শিল্পী গানের শিক্ষক সাদি মহম্মদের হঠাৎ মৃত্যুর খবর

37

বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদের  সংগীতাঙ্গন স্তব্ধ। দেশের অনেক তরুণ ও প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর গুরু ছিলেন তিনি। ভালো গাওয়ার পাশাপাশি স্বল্পভাষী, বিনয়ী এই  হিসেবেও ছিলেন বিখ্যাত। অসংখ্য অনুরাগীকে রেখে ১৩ মার্চ রাতে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেন সাদি মহম্মদ। এমন চলে যাওয়া হতবাক করেছে গোটা দেশবাসীকে। তবে চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়, সাদি মহম্মদও রয়ে গেছেন সহকর্মী ও হাজারও ভক্ত অনুরাগীদের মাঝে। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা…

সুজিত মোস্তফা, নজরুলসংগীত শিল্পী সাদি ভাই অনেক অভিমানী মানুষ ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে বিষাদে ভুগছিলেন।বিশেষ করে তাঁর আম্মা মারা যাওয়ার পর থেকে আরো ভেঙে পড়েছিলেন। আমার সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা হতো। আমাকে অনেক ভালোবাসতেন তিনি। কিন্তু ১৩ মার্চ সংবাদটি শোনার পর থেকে আর মেনে নিতে পারছি না। সাদি ভাই কাজটা ঠিক করলেন না একদম। তাঁকে সারা দেশের মানুষ ভালোবাসতেন। তিনি হয়তো সেটা অনুধাবন করতে পারেননি। বুঝতে পারেননি এখানে অভিমানের দাম নেই। অভিমান করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। সাদি ভাইয়ের এই শূন্যতা কখনোই পূরণ করা যাবে না। তিনি পুরো জীবন ব্যয় করেছেন সংগীতচর্চায়। ওপারে ভালো থাকুন সাদি ভাই, আমাদের ভালোবাসায় থাকুন। আমরা জানি চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয়। আপনি আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন সারাজীবন।

লিলি ইসলাম, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংবাদটা শোনার পর থেকে মেনে নিতে পারছি না। সাদি ভাই অত্যন্ত বিনয়ী মানুষ ছিলেন। সব সময় অন্যদের খোঁজখবর রাখতেন। শুনেছি মাকে হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এই সময়টা আসলে সবারই আসে। কিছু কিছু শোক কাটিয়ে ওঠা যায় না, ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তবে সাদি ভাই জ্ঞানী ও গুণী মানুষ ছিলেন। এভাবে সিদ্ধান্তটা কেন যে নিলেন! তিনি আমাদের সংগীতাঙ্গনে একজন নক্ষত্র। এখনো অনেক কিছু দেওয়ার ছিল তাঁর। আমাদের বঞ্চিত করে তিনি চলে গেলেন। এত অভিমান জন্মেছিল যে সাত-পাঁচ না ভেবেই স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করে নিলেন।

অনিমা রায়, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যদি একজনও পুরুষ রবীন্দ্র কণ্ঠের কথা বলা হয়, তবে প্রথম নামটিই আসবে সাদি মহম্মদ স্যারের। দুই সপ্তাহ আগে স্যারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমরা বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানের জন্য গান রেকর্ডিং করেছিলাম। সারাটি দিন স্যারের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি অভিমানের কথাই বলেছিলেন বারবার। গল্পে গল্পে অতীতের নানা স্মৃতিও তুলে ধরেছিলেন। বাবার মৃত্যুর গল্প, মায়ের কথা—সব জানিয়েছিলেন। সেদিন বুঝতে পারিনি দুই সপ্তাহের মধ্যে স্যার আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। এত গুণী একজন শিল্পী কোনো জাতীয় পুরস্কার পাননি, জাতীয়ভাবে কোনো সম্মানিত করা হয়নি তাঁকে। তিনি জীবিত থাকতেই বলে গেছেন, কখনো যেন তাঁকে মরণোত্তর পদক না দেওয়া হয়। কত বড় অভিমান জন্মালে একজন মানুষ এভাবে বলতে পারেন! সাদি স্যারের আত্মার শান্তি কামনা করছি। পাশাপাশি আর কাউকে যেন অভিমান নিয়ে চলে যেতে না হয় রাষ্ট্রকে সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ করছি। উনি বয়সে আমার অনেক বড় ছিলেন। ফলে একটু দূরত্ব ছিল। সাদি ভাইয়ের সঙ্গে সরাসরি কাজ করাটা কম হয়েছে। যোগাযোগটাও কম হতো। দেখা হলে আমার মাথায় হাত রাখতেন, দোয়া করতেন। আপন ছোট বোনের মতো দেখতেন আমাকে। তাঁর এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নেওয়া যায় না। অনেক দিন ধরে তিনি ডিপ্রেশনে ছিলেন। এই সময় পরিবারের সদস্যদের উচিত ছিল সঠিকভাবে তাঁর খেয়াল রাখা। মেডিটেশনও করানো যেত। আমি জানতে পারলাম মা মারা যাওয়ার পর তিনি আরো বেশি একাকিত্বে ছিলেন। আমাদের কার জীবনে কখন কী ঘটে যায় বলা মুশকিল। সাদি ভাইয়ের মৃত্যু সংগীতাঙ্গনের অনেক বড় ক্ষতি করেছে। তার পরও মেনে নিতে হবে, সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে।