস্টার নামেই পরিচিত!
রেকর্ডময় মুস্তাফিজ :
 ওয়ানডে অভিষেক থেকেই যেন মুস্তাফিজ শুরু করেন রেকর্ড তৈরির খেলা। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অভিষেক ম্যাচেই পাঁচ উইকেট নিয়ে বিশ্বে দশম বোলার হিসেবে জায়গা করে নেন সেই তালিকায়, যারা কিনা অভিষেকে ম্যাচেই পাঁচ উইকেট লাভ করেছেন। তাছাড়া তিন ম্যাচ সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট (১৩) নেওয়ার রেকর্ডটিও তার ঝুলিতেই। একদিনের ক্রিকেট থেকে শুরু করে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে বাঁহাতি এই পেসারই একমাত্র খেলোয়াড় যে কিনা দুই ফরম্যাটের ক্রিকেটের অভিষেকেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এখানেই শেষ নয়, অভিষেক হওয়া বছরেই ২০১৫ আইসিসি বর্ষসেরা ওয়ানডে দলেও অন্তর্ভূক্তি ঘটে এই ক্রিকেটারের। তাছাড়া ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আইসিসি ইমার্জিং ক্রিকেটারের ছকেও মুস্তাফিজ জায়গা করে নেন। যা এর আগে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার পায়নি।
ওয়ানডে, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার : পরিসংখ্যান বলে টেস্টের চেয়ে ওয়ানডেতেই বেশি সফল এই ক্রিকেটার। ২২ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ইতিমধ্যেই পেয়েছেন ৪৪টি উইকেট! একদিনের ক্রিকেটে ভারতের বিপক্ষে ৪৩ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেওয়াটাই আজ পর্যন্ত তার সেরা বোলিং ফিগার। তবে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫ উইকেটের দেখা পেয়েছেন এখন পর্যন্ত ৩ বার। যার দুবারই ভারতের বিপক্ষে। অন্যদিকে টেস্ট অভিষেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে দুর্দান্ত সূচনা করলেও ওয়ানডের মতো অতোটা উত্তাপ ছড়াতে পারেননি বামহাতি এই পেসার। ৬ টেস্টে এখন পর্যন্ত পেয়েছেন কেবল ১৩ উইকেট। তবে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে অনেকটাই উজ্জ্বল এই ক্রিকেটের। ১৭ টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ২৭টি উইকেট। যার মধ্যে এক ম্যাচে ২২ রান দিয়ে পেয়েছেন ৫ উইকেটের দেখাও। যা এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে তার সেরা বোলিং ফিগার!
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে আইপিএল, সাসেক্সের হয়ে ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট খেলেছেন তিনি। পিএসএল খেলার জন্যেও ডাক পেয়েছিলেন এই বোলার। কিন্তু কাঁধের ইনজুরির কারণে তা আর খেলা হয়নি কাটার মাস্টার ফিজের। তবে ক্যারিয়ারে এই অল্প সময়েই অভিজ্ঞতার ঝুলিতে জমা হয়েছে অনেক কিছু। জন্মদিনে অনেক অনেক শুভকামনা এই পেসারের জন্য।