শিবগঞ্জে অবৈধ ৩টি ইটভাটা উচ্ছেদ আরো ২টি উচ্ছেদের দাবি
শিবগঞ্জ উপজেলার উপর কয়লাদিয়াড় এলাকায় তিনটি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দিয়েছে প্রশাসন। আরো দুটি ইটভাকে ভেঙে ফেলার দাবিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম ও প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তাদেরকে রাস্তায় আটকে দেয় স্থানীয় জনতা।
সোমবার দুপুর ২টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার উপর কয়লাদিয়াড় এলাকায় অভিযানে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় এলাকাবাসী রাস্তায় বসে আন্দোলন করতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ডাকা হয় সেনাবাহিনীকে।
জানা গেছে, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় সোমবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের উপর কয়লাদিয়াড় গ্রামে অবস্থিত শ্রী জগন্নাথ ও তার সহযোগীদের সনি-১ এবং পরে দুপুর ১২টার দিকে অভিযান চালিয়ে কাউসার আলীর স্মার্ট এবং শ্রী জগন্নাথ ও তার সহযোগীদের সনি-২ নামে তিনটি ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়।
দুপুরে অভিযান শেষ করে ফিরে আসার সময় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঘিরে ধরে স্থানীয়রা। এ সময় তারা আরো ২টি ইটভাটাও অবৈধ দাবি করে সেগুলোও উচ্ছেদে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে।
স্থানীয় বাসিন্দা তাসাউর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় মোট ৫টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটা প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণ করে আসছে। আমরা প্রশাসনকে একাধিকবার ব্যবস্থা নিতে বললেও কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। আজকে সোমবার জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেট এখানে এসে তিনটি ভাটা ভেঙে চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় এলাকাবাসী তাদের গাড়ি গতিরোধ করে।
অপর বিক্ষোভকারী শহিদুল ইসলাম জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর মানববন্ধনে গিয়ে স্মারকলিপি দেয়ার সময় ইউএনও মহোদয় অবৈধ ইটভাটাগুলো উচ্ছেদের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এতদিন তা করা হয়নি। গ্রামে এসব ভাটা হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে এ এলাকার মানুষ।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম বলেন, এখানে মোট ৫টি ইটভাটা থাকলেও কাগজপত্র রয়েছে দুটির। বাকি তিনটি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এলাকাবাসীর দাবি ওই দুটি ইটভাটাও ভেঙে দিতে হবে। কিন্তু তাদের কাগজপত্র থাকায় আমরা তা করতে পারি না। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
আমিনুল ইসলাম আরো বলেন, জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আমবাগান, ফসলি জমিতে গজিয়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। এসব ভাটা পর্যায়ক্রমে ভেঙে দেওয়া হবে। যে তিনটি ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তারা কেউ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
অভিযানে সহযোগিতা করে বিজিবি, পুলিশ ও আর্মড পুলিশের কয়েকটি টিম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ বলেন, এলাকাবাসী যে দুটি ইটভাটা ভেঙে দেওয়ার কথা বলছেন, তাদের লাইসেন্স রয়েছে। এজন্য তাদের ইটভাটাগুলো ভেঙে দেওয়া হয়নি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অবরুদ্ধ করার বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্থানীয়দের বোঝানো হয় যে, ওই ২টি ইটভাটার কাগজপত্র যাচাই করে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে সেগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। তাদের আশ্বস্ত করার পর স্থানীয়রা অবরোধ তুলে নিলে নিজ কার্যালয়ে ফিরে আসেন নিবাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলামসহ অন্যরা।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ছানুয়ার হোসেন বলেন, সারাদেশে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের অভিযান চলমান রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় শিবগঞ্জ উপজেলায় তিনটি ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণ করে আসছিল এসব ইটভাটা।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মাসব্যাপী ওই এলাকায় অবস্থিত ৫টি ইটভাটা উচ্ছেদের দাবিতে আন্দোলন করে স্থানীয়রা। পরে আবারো চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে এসব ইটভাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. আফতাবুজ্জামান-আল-ইমরানকে এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে স্মারকলিপি দেন তারা।