Site icon রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম

রমজানের শেষ মুহূর্তে মুমিনের করণীয়

বিদায়লগ্নে পবিত্র রমজান। রমজানজুড়ে মুমিন তাঁর সাধ্যমতো আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করেছে। এখন মুমিনের প্রত্যাশা হলো আল্লাহ যেন নিজ অনুগ্রহে তা কবুল করে নেন। এসব আমল যেন কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষী হয়, বিপক্ষে না দাঁড়ায়।
আমল কবুলের আশা রাখবে
আমল কবুল হওয়ারই প্রত্যাশা করবে। সে ভাববে, আল্লাহ যখন আমাকে তাঁর আনুগত্য ও ইবাদত করার তাওফিক দিয়েছেন, আমাকে এই কাজে সাহায্য করেছেন, তখন আশা করা যায়—তিনি আমার আমলগুলো কবুল করবেন। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা ছাড়া মৃত্যুবরণ না করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৮৭৭) ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) বলেন, সাহাবিরা নেক আমলকারী ব্যক্তিদের মৃত্যুর সময় উত্সাহ দিতেন, যেন তারা আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে। (ইবনু আবিদ দুনয়া, হুসনুজ জান্নি বিল্লাহ, পৃষ্ঠা ৪০)
সুধারণার পুরস্কার
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেছেন, আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক আমি (আচরণ করি)। আমি তার সঙ্গে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে আমি তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। যদি সে আমাকে মজলিসে স্মরণ করে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই; যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক বাহু অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে আসে হেঁটে, আমি তার দিকে যাই দ্রুত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪০৫)
সুধারণা আমল কবুলে সহায়ক
আল্লাহ আমলগুলো কবুল করবেন—এমন সুধারণা আমল কবুলে সহায়ক। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, সেই সত্তার শপথ, যিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহর প্রতি সুধারণার চেয়ে উত্তম কোনো কিছু বান্দাকে দেওয়া হয়নি। সেই সত্তার শপথ, যিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, বান্দা কোনো সুধারণা করলে আল্লাহ তা দিয়ে থাকেন। কেননা কল্যাণ আল্লাহরই হাতে। (ইবনু আবিদ দুনয়া, হুসনুজ জান্নি বিল্লাহ, পৃষ্ঠা ৯৬) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করো। তোমরা জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯)
আমল কবুলে আল্লাহর অঙ্গীকার
মহান আল্লাহ বান্দার নিষ্ঠাপূর্ণ আমলগুলো কবুলের অঙ্গীকার করেছেন। পবিত্র কোরআনে যা নানাভাবে বিবৃত হয়েছে। যেমন—
১. আল্লাহ প্রতিদান নষ্ট করেন না : বান্দা নিষ্ঠার সঙ্গে যথাযথভাবে আমল করলে আল্লাহ বান্দার প্রতিদান নষ্ট করেন না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে ও সত্কাজ করে—আমি তার শ্রমফল নষ্ট করি না, যে উত্তমরূপে কাজ করে।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৩০)
২. সুধারণা পোষণকারীর পথ সুগম করেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে, আল্লাহ তার পথ সুগম করে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা উপলব্ধি করেছিল যে আল্লাহ ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল নেই, তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন ছাড়া। পরে তিনি তাদের তাওবা কবুল করলেন, যাতে তারা তাওবায় স্থির থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৮)
৩. নেক আমলকারীর পথ সুগম করেন : যারা নেক আমল করে আল্লাহ তাদের পথ সুগম করেন। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং কেউ দান করলে, তাকওয়া অবলম্বন করলে এবং যা উত্তম তা সত্য বলে গ্রহণ করলে আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ।’ (সুরা : লাইল, আয়াত : ৫-৭)
৪. ডাকলে সাড়া দেন : বান্দার প্রতি আল্লাহর আরেকটি অঙ্গীকার হলো ডাকলে তিনি সাড়া দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬০)
৫. নেক আমলকারীর প্রতি অনুগ্রহ করেন : যে বান্দা নেক আমল করে আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর অনুগ্রহ সত্কর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৬)
বান্দার প্রতি আল্লাহর আচরণ
আল্লাহর প্রতি মুমিনের ধারণা সর্বাবস্থায় ইতিবাচক হওয়া আবশ্যক। কেননা আল্লাহ কল্যাণপ্রত্যাশীদের কল্যাণ দান করেন। ইমাম তাবারি (রহ.) লেখেন, ‘যে বান্দা তাঁর আনুগত্যের প্রতি আগ্রহী হয়, আল্লাহ তাকে দান করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর তাওফিক পেয়ে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে চায়, আল্লাহ তাকে তাওফিক দেন। আল্লাহ বান্দার প্রতি দয়ালু। সুতরাং তিনি তাওবা করলে তাকে শাস্তি দেন না, কেউ তাওবা ও ফিরে আসার ইচ্ছা করলে তাকে অপদস্থ করেন না এবং তার তাওবা প্রত্যাখ্যান করেন না।’ (তাফসিরে তাবারি : ৪/১৬৯)
আল্লাহর প্রতি মন্দ ধারণা পাপ
মহান আল্লাহর প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা পাপ। আল্লাহ এমন বান্দাদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘একদল জাহেলি যুগের অজ্ঞদের মতো আল্লাহ সম্পর্কে অবাস্তব ধারণা করে নিজেরাই নিজেদের উদ্বিগ্ন করেছিল এই বলে যে আমাদের কি কোনো অধিকার আছে? বলো, সব বিষয় আল্লাহর ইচ্ছাধীন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৪)
আমল কবুলে সুধারণাই যথেষ্ট নয়
আল্লাহর প্রতি সুধারণাই আমল কবুল ও পরকালীন মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়, বরং আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করাও আবশ্যক। যেন তিনি ভুলত্রুটি মার্জনা করে তা কবুল করে নেন। এ জন্য আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি, তবে তুমি আমাদের পাকড়াও কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৬) এ জন্য ইবরাহিম (আ.) কাবাঘর নির্মাণের পর দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই কাজ গ্রহণ করো, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৭)
হে আল্লাহ! আপনি অনুগ্রহ করে আমাদের সবার আমলগুলো কবুল করে নিন। আমিন।

Exit mobile version