শত বছর বয়সেও প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা বিয়ার
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধান ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট পল বিয়া (৯২)। তিনি চলতি বছরের নির্বাচনে অষ্টম মেয়াদের জন্য প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ১২ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি শতবর্ষ ছুঁইছুঁই বয়সেও দেশটির ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। রবিবার (১৩ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “‘আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব, আপনারা নিশ্চিত থাকুন জাতি যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি আমি তা দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করব।” সোমবার (১৪ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চার দশকেরও বেশি সময় আগে ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে আহমেদো আহিদজো পদত্যাগ করলে ১৯৮২ সালে ক্ষমতায় আসেন বিয়া। তার স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই জল্পনা-কল্পনা চলছে। সর্বশেষ গত বছরে তিনি ৪২ দিনের জন্য জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। তবে তার পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত ছিল। রবিবার পল বিয়া আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার আগে, বেশ কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয় ছিলেন। ২০১৮ সালে, প্রথমবারের মতো, তিনি সেই বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেছিলেন, যা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জনসাধারণের সঙ্গে একটি বিরল সরাসরি যোগাযোগ ছিল। ক্ষমতাসীন ক্যামেরুন পিপলস ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (সিপিডিএম) নেতাকর্মীরা এবং তার সমর্থকরা গত বছর থেকে প্রকাশ্যে বিয়ার আরেক মেয়াদে প্রার্থী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। কিন্তু বিরোধী দল এবং কিছু নাগরিক সমাজের গোষ্ঠী যুক্তি দিচ্ছে যে তার দীর্ঘ শাসন অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এরই মধ্যে দুই মিত্র ক্ষমতাসীন জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে এবং আলাদাভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। ক্যামেরুনের মানবাধিকার আইনজীবী নংহো ফেলিক্স আগবর সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, “প্রেসিডেন্ট বিয়ার আবারো প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা ক্যামেরুনের স্থবির রাজনৈতিক পরিবর্তনের স্পষ্ট লক্ষণ। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পর দেশটির যা প্রয়োজন তা হল পুনর্নবীকরণ, পুনরাবৃত্তি নয়। ক্যামেরুনবাসী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন এবং জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব পাওয়ার অধিকার রাখে।” রবিবার বিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে নতুন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা নিশ্চিতভাবেই তার স্বাস্থ্য নিয়ে বিতর্ক পুনরুজ্জীবিত করবে। তিনি খুব কমই জনসমক্ষে উপস্থিত হন এবং প্রায়ই তার কার্যালয়ের ক্ষমতা শক্তিশালী চিফ অফ স্টাফের (সেনাপ্রধান) কাছে দায়িত্ব অর্পণ করেন।
ক্যামেরুন ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মাত্র দুজন প্রেসিডেন্ট পেয়েছে। আফ্রিকান কোকো ও তেল উৎপাদনকারী এই দেশটিকে বিয়ার দীর্ঘ শাসনামলে অর্থনৈতিক সংকট, বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতা ও উত্তরাঞ্চলে বোকো হারাম জঙ্গি হামলার মতো নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ২০২৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী বিরোধী নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।তাদের মধ্যে রয়েছেন ২০১৮ সালের ক্যামেরুন রেনেসাঁ আন্দোলনের রানার-আপ মরিস কামটো, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের জোশুয়া ওসিহ, ক্যামেরুন পার্টি ফর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশনের আইনজীবী আকেরে মুনা ও ক্যাব্রাল লিবি। তারা সবাই বিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দীর্ঘ শাসনামলের সমালোচনা করেছেন এবং ২০২৫ সালে সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।