01713248557

sm@radiomahananda.fm

LIVE

লম্বা শুস্ক মৌসুমের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে কাঙ্খিত বৃষ্টি,আম ও ধানের জন্য আশীর্বাদ

আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুরু হয়েছে আমের নতুন মৌসুম। বেড়ে উঠছে গুটি। গাছ পরিচর্যা চলছে জোরেশোরে। এদিকে ইরি-বোরো ধানও মাঠে বেড়ে উঠছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের পর দীর্ঘদিন উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অর্থাৎ প্রায় অনাবৃষ্টির পর গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিক থেকে আজ ভোররাত পর্যন্ত থেমে থেমে কখনও হালকা আবার কখনও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে জেলায়। জেলার দুই বৃহত্তম উপজেলা সদর ও শিবগঞ্জে গড়ে ৫ মি.মি করে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে কৃষি বিভাগ। জেলার অন্য তিন ্উপজেলা গোমস্তাপুর, নাচোল ও ভোলাহাটে ছিটেফোটা বৃষ্টি হয়েছে। বজ্রসহ বৃষ্টি হলেও ঝড় বা শিলাবৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন দিনে চৈত্র্যর তীব্র ক্ষরাক্রান্ত জেলাবাসী ও কৃষকরা।
এদিকে পরিবর্তিত আবহাওয়ায় ফাল্গুণের পর চৈত্র মাসের প্রথম ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত রাতে,ভোরে ও সকালে শীতল আবহাওয়া বিরাজ করেছে। ভোওে কখনও পড়ে কুয়াশা। এমতাবস্থায় বৃষ্টিতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তাঁরা আশা করছেন আবহাওয়ার এই অবস্থা এখন কেটে যাবে। বাম্পার ফলন হবে আম ও ধানের ।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়,জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমির ৮১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪০টি আমগাছের ৯২ শতাংশে মুকুল আসার পর গুটি বেশ বড় হয়েছে। আমের জন্য চলতি মৌসুমের আবহাওয়া শুরু থেকেই যথেষ্ট অনুকুল বলছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই। মৌসুমে শীতের তীব্রতা কম থাকায় বেশিরভাগ মুকুল এসেছে আগাম ও সময়মত। চলতি মৌসুমের ডিসেম্বরে জেলার সর্বনি¤œ গড় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস হলেও জানয়ারী থেকে তা ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
তারা আরও জানায়, চলতি বছর হেক্টর প্রতি ১০.৩ মে.টন হিসেবে ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ২৯০ টন আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই আরও বেশী উৎপাদনের ব্যাপারে আশাবাদী। গত মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল সাড়ে ৩ লক্ষ টন ও উৎপাদন হয় ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার ২৭৮ টন। গত মৌসুমে ৭৩ থেকে ৭৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। গত বছর ২০২৪ সালে ১৩৩ টন আম রপ্তানী হয়েছে মূলত: ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে। এর আগের বছর ২০২৩ সালে হয়েছিল ৩৭৬ টন। তবে এবার রপ্তানীর পরিমাণ বাড়বে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ ও ব্যবসায়ীরা। তাজা আম রপ্তানীর সাথে প্রক্রিয়াজাত আম রপ্তানী বাড়াতে হবে।

এদিকে জেলায় ৫১ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে ইরি আবাদের লক্ষ্য থাকলেও বরেন্দ্র এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশংকাজনক হারে নেমে যাওয়ায় সেচের দায়িত্বে থাকা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সদর, নাচোল ও গোমস্তাপুর এলাকায় তাদের সেচের আওতাধীন আংশিক এলাকায় ধান চাষ নিরুৎসাহিত করে। উৎসাহিত করা হয় গম,সরিষা,মসুর,বুট,ধনিয়ার মত ফসল ও সব্জি। ফলে ধান চাষ কমে হয়েছে ৪৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি ৪.৬৭ টন হিসেবে ২ লক্ষ ২২ হাজার ৮৯৯.১ টন উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। ধানের দানা শক্ত হয়ে এসেছে। এ মাসের শেষ থেকেই শুরু হবে আগাম ইরি কাটা। অপরদিকে ৩৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আউশ রোপনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন কৃষকরা। মাসখানেকের মধ্যেই আউশ রোপন শুরু হবে। এখন মাঠে রয়েছে ভুট্টা,মুগ,তিল,হলুদের মত ফসল ও সব্জি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন, হালকা বৃষ্টি হলেও এ সময় তা আম-ধানসহ সকল ফসলের জন্য উপকার বয়ে আনবে। আপাতত: আম ও ধান চাষে বড় সমস্যা নেই।
আম চাষী সদর উপজেলার রামকৃষ্টপুর গ্রামের মো.মন্টু হাজী (৬৩) ও বিদিরপুর গ্রামের বিষু মিয়া(৬০) বলেন, গুটি ঝরার মুখে বৃষ্টির পর কয়েকদিন আর কোনও ফসলে কোনরুপ বালাইনাশক দিতে হবে না। আমের বোঁটা শক্ত হবে। আম ঝরা কমে যাবে। আম বৃদ্ধির হার বাড়বে। আকার-আকৃতি ভাল হবে। প্রকৃতির ক্ষতিকারক পোকামাকড় আক্রমন কমে আসবে। তবে গাছের গোড়ায় সেচের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে জানান তাঁরা। এদিকে আম সংশ্লিস্টরা আমের নায্য মূল্যের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সদর উপজেলার গহিলবাড়ি গ্রামের ধানচাষী আব্দুল মান্নান( ৬০) বলেন, ঝড় ও শিল ছাড়া যেটকু বৃষ্টি হয়েছে তাতেই অনেক উপকার হবে। দিন দিন সেচের পানি সংকট বাড়ছে। এমন অবস্থায় বৃষ্টির পানি খবই দরকারি ছিল।