রবিবার ইলা মিত্রের ৯৬তম জন্মদিন

64

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা ইলা মিত্রের ৯৬তম জন্মদিন রবিবার । ১৯২৫ সালের এই দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের বাংলার অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল। তাদের আদিনিবাস ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রামে। বাবার চাকরির সুবাদে বেড়ে ওঠা কলকাতা শহরে।
ইলা মিত্রের শিক্ষাজীবন বেথুন স্কুল ও বেথুন কলেজে। বেথুন কলেজ হতে ১৯৪৪ সালে বিএ পাস করেন। খেলাধুলায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন তিনি। ১৯৩৫-৩৮ সালে রাজ্য জুনিয়র অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়ন এবং ১৯৪০ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে প্রথম বাঙালি মেয়ে হিসেবে নির্বাচিত হন ইলা মিত্র। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে অলিম্পিক আসরটি বাতিল হয়ে যায়।
১৯৪৩ সালে হিন্দু কোড বিলের বিরুদ্ধে মহিলা সমিতির একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরহাটের জমিদার মহিমচন্দ্র মিত্রের ছোট ছেলে রমেন মিত্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বিয়ের পর স্বামীর নামের সঙ্গে মিল রেখে ইলা সেনের নামকরণ করা হয় ‘ইলা মিত্র’।
স্বামীর উৎসাহে ও সাহচার্যে বিপ্লবী এই নেতা নাচোলের তেভাগা আন্দোলনে যুক্ত হন ১৯৪৮ সালে। সেসময় তার নির্দেশে ফসলের এক-তৃতীয়াংশ এবং তিন আড়ির পরিবর্তে সাত আড়ি ফসল ভাগচাষিদের পাবার বিষয়টি চালু হয়। পরবর্তীতে তিনি সকলের কাছে ‘রানীমা’ হয়ে উঠেছিলেন।
১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি নাচোলের তেভাগা আন্দোলনের তীর্থভূমি চ-িপুর-কেন্দুয়ায় বিক্ষুব্ধ কৃষকদের হাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হলে আন্দোলনরতদের ওপর শুরু হয় পাশবিক অত্যাচার। ঘটনার পরপরই রমেন মিত্র ও মাতলা মাঝি কিছু আন্দোলনকারীদের নিয়ে ভারতে চলে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি ইলা মিত্র রহনপুর রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
নবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলে থাকা অবস্থায় অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হন ইলা মিত্র। ১৯৫৪ সালে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। সুস্থ হয়ে সেখানেই থেকে যান এবং ১৯৬২-১৯৭৮ সাল পর্যন্ত চারবার বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর কয়েকবার ঢাকা এলেও তার স্মৃতিবিজড়িত নাচোলে আসেন ১৯৯৬ সালের ৬ নভেম্বর, তেভাগা আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উদ্্যাপন অনুষ্ঠানে। পরদিন যান তার শ্বশুরবাড়ি এলাকা অর্থাৎ রামচন্দ্রপুরহাটে। এ-সময় তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।