রেকর্ড গড়ে জিতল বাংলাদেশ

228

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে দুই শতাধিক রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড হাতেগোনা কয়েকটি। আর এতো রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ছিল না বাংলাদেশের। কিন্তু শনিবার কলম্বোর আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ২১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় তুলে ইতিহাস গড়ল টাইগাররা। যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড।

শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেওয়া ২১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার ৫.৫ ওভারে ৭৪ রান তোলেন। তাদের এই জুটিই বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দেয়। এরপর মুশফিক, সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে রেকর্ড গড়া জয় ধরা দেয় বাংলাদেশের হাতে।
তামিম-লিটন ভালো সূচনা এনে দেওয়ার পর মুশফিক, সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে প্রয়োজনীয় রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তোলে বাংলাদেশ। তাতে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে টাইগাররা। এই জয়ের ফলে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে যাওয়ার পথটি এখনো খোলা থাকল বাংলাদেশের জন্য।

২১৫ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা রান পায়। উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ও লিটন ৭৪ রান তুলে জয়ের ভিত গড়ে দিয়ে যান। এরপর লিটন ১৯ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় ৪৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে আউট হন। সেখান থেকে সৌম্য সরকারকে সঙ্গে নিয়ে ৯.২ ওভারেই দলীয় শতরান স্পর্শ করেন তামিম। কিন্তু পরের বলেই আউট হয়ে যান দেশসেরা ওপেনার। যাওয়ার আগে ২৯ বলে ৬টি চার ও ১ ছক্কায় ৪৭ রান করে যান।
তৃতীয় উইকেটে মুশিফক ও সৌম্য ৫০ রান তোলেন। ১৪.২ ওভারের মাথায় দলীয় ১৫১ রানের সময় হাতখুলে মারতে শুরু করা সৌম্যও আউট হয়ে যান। ২২ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ রান করেন। সেখান থেকে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দলীয় সংগ্রহকে ১৯৩ পর্যন্ত টেনে নেন। জয়ের বন্দর থেকে ২২ রান দূরে থাকতে আউট হন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে চামিরার হাতে ধরা পড়েন তিনি। দারুণ দক্ষতায় বল তালুবন্দি করেন চামিরা। এরপর সাব্বির রহমান ডাক মেরে ফিরলেও মুশফিক একপ্রান্ত আগলে রেখে জয় তুলে নিয়ে মাঠ ছাড়েন। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান মাত্র ৩৫ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন।

ম্যাচসেরা হন মুশফিক। আর ইমার্জিং প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হন লিটন কুমার দাস।

তার আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামে শ্রীলঙ্কা। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৬ রান তোলেন গুনালিথাকা ও কুশাল মেন্ডিস। এরপর মুস্তাফিজের বলে বোল্ড হয়ে যান গুনাথিলাকা। ১৯ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৬ রান করে যান তিনি। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ৮৫ রান তোলেন কুশাল মেন্ডিস ও কুশাল পেরেরা। ১৪১ রানের মাথায় মেন্ডিস ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করে আউট হন। ৩০ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় করে যান ৫২ রান।

এরপর মাহমুদউল্লাহ এক ওভারে জোড়া আঘাত করেন। শানাকাকে ০ রানে ও চান্দিমালকে ২ রানে ফেরান। এরপর উপল থারাঙ্গাকে নিয়ে দলীয় সংগ্রহকে ২০০ পার করেন পেরেরা। দলীয় ২০৫ রানের মাথায় মুস্তাফিজ ফেরান পেরেরাকে। ৪৮ বলে ৮টি চার ও ২ ছক্কায় ৭৪ রান করে যান তিনি। যা টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ারে তার নবম হাফ সেঞ্চুরি। থারাঙ্গা শেষ পর্যন্ত অপাজিত থেকে ১৫ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩২ রান করেন। তাতে ৬ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় স্বাগতিকরা।

বল হাতে বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ৩টি, মাহমুদউল্লাহ ২টি ও তাসকিন আহমেদ ১টি উইকেট নেন।

জয়ের পর বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা সবাই ছুটে গেলেন মাঠে। বিশ্বজয়ের আনন্দে। রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচটা এর দুই বল আগেই ফিকে হয়ে গেছে। বাংলাদেশের জয় তখন নিশ্চিতই। তবু উদ্‌যাপনটা হলো অন্য রকম। সর্বশেষ এ মাঠেই বাংলাদেশ জিতেছিল। আবারও এ মাঠে জয়ের ধারায় ফিরল বাংলাদেশ। সেটিও ২১৫ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে। বাংলাদেশ এই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ২০০ রান পেরোল। এর আগে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ১৬৪ রান তাড়া করে জিতেছিল। আজ নতুন রেকর্ড গড়ল। তা শুধু নিজেদের রেকর্ড নয়, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এত রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড খুব বেশি নেই।

রান তাড়ায় চতুর্থ সর্বোচ্চ স্কোর এটি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২০০ বা এর বেশি রান তাড়া করে জেতার মাত্র দশম উদাহরণ।

জয়ী স্কোর লক্ষ্য প্রতিপক্ষ কবে
অস্ট্রেলিয়া ২৪৫/৫ ২৪৪ নিউজিল্যান্ড ১৬ ফেব্রু ২০১৮
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৩৬/৬ ২৩২ দক্ষিণ আফ্রিকা ১১ জানু ২০১৫
ইংল্যান্ড ২৩০/৮ ২৩০ দক্ষিণ আফ্রিকা ১৮ মার্চ ২০১৬
বাংলাদেশ ২১৫/৫ ২১৫ শ্রীলঙ্কা ১০ মার্চ ২০১৮
ভারত ২১১/৪ ২০৭ শ্রীলঙ্কা ১২ ডিসে ২০০৯
দক্ষিণ আফ্রিকা ২০৮/২ ২০৬ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১১ সেপ্ট ২০০৭
অস্ট্রেলিয়া ২০৫/৫ ২০৫ দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ মার্চ ২০১৬
ভারত ২০২/৪ ২০২ অস্ট্রেলিয়া ১০ অক্টো ২০১৩
নিউজিল্যান্ড ২০২/৫ ২০১ জিম্বাবুয়ে ১৪ ফেব ২০১২
দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০/৩ ২০০ ভারত ২ অক্টো ২০১৫