রহস্যময় হামলা : কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক কর্মী হ্রাস

288

তথাকথিত রহস্যময় ‘হামলার’ কারণে কিউবায় কূটনৈতিক উপস্থিতি অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে এনে নাগরিকদের দ্বীপদেশটিতে ভ্রমণে না যেতে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই রহস্যময় ‘হামলার’ কারণে হাভানায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস কর্মীরা শোনার ক্ষমতা হারাচ্ছেন, মাথা ঘোরা ও অবসাদের মতো লক্ষণে ভুগছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। গত শুক্রবার ওই দূতাবাসের অর্ধেকেরও বেশি কর্মীকে সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণেচ্ছু কিউবানদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য জরুরি কিছু সেবা অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের হাভানা দূতাবাস। নিরাপত্তা পদক্ষেপ হিসেবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এসব সিদ্ধান্তে সমস্যাটির বিষয়ে কিউবার তৎপরতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শুরু করা সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, “যে পর্যন্ত কিউবা সরকার কিউবায় থাকা আমাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারবে, আমাদের কূটনীতিকদের ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে আমাদের দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা জরুরি পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে।” ‘ভ্রমণ সতকর্তায়’ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “যেহেতু আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তাই ঝুঁকির মুখে আছে আর আমরা হামলার উৎস শনাক্ত করতে পারিনি, তাই আমরা বিশ্বাস করি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাও ঝুঁকিতে থাকতে পারে এবং এই কারণে তাদের কিউবা ভ্রমণে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।” যুক্তরাষ্ট্রের এসব সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় কিউবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ক প্রধান জোসেফিনা ভিদাল বলেছেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের আজকের এই সিদ্ধান্তকে হটকারী বলে বিবেচনা করছি এবং এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছি আমরা। কিউবার রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভিদাল বলেন, কী হয়েছে তা পরিষ্কার করতে কিউবা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার বিষয়ে ব্যগ্র আছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র কিউবার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ২১ জন কর্মী রহস্যজনকভাবে আহত হয়েছেন এবং তারা কানে না শোনা, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, অবসাদ, সজ্ঞানতার সমস্যা এবং ঘুমের ব্যাঘাতের মতো সমস্যার কথা জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে কোনো ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করে অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কিউবা সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের এক আইন প্রয়োগকারী কর্মকতা জানিয়েছেন, এফবিআইও ঘটনাটির তদন্ত করছে কিন্তু সমস্যার কারণ এখনও বের করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে দূতাবাস কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো ‘যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের বাসস্থান ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যেসব হোটেলগুলোতে বেশি থাকেন’ সেগুলোতেই ঘটেছে। তবে রহস্যময় এই ‘হামলায়’ কোনো পর্যটক আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়টির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ ঘটনার জন্য কে দায়ী তা যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা কিউবা সরকার, কেউই বের করতে পারেনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের ওই হামলা থেকে রক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে না পারার জন্য কিউবা সরকারই দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।