রোহিঙ্গা সংকটে ভয়াবহতার মাত্রা খুবই তীব্র : সাইমন হেনশ

399

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালানো শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্য ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক দফতরের ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী সাইমন হেনশ’ বলেছেন, তিনি রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখে খুবই বিস্মিত এবং এই ভয়াবহতার মাত্রা খুবই তীব্র। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর শেষে তিনি মন্তব্য করেনএ হেনশ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অবস্থা খুবই করুণ। আমরা শরণার্থী শিবিরে যা দেখতে পেয়েছি তা খুবই ভয়াবহ।’ হেনশ বলেন, ‘এই পরিস্থিতি খুবই কঠিন। তারা অনেক দুর্দশায় রয়েছেন। অনেক শরণার্থী তাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার গল্প বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছেন। তাদের মুখে আমরা জানতে পারি, কিভাবে তাদের সামনে কাছের মানুষদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে পালিয়ে আসার সময়ও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’ এই বিভীষিকার পরও অনেকে দেশে ফিরে যেতে চেয়েছেন। তবে সেজন্য নিরাপত্তা ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন। হেনশ জানান, তিনি এবং হেদার নরেট রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হেদার নরেট প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছিলেন। সাবেক এই সাংবাদিক নিজ চোখে দেখে গেলেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভয়াবহতা। তিনি বলেন, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা এই শরণার্থীদের কথা শুনে আমরা নিজেরাই সীমান্তে যাই। আমরা যেদিন ছিলাম সেদিনই ২ হাজার শরণার্থী আসে। তাদের সবাই শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।’ শরণার্থীদের ছোট একটি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। নরেট বলেন, ‘আমি অনেক নারী, বৃদ্ধ ও শিশুকে বাস থেকে নামতে দেখি। তাদের কারও পায়ে জুতাও ছিলো না, কারও কাছে শুধু পানি রাখার একটি পাত্র ছিলো।’ তিনি বলেন, একজন নারীর খুবই অল্পবয়সী শিশু দেখলাম, হয়তো একমাস বয়স হবে। যাত্রাপথে প্রায় মারাই গিয়েছিলেন তিনি। অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে বাস থেকে কোলে করে নামাতে হয়েছে। আমরা দেখলাম রেডক্রস সহ অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাগুলো খুবই নিবিড়ভাবে তাদের যতœ নিচ্ছে। ছোট শিশুদের অস্থায়ী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো।’ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, তিনি বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন। বাংলাদেশ তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে দারুণ আচরণ করছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তাদের হৃদয়ের দুয়ার খুলে দিয়েছে। ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে তারা। তারা হয়তো বাড়িতে নেই। তবে তারা নিরাপদে আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে হেনশ বলেন, সফরের সময় তিনি ক্যাম্পগুলোতে ঘুরে হত্যাযজ্ঞের আলামত পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু আমি যা দেখেছি তাতে বিস্মিত। হত্যাযজ্ঞের কথা শুনেছি আমি।’ তার দেওয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা করবে পররাষ্ট্র দফতর। এরপর মিয়ানমারের নিধনযজ্ঞ নিয়ে ব্যবস্থা নেবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনাম রেড ক্রস, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, ইউনিসেফসহ সব সহযোগীদের সাথে নিয়ে এই সংকট মোকাবিলা করা হচ্ছে।
হেনশ বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই প্রতিকূলে। অনেক কাজই করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিকেই এই সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে অর্থায়ন করেছিলো। আমাদের পর বাকিরাও এগিয়ে এসেছে।’ তিনি বলেন, আরও অনেককিছু করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এখনও তাদের অবস্থানে অটল। একইসঙ্গে বাকিদেরও এই সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। তার মতে, মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে সেটা একদমই প্রাথমিক পর্যায়ে। হেনশ বলেন, আমাদের চন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে শরণার্থীরা শুধু দেশেই ফিরে যাবে বরং তারা তাদের গ্রামে ফিরে গিয়ে তাদের জমি ফিরে পাবে। কারণ তাদের বাড়িগুলো সব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ফসল নষ্ট করা হয়েছে।