শাকিব খান সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিনেই আদালতে অনুপস্থিত

82

চাঁদা দাবি এবং হত্যার হুমকির অভিযোগে প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিনেই আদালতে অনুপস্থিত চিত্রনায়ক শাকিব খান। বুধবার ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়েদা হাফসা ঝুমার আদালতে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল।
তবে ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে এদিন আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি শাকিব খান। আদালতে দেয়া সময়ের আবেদনে আইনজীবীর মাধ্যমে এ কারণ উল্লেখ করেন কিং খান। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ৫ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।

এর আগে গত ৫ জুলাই ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়েদা হাফসা ঝুমা আসামি রহমতের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৯ আগস্ট দিন ধার্য করেন। ওইদিন অভিযোগ গঠনের সময় রহমত উল্লাহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। অন্যদিকে, আদালতের অনুমতি ছাড়া আসামি রহমত উল্লাহর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন শাকিবের আইনজীবী। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। এর ফলে আদালতের অনুমতি ছাড়া রহমত উল্লাহ বিদেশ যেতে পারবেন না।

এর আগে গত ২৩ মার্চ দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে শাকিব খান বাদী হয়ে রহমত উল্লাহ নামে এই প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আসামি রহমত উল্লাহকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। মামলার আরজিতে শাকিব খান যেসব অভিযোগ করেন ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলা ছায়াছবি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক ছবিতে অভিনয় করতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভারটেক্স মিডিয়ার স্বত্বাধিকারী মো. জানে আলমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন শাকিব। চুক্তি অনুযায়ী, ছবির নায়িকা হিসেবে শাকিব খানের বিপরীতে শিবা আলী খানকে মনোনীত করা হয়। শুটিং করতে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ায় যান শাকিব।

এরপর তিনি জানতে পারেন ছবিতে আগে থেকে মনোনীত নায়িকা শিবা আলী খান ভিসা জটিলতার জন্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ এর শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারেননি। তার জায়গায় অ্যানি রেনেসা সাবরিন নামের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এক নারীকে নায়িকা হিসেবে অভিনয়ের জন্য রহমত উল্লাহ শাকিবকে অনুরোধ করলে তিনি ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে প্রস্তাব নাকচ করেন। আরজিতে আরও বলা হয়, আসামি রহমত উল্লাহ শাকিবকে ফাঁদে ফেলার জন্য এক গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আসামি বাদীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে বাদীকে রিফ্রেশমেন্টের জন্য একটি নামিদামি ক্লাবে নেয়ার প্রস্তাব করলে শাকিব রাজি হয়ে একদিন শুটিং শেষে আসামির সঙ্গে ক্লাবে যান। ক্লাবে গিয়ে বাদী অ্যানি রেনেসা সাবরিনসহ আরও ২/৩ জন অপরিচিত লোককে দেখতে পান।

ক্লাবে খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পানীয় পান করেন শাকিব খান। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থবোধ করলে হোটেলে ফেরত আসার সময় আসামি এবং অন্য ২/৩ জন লোককে খুঁজে না পেয়ে অ্যানি রেনেসা সাবরিন থেকে বিদায় নিয়ে গভীর রাতে হোটেলে ফেরত আসতে গেলে অ্যানি শাকিবকে জানান, আপনি যেহেতু অসুস্থবোধ করছেন তাহলে চলেন আমি আপনাকে হোটেল রুমে পৌঁছে দিয়ে আসি। শাকিব অনেকটা নিরুপায় হয়ে ওই ভদ্র মহিলার প্রস্তাবে রাজি হয়ে হোটেল রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথে শাকিব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে অজ্ঞান হয়ে যান।

ঘটনার পরদিন সকালে মামলার আসামি রহমত তাকে ফোনে জানান, তুমি রাতে ওই মহিলার সঙ্গে কী করেছো সবকিছুর ভিডিও ক্লিপ আমার হাতে। তুমি যদি আমাকে এক লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাঁদা না দাও তাহলে আমি সব ভিডিও ক্লিপ ও অ্যানি রেনেসা সাবরিনকে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে তোমার নামে কমপ্লেইন করব এবং তুমি বাংলাদেশে যেতে পারবে না।

শাকিব বলেন, ‘এ রকম বিভিন্ন ভয়ভীতির একপর্যায়ে আমি ভয় পেয়ে যাই। তখন একটু চিন্তা করে দেখি, যেহেতু আমি অজ্ঞান ছিলাম, সেহেতু তার আমার সঙ্গে এমন কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে। ভয়ে তখন আসামিকে আমি বলি, আমার কাছে তো এত ডলার নেই। আমি তোমাকে এত টাকা দেব কীভাবে? আসামি তখন প্রতি উত্তরে জানায়, তুমি অনেক বড় লোক, তোমার অনেক টাকা আছে, টাকা না থাকলে বাংলাদেশ থেকে টাকা আনাও, যদি আমার দাবি করা ডলার পরিশোধ না করো তাহলে সব ভিডিও ক্লিপ আমি মিডিয়াতে দিয়ে দেব এবং ভিডিও ক্লিপসহ অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের কাছে অভিযোগ করবো। তাতে তোমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে।’

অভিনেতা বলেন, ‘তখন আমি ভয়ে এবং আমার ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক সমস্যার কথা চিন্তা করে আসামি রহমত উল্লাহকে ৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার দেই। এরপরেও আসামি আমাকে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি দেখালে এ পর্যন্ত বাংলাদেশি টাকায় তাকে মোট ৪০ লাখ টাকা চাঁদা হিসেবে দিয়েছি। আসামি চাঁদা চাওয়া অব্যাহত রাখলে পরবর্তীতে চাঁদা দিতে না পারায় আমাকে জানানো হয়, আমার নামে অস্ট্রেলিয়ায় অভিযোগ করা হয়েছে।’

‘আনুমানিক ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পুনরায় ওই ছবির শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া গেলে ওই অভিযোগের ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে জানান, মিস্টার খান ইট ইজ এ হানি ট্রেপ, সো বি অ্যাওয়ার ইয়োর সেলফ ফ্রম দ্যাম।’ শাকিব বুঝতে পারেন আসামি মিথ্যা ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তিনি বলেন, তারপর থেকে আসামিকে চাঁদা দেয়া বন্ধ করে দিলে আসামি রহমত উল্লাহ বিভিন্ন জায়গায়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং তার পরিবারের সদস্যদের কাছে আমার নামে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটাতে থাকেন।’