মিউনিখে মহারণে মুখোমুখি ফ্রান্স-স্পেন
দেখতে দেখতে শেষের পথে ইউরো-২০২৪। ২৪টি দলের অংশগ্রহণে ১৪ জুন শুরু হয়েছিল ইউরোর এবারের আসর। এখন কেবল ৪টি দল টিকে আছে। তার মধ্যে আজ রাতে বিদায় নিবে একটি দল। বিদায়ের আগে প্রাণপণ লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স ও স্পেন। মিউনিখের সেই মহারণটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টায়। অবশ্য সেমিফাইনালের আগে ফ্রান্সের চিন্তার নাম গোল করতে না পারা। গ্রুপপর্ব থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত তারা ওপেন প্লেতে কোনো গোল করতে পারেনি। পোল্যান্ডের বিপক্ষে কেবল একটি গোল করেছে পেনাল্টি থেকে এবং সেটি করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এছাড়া অস্ট্রিয়া ও বেলজিয়ামের বিপক্ষে তারা দুটি আত্মঘাতী গোলে জিতেছিল। গ্রুপপর্বে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছিল। আর কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের সঙ্গে গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে জিতেছিল।
ফ্রান্স দলে তারকার অভাব না থাকলেও তারা এবার তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে ভক্ত-সমর্থক-দর্শকদের সন্তুষ্ট করতে পারছেন না। অবশ্য এই বিষয়টি মোটেও আমলে নিতে রাজি নন কোচ দিদিয়ের দেশম, ‘আপনি যদি আমাদের খেলা দেখে বিরক্ত হন, তাহলে অন্য খেলা দেখুন। সেটাই ভালো আপনার জন্য। আমাদের খেলা আপনার দেখতে হবে না। এটা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। এটা সবার জন্যই বেশ কঠিন।’ তবে ফ্রান্সের তুলনায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে স্পেন। তারা ইনিয়েস্ত-জাভি-রামোস-ক্যাসিয়াস-পুয়োল-পিকে-বুসকেটস-ভিয়াদের পর আরেকটি সোনালী প্রজন্ম পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ১২ বছর পর তারা আরও একটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠা এবং জয়ের অপেক্ষায় আছে।
এবারের আসরে স্পেনের তরুণ প্রজন্মের ফুটবলাররা বেশ ভালো পারফরম্যান্স করছে। তারা গ্রুপপর্বে ইতালি, ক্রোয়েশিয়া, জর্জিয়ার বিপক্ষে বড় জয় পেয়েছে। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে আয়োজক ও শিরোপা প্রত্যাশী জার্মানিকে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে এসেছে। এ যাত্রায় তারা পারফরম্যান্স দিয়ে মন ভরিয়েছে ভক্ত-সমর্থক ও দর্শকদের। তাতে করে ফুটবলপ্রেমীরা স্পেনের এই দলটিকে সোনালী প্রজন্মের সেই দলের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছে যারা ব্যাক টু ব্যাক তিন-তিনটি মেজর শিরোপা জিতেছিল। স্পেনের মিডফিল্ডার রদ্রি জানিয়েছেন, সোনালী প্রজন্ম হতে তাদেরকে লিগ্যাসি তৈরি করতে হবে। যেমনটা করেছিলেন ক্যাসিয়াস-ইনিয়েস্তা-জাভিরা, ‘আমরা এখন যে সোনালী প্রজন্মের কথা বলি তারা কিন্তু শুরুতে সোনালী প্রজন্ম ছিল না। সেটা করতে তাদেরকে নিজেদের একটি লিগ্যাসি তৈরি করতে হয়েছে। এমন একটি দল হয়ে উঠতে হয়েছে। আমাদেরকেও তেমন করতে হবে, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি দল হয়ে উঠতে হবে। নিজেদের লিগ্যাসি তৈরি করতে হবে। ফ্রান্সের বিপক্ষে খুবই কঠিন একটি ম্যাচ আমাদের। যারা বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি দল। তারা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিবে।’
ফ্রান্স ও স্পেন এ পর্যন্ত ৩৬ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। তার মধ্যে স্পেন জিতেছে ১৬টিতে। ফ্রান্সের জয় ১৩টিতে। ৭টি ম্যাচ হয়েছে ড্র। সবশেষ পাঁচবারের দেখায় দুইবার জিতেছে ফ্রান্স, দুইবার জিতেছে স্পেন। একটি ম্যাচ হয়েছে ড্র। বোঝাই যাচ্ছে আজও হাড্ডাহাড্ডি এক লড়াই হবে মিউনিখে। সেমিফাইনালের আগে জার্মানির বিপক্ষের ম্যাচে ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যান পেদ্রি। তাকে আর ইউরোতে পাবেন না লুইস দে লা ফুয়েন্তে। তার পরিবর্তে যিনি খেলছেন সেই দান ওলমো আছেন দারুণ ছন্দে। ফ্রান্সের বিপক্ষের ম্যাচে শুরু থেকেই হয়তো খেলবেন ওলমো। এছাড়া ফুয়েন্তের হাতে আরও একজন বিকল্প আছেন, নাম তার মিকেল মেরিনো। যিনি জার্মানির বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে গোল করে দলকে জিতিয়েছিলেন। নিষিদ্ধ হওয়া দানি কারবাহালের পরিবর্তে একাদশে আসবেন অভিজ্ঞ রাইটব্যাক জেসাস নাভাস। এদিকে ফ্রান্সের অবশ্য কোনো খেলোয়াড়ের নিষেধাজ্ঞা সমস্যা নেই। কোয়ার্টার ফাইনালে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সেমিফাইনালে ফিরেছেন আদ্রিয়েন র্যাবিয়ট। যিনি কোচ দেশমের বেশ প্রিয়ভাজন। সেক্ষেত্রে এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গার পরিবর্তে শুরুর একাদশে আসবেন র্যাবিয়ট। বেঞ্চে চলে যাবেন আঁতোয়ান গ্রিজমানও। ফ্রান্স তাদের আক্রমণভাগের ধার বাড়াতে একাদশে ঢোকাতে পারে ওসমানে দেম্বেলে ও মার্কাস থুরামকেও।
স্পেনের সম্ভাব্য শুরুর লাইনআপ:
সিমন, নাভাস, নাচো, ল্যাপোর্তে, কুকুরেলা, রদ্রি, ওলমো, ফ্যাবিয়ান, ইয়ামাল, মোরাতা ও উইলিয়ামস।
ফ্রান্সের সম্ভাব্য শুরুর লাইনআপ:
মাইগনান, কৌন্দে, উপামেকানো, সালিবা, হার্নান্দেজ, চৌমেনি, কান্তে, রাবিয়ট, দেম্বেলে, থুরাম ও এমবাপ্পে।