শিবগঞ্জ সীমান্তে দুই দেশের গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ: কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কিরণগঞ্জ ও চৌকা সীমান্তের মাঝামাঝি সীমান্ত পিলার ১৭৭ এলাকায় আমগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে দুই বাংলাদেশী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে উভয় দেশের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে বিএসএফের পক্ষ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে বলে বিজিবি জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার বেলা ১২টার দিকে সীমান্তের শূন্যরেখার পাশে বাংলাদেশের ভেতরের জমিতে গম কাটতে গিয়েছিলেন কৃষকরা। তখন ভারতীয় নাগরিকরা এসে তাদের বাধা দেন। এ সময় ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে কয়েকটি আমগাছ কেটে ফেলেন। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় ভারতীয় নাগরিকদের হামলায় কয়েকজন বাংলাদেশী আহত হন। বেলা ৩টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। বাংলাদেশের জনগণকে লক্ষ্য করে হাতবোমাও নিক্ষেপ করেন ভারতীয়রা। অন্যদিকে বাংলাদেশের সীমান্তবাসীরা লাঠিসোঁটা ও হাঁসুয়া নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
আহতরা হলেন— বিনোদপুর ইউনিয়নের ঘোনটোলা বিশ্বনাথপুর গ্রামের জিয়ারুল ইসলামের ছেলে রনি ও কালিগঞ্জ গ্রামের সেরাজুল ইসলামের ছেলে ফারুক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চৌকা সীমান্ত এলাকায় অন্তত ৩০টি আমগাছ এবং শতাধিক বরই গাছ ভারতীয় জনগণ বাংলাদেশী ভূখণ্ডে প্রবেশ করে কেটে ফেলেছে।
কালিগঞ্জ ঘোনটোলা গ্রামের রবু জানান, ফারুক মোটরসাইকেলযোগে সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি দেখার জন্য অবস্থান করাকালে ভারতীয়দের ছোঁড়া পাথরে মাথায় গুরুতর আহত হন।
মিঠুন নামের একজন জানান, রনি সীমান্তে বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ভারতীয় ৮/১০ জন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে তার ওপর আক্রমণ করে। এতে রনি আহত হয়।
এসময় বিজিবির ৫৯ মহানন্দা ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিলেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত ফোর্স তলব করা হয়। অপরদিকে ভারতীয় সীমান্তে অতিরিক্ত বিএসএফের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।
লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, চৌকা ও কিরণগঞ্জ বিওপির মাঝামাঝি সীমান্ত পিলার ১৭৭ বরাবর বাংলাদেশের ভেতরে কিছু আমগাছ ছিল। ওই আমগাছ কাটা নিয়ে ভারতীয় নাগরিক ও বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন শূন্যরেখা বরাবর দুই দেশের নাগরিকরা দাঁড়িয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বিজিবির জনবল বাড়ানো হয় এবং আমরা ঘটনাস্থলে চলে আসি। পরে বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে বিজিবি ও বিএসএফের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠক হয়। পতাকা বৈঠকে এ ঘটনার জন্য বিএসএফের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি গাছ কাটার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, এ ঘটনার সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে আছি। কেউ যাতে শূন্য রেখা অতিক্রম না করে এবং উত্তেজনা প্রশমিত করতে বিজিবি প্রস্তুত আছে। বিজিবির পাশে আমাদের দেশপ্রেমিক জনগণ আছেন।
তিনি জনগণকে শূন্য রেখা থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পরিস্থিতি বিজিবির কন্ট্রোলে আছে।
আহতের ব্যাপারে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, তাদের কাছে আহতের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিসংখ্যান নেই। বিএসএফের পক্ষ থেকে হতাহতের বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি। তারা (বিএসএফ) উচ্ছৃঙ্খল লোকজন (মব) নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে, যেটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে বিজিবি মহাপরিচালককে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আশা করছি, বিজিবি ও বিএসএফ সদর দপ্তরের উচ্চপর্যায়ে এ ব্যাপারে কথা হবে।