শর্ত না মানা পলিটেকনিকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড

295

যেসব বেসরকারি পলিটিকনিক ইন্সটিটিউট নির্ধারিত সময়ের পরও নিজস্ব জমিতে ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করেনি ওসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। ওসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেজন্য ৮৭টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। ইতঃপূর্বে ২০১৩ সালে এক মাস সময় বেঁধে দিয়ে একই ধরনের নোটিশ দেয়া হলেও জবাব পায়নি বোর্ড। এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে ওসব প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের স্বীকৃতি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও মান রক্ষার জন্যই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে ৪৬১টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থাকলেও প্রায় সবারই নাজুক অবস্থা। প্রথম সারির ৩০-৩৫টি বাদ দিলে বাকি ৪ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারপরও নতুন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন থেমে নেই। বোর্ড ও বেসরকারি পলিটেকনিকের একটি সিন্ডিকেট নানা সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে। ওই কারণে ওসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার। সর্বশেষ নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার ব্যর্থতায় স্বীকৃতি/পাঠদান কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে এক মাসের মধ্যে জবাব চেয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে ৮৭ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে শোকজ করা হয়। তার মধ্যে মাত্র ৩৬টি প্রতিষ্ঠান জবাব দিয়েছে। ইতোমধ্যে যারা জবাব দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর যারা জবাব দেয়নি তাদের অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, কারিগরি বোর্ড থেকে ৮৭টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে ২০ মার্চ নিজস্ব জমিতে যাওয়ার জন্য আপনাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি তার জবাব পাওয়া যায়নি। যা ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রম পরিচালনার নীতিমালা ৩৫.৩ ধারার পরিপন্থী। এই অবস্থায় কেন আপনার প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের অনুমতি স্থগিত বা বাতিল করা হবে না তার জবাব দিতে হবে। এই জবাব দেয়ার জন্য এক মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়। নিজস্ব জমিতে না যাওয়ার কারণ হিসেবে আর্থিক সমস্যা, নিজস্ব জমিতে গেলে শিক্ষার্থী না পাওয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপের কথা বলা হয়েছে মালিকদের পক্ষ থেকে। অথচ নির্ধারিত এক মাসে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান জবাব দেয়নি। যারা জবাব দিয়েছে তাও সন্তোষজনক নয়। এমন অবস্থায় বেসরকারী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা বজায় রাখতেই ওসব প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি সাময়িক স্থগিত করতে পারে বোর্ড।
সূত্র আরো জানায়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেও নীতিমালা অনুযায়ী একটি পলিটেকনিকের জন্য ১৫০ থেকে ২শ’ বর্গফুট বিশিষ্ট ৯টি সাধারণ কক্ষ, প্রতিটি টেকনোলজির জন্য ৪টি শ্রেণীকক্ষ, শিক্ষকদের বসার জন্য দুটি পৃথক কক্ষ, পদার্থ ও রসায়নের জন্য ২শ’ বর্গফুটের জন্য ২টি পৃথক কক্ষ থাকতে হবে। তাছাড়া সিভিল/আর্কিটেকচার কোর্সের জন্য ৪০০ থেকে ৬শ’ বর্গফুটের ১০টি ল্যাবরেটরি/ওয়ার্কশপ, মেকানিক্যাল টেকনোলজির জন্য ৪শ’ থেকে ৬শ’ বর্গফুটের ৮টি, ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজির জন্য ৬টি, ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজির জন্য ৫টি, কম্পিউটার টেকনোলজির জন্য ৬টি, পাওয়ার টেকনোলজির জন্য ৫টি পৃথক ল্যাবরেটরি/ওয়ার্কশপ থাকতে হবে।
এদিকে এ বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের উপপরিদর্শক বিজয় কুমার ঘোষ জানান, নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার তাগাদা দেয়ার কারণ কারিগরি শিক্ষার মান রক্ষা করা। সরকার এই শিক্ষাকে এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে কারিগরিতে ভর্তির হার ২০ ভাগের বেশি করার জন্য কাজ করছে। আমরা চাই ভর্তির হার বাড়ার পাশাপাশি মানও যেন ঠিক থাকে। কিন্তু এখানে কিছু বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মান রক্ষা করা যাবে।
অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অনুমতি দেয়ার সময় শর্ত ছিল ওসব প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে নিজস্ব জমিতে ক্যাম্পাস স্থানান্তর করবে। কিন্তু অধিকাংশই তা করেনি। একাধিকবার তাদের নোটিশ দিয়েও নিজস্ব ক্যাম্পাসে নেয়া যায়নি। সর্বশেষ তাদের শোকজ করা হয়েছে। তাও অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শোকজের জবাব পর্যন্ত দেয়নি। এভাবে তাদের চলতে দেয়া যায় না।