শুধু যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ

625

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গঠন করা একটি কমিটি। তবে এ সুযোগ শুধু যোগ্য ও পরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানকে দিতে বলা হয়েছে কমিটির প্রতিবেদনে। বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ে গত মার্চ মাসে এ কমিটি গঠন করা হয়। এতে অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিনিধি ছিলেন। এর সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য অজিত কুমার পাল। বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে এবং বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিয়েছে। তাদের ইতিবাচক সুপারিশের পর বিদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নীতিমালা করতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে গত ১৪ মার্চ। ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর বিদেশে বিনিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বিদেশে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের কমিটিটি গঠন করা হয়েছিল। জানা গেছে, বিদেশে বিনিয়োগের নীতিমালা আগামি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিডার গভর্নিং বোর্ডের সভায় তোলা হবে। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম সম্প্রতি আলাপকালে বলেন, বাংলাদেশে বেশ কিছু খাতে উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। খুব সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে এ সক্ষমতা কাজে লাগানো যেতে পারে। দেশের এখনকার আইন অনুযায়ী বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো চাইলেই বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে তাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি আবেদন বিবেচনাধীন। প্রতিবেদনে কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিনিয়োগের অনুমোদন সেসব দেশে দেওয়া, যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বেশি এবং প্রবাসী আয় বেশি আসে। যেসব দেশ বিনিয়োগকে উৎসাহ দিচ্ছে, ঋণের সুদ কম এবং অর্থ ফেরতের ক্ষেত্রে উদার, সেসব দেশের বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে কমিটি। কমিটি মনে করে, বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার একটি সীমা নির্ধারণ করে দিতে পারে, যাতে কেউ চাইলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে নিতে না পারেন। আবার দেশের রপ্তানি খাতের সংযোগ শিল্প স্থাপিত হয়, এমন ক্ষেত্রে বিদেশে বিনিয়োগের পক্ষে তারা। কমিটি ভারত ও আফ্রিকার দেশগুলোয় পোশাক খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা যাচাই করতে বলেছে। বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ পরিস্থিতি সুখকর নয়। বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, দেশে বিনিয়োগের সুযোগ না থাকলে অর্থ অবৈধভাবে বিদেশে চলে যাবে, এটা বাস্তবতা। এ ক্ষেত্রে বিদেশে বিনিয়োগের একটি নীতিমালা থাকলে ভালো। তিনি বলেন, যোগ্য কারা, সেটা নীতিমালায় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং অনুমোদনের ক্ষেত্রে তদবিরের বদলে সবার জন্য সমানভাবে নীতিমালার প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বিদেশে গিয়ে লোকসানে পড়লে জনগণের করের অর্থ দিয়ে কোনো সুবিধা দেওয়া যাবে না।

অনুমোদন পেয়েছে ৮ প্রতিষ্ঠান
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) থেকে ৮টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে। এর মধ্যে আছে তৈরি পোশাক খাতের ডিবিএল গ্রুপ। যারা পর্যায়ক্রমে ৯৫ লাখ ডলার বা ৭৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে ইথিওপিয়ায় একটি পোশাক কারখানা নির্মাণ করছে, যা গত এপ্রিলে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল।
এ বিষয়ে ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার বলেন, ‘আমরা আগামি এপ্রিলে সেখানে উৎপাদন শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।’
ডিবিএল ছাড়া মিয়ানমারে মবিল যমুনা, যুক্তরাষ্ট্রে এসিআই হেলথ কেয়ার ও স্কয়ার ফার্মা, যুক্তরাজ্য ও এস্তোনিয়াতে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, কেনিয়ায় বিএসআরএম স্টিল ও সিঙ্গাপুরে স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং বিনিয়োগের অনুমতি পেয়েছে। সর্বশেষ গত মাসে আকিজ গ্রুপ মালয়েশিয়ায় দুটি কারখানা অধিগ্রহণের জন্য ২ কোটি ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন পায়।
এ দেশের আরও কিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। এর মধ্যে হা-মীম গ্রুপ হাইতিতে পোশাক কারখানায়, নিটল-নিলয় গ্রুপ গাম্বিয়ায় ব্যাংকে, সামিট গ্রুপ সিঙ্গাপুরে শিপইয়ার্ডে, মেঘনা গ্রুপ কম্বোডিয়ায় ও ভারতে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ বিনিয়োগ করতে চায়। এদিকে নাসির গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি চীনে যৌথ বিনিয়োগে একটি কাচ উৎপাদনের কারখানা করেছে বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, এ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভবিষ্যতে আঞ্চলিক ও পরে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীতে পরিণত হতে হবে। এজন্য বিদেশে পরীক্ষামূলকভাবে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে মুনাফার একটি অংশ দেশে আনার মতো কিছু শর্ত সরকার বেঁধে দিতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।