যতদিন চাইবেন খেলে যাবেন মাশরাফি

664

অধিনায়ক হিসেবে বিকল্প নেই। বোলার হিসেবেও দলের সেরা পারফরমারদের একজন। মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে কোনো সংশয়ই নেই বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসানের। ওয়ানডে অধিনায়ককে নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই তার কাছে অবান্তর। বরং দিয়ে দিলেন ভবিষ্যতের সার্টিফিকেট। যতদিন চাইবেন, খেলে যাবেন মাশরাফি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাশরাফির ভবিষ্যত নিয়ে ক্রিকেট মহলের একটি অংশে গত কিছুদিন ধরেই চলছিল গুঞ্জন-আলোচনা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে ভারতের কাছে হারার পরই সংবাদ সম্মেলনে এক ভারতীয় সংবাদকর্মীর প্রশ্নে মাশরাফি বলেছিলেন, এখনও উপভোগ করছেন ক্রিকেট, চালিয়ে যেতে চান খেলা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এরপরও। সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফির ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন এবং বোর্ড প্রধানের উত্তরের জের ধরে ছড়িয়েছে বেশ বিতর্ক। এসব নিয়ে গত বৃহষ্পতিবার মাশরাফির সঙ্গে কথা বলেছেন বিসিবিপ্রধান। বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, সেখানেই মাশরাফিকে ভবিষ্যত নিয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন বোর্ড প্রধান। শুধু তাই নয়, ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য দল গোছাতেও বলা হয়েছে মাশরাফিকে। নিজেদের মধ্যে ঘরোয়া সেই আলোচনার বিষয়বস্তু এবার প্রকাশ্যে তুলে আনলেন বিসিবি প্রধান। বিতর্কটা ডালপালা ছড়ানো শুরু করা মাত্রই তা ছেঁটে দিলেন। জানিয়ে দিলেন মাশরাফির ওপর বোর্ডের আস্থা অগাধ। মঙ্গলবার বিসিবিতে সংবাদ সম্মেলনে আগের সেই প্রশ্ন আর নিজের উত্তরের ব্যাখ্যা দিলেন বিসিবি প্রধান। সেদিন আমি যেটা বলেছি, সেটা পরিষ্কার। আপনারা তো পুরোটা দেখান না (টিভিতে), একটা অংশ দেখান তো, এতে লোকে বিভ্রান্ত হয়। ওখানে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভারতের এমএস ধেনির উদাহরণ দিয়ে যে, ধোনি ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলবে না বলে এখনই ভারত তাদের নতুন অধিনায়ক এনেছে। বাংলাদেশে আমাদের সেই পরিকল্পনা আছে কিনা। আমি বলেছিলাম, এটার যে চিন্তা ভাবনা আছে, সেটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ টি-টোয়েন্টি। পরের বিশ্বকাপের কথা ভেবে যেটা আমরা করেছি। কিন্তু ওটার সঙ্গে ওয়ানডের কোনো সম্পর্ক নাই। ওয়ানডে নিয়ে, মাশরাফির অধিনায়কত্ব যাওয়া, না যাওয়া নিয়ে কথাই হয়নি। কিন্তু এমনভাবে সব জায়গায় প্রচারিত হচ্ছে, যেন মাশরাফিকে এখনই বাদ দেওয়া হচ্ছে, নতুন অধিনায়ক খোঁজা হচ্ছে। এরকম কোনো আলাপই হয়নি। হওয়ার কারণ নেই। নাজমুল হাসানের মতে, অধিনায়ক ও পারফরমার হিসেবে দেশের ক্রিকেটে মাশরাফির বিকল্প নেই। দুটি ব্যাপার মনে রাখতে হবে। প্রথমত, মাশরাফি শুধু একজন খেলোয়াড়ই নন। সে অধিনায়ক। তার যে দায়িত্বটি আছে, এই ভূমিকাটা সে যেভাবে সম্পন্ন করে যাচ্ছে এবং করে আসছে, বাংলাদেশে তার বিকল্প পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনো বিকল্প নেই তার এই ভুমিকা পালনের জন্য। সে যতটা সুন্দরভাবে করে আসছে। দ্বিতীয়ত আপনি যদি পারফরম্যান্সের কথা ধরেন, অবশ্যই পেস বোলার হিসেবে পারফরম্যান্সও তার অনেক ভালো। আমাদের যতজন ফাস্ট বোলার আছে, তার পারফরম্যান্স অনেক অনেক ভালো। বোর্ড প্রধানের মতে, ভবিষ্যতের ভাবনা কেবলই প্রক্রিয়াগত। মাশরাফির ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত বোর্ড ছেড়ে দিচ্ছে তার ওপরই। মাথায় চিন্তা-ভাবনা সবসময় থাকবে, সাকিব চলে গেলে কি হবে, মুশফিক না থাকলে কি হবে। এই চিন্তা তো আমাদের সবসময় থাকবেই। কিন্তু এমন একটা ভাব হচ্ছে যেন আজকেই বাদ দিয়ে দিচ্ছি মাশরাফিকে। যেটা ওর জন্য অস্বস্তিকর, আমাদের জন্যও অস্বস্তিকর পরিবেশ।
একটা কথা আজকে পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, ও যতদিন খেলতে পারবে, ততদিন ওকে বাদ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ সে শুধু খেলোয়াড়ই নয়, অধিনায়কও। ওর মত অধিনায়ক বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের সফলতম বোলারই শুধু নন, ২০১৪ সালে এই দফার অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর থেকে দেশের সফলতম বোলার মাশরাফি। এমনকি সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সেও সবচেয়ে ধারাবাহিক। গত বছর ছিলেন ওয়ানডেতে দেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। এ বছর মাশরাফির চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে একটি উইকেট বেশি নিয়েছেন কেবল মুস্তাফিজুর রহমান। আর অধিনায়ক মাশরাফি তো শুধু বাংলাদেশের বাস্তবতায় নন, বিশ্ব ক্রিকেটের বিচারেও দারুণ সফল। এর পরও মাশরাফিকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠছে দেখেই অবাক বিসিবি প্রধান। এসব প্রশ্ন এই সময়ে ওঠা উচিতই না। আমাদের সামনে আরও অনেক খেলা আছে। একটা বিকল্প যদি আমরা না পাই, তার আগেই যদি একটা খেলোয়াড়কে নিয়ে এসব প্রশ্ন হয়, তাহলে তার মনের ভেতর কী যেতে পারে! ওর কথা চিন্তা করে আমার নিজের ভেতরও তো একটা অস্বস্তি অনুভূত হয়। যদি ওর জায়গায় থাকতাম যে থাকছি কি থাকছি না, বাদ পড়ব কি পড়ব নাৃ। তো আমি যেটাই করি, আগে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলি। সেটাই হবে। যার কথা বলছি, সেই জানতে পারবে। মাশরাফিও তেমনি ভাবেই জেনে গেছেন, তার ওপরই ভরসা রাথছে বিসিবি। আশা করা যায়, আপাতত কিছুদিন অন্তত চাপহীনভাবে নিশ্চিন্তে খেলে যেতে পারবেন ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক’