শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন : শিক্ষকদের প্রতি দুদক কমিশনার জহুরুল হক

78

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেছেন, শিক্ষার্থীদের শুধু ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন না, জজ ব্যারিস্টার বানাবেন না। তাদেরকে মানুষ বানান, মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলুন, তাদেরকে সৎ নিষ্ঠাবান, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলন। কারণ তারা যদি মানুষ না হয়, তাহলে সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। মানবিক মূল্যবোধ তৈরির একমাত্র জায়গা হচ্ছে শিক্ষা। আপনারা যারা শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মকর্তা রয়েছেন, তারাই পারেন নতুন প্রজন্মকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।
বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষে জেলা ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত জেলা-উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন শীর্ষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে।
জতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে দুদক কমিশনার আরো বলেন, কোনো শ্রমিক তো দুর্নীতি করে না, কোনো কৃষক তো দুর্নীতি করে না। এখনো কথাটি সত্য। এখনো প্রান্তিক মানুষ দুর্নীতি করে না, দুর্নীতি করে শিক্ষিত মানুষ। তাই নতুন প্রজন্মকে মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। দুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলুন। পারলে তাদের বলেন ভাই দুর্নীতি করে গাড়ি-বাড়ি করলেও মরতে হবে, না করলেও মরতে হবে, তা হলে কেন দুর্নীতি করবেন। তিনি বলেন- দুর্নীতি করে কোনো লাভ হয় না, ক্ষতি হয়। অনেক সিআইপি ভিআইপি জেল খাটছেন, অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। অনেকেই ভালোমতো ঘুমাতে পারেন না, অনেকেই নানান অসুখে ভুগছেন, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারেন না। তাহলে ঘুষ খেয়ে দুনীতি করে গাড়ি-বাড়ি টাকা জমানোর কি দরকার।
দুদক কমিশনার বলেনÑ অনেক পরিবারের সদস্যরা জানেন না, কিভাবে টাকা রোজগার করেন। একজনের বেতন ২০ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া দেন ২২ হাজার টাকা, তার ওপর সংসার খরচ, কোথা থেকে আসে এই টাকা?
তিনি তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন- জেলা ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা বিনা পয়সায় কখনো কখনো নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকা রেখে চলেছেন। এসময় তিনি জানান, সততা সংঘ ও সততা স্টোর আবার সক্রিয় করতে হবে।
প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন।
পরে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দুদকের কার্যক্রম তুলে ধরেন দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ ও গণসচেতনতা) মো. আক্তার হোসেন, সততা সংঘ ও সততা স্টোর সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. কামরুল আহসান।
আরো উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় সরকার চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক ও সরকারের উপসচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, দুদকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক মসিউল করিম বাবুসহ অন্যরা।
শেষে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন উপজেলায় দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিতে বেশ কয়জন শিক্ষক আছেন, তারা এই প্রশিক্ষণে অংশ নেন।