মানুষের কৃতকর্মের প্রতিফল শাস্তি ও পুরস্কার

605

দুনিয়া আখেরাতে ক্ষেতস্বরূপ। দুনিয়ার উপার্জনের বদলা মিলবে আখেরাতে। কোরআন-হাদিসে এ বিষয়ে প্রচুর দিক-নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও দুনিয়ায় মানুষ নিজেই নিজের ক্ষতি করে। মানুষ এটা জানে না যে, দুনিয়ায় যদি ভালো কোনো কাজ করে তাহলে তা নিজের জন্যই কল্যাণকর। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে সৎকাজ করছে, সে নিজের কল্যাণেই তা করছে। আর যে অসৎকাজ করছে, তা তার ওপরই বর্তাবে। এরপর তোমাদেরকে নিজ পালনকর্তার দিকেই ফিরে আসতে হবে।’ – সুরা জাসিয়া: ১৫
এ আয়াত ছাড়াও পবিত্র কোরআনের নানা অংশে এমন অর্থবোধক প্রচুর আয়াত রয়েছে। ওই সব আয়াতে সেসব ব্যক্তির প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে, যারা বলে আমাদের ইবাদতে আল্লাহর কি প্রয়োজন? আয়াতে বলা হয়েছে, মানুষের কোনো ধরনের কোনো ভালো কাজের মুখাপেক্ষী নন আল্লাহ। বরং সৎকাজ আমাদের উন্নয়ন ও পূর্ণতার জন্য জরুরি। আর মানুষ যখন পাপ ও অন্যায়-অনাচারে জড়িয়ে পড়ে তখন সে বিভ্রান্তির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে এবং এভাবে সে নিজের জন্য নানা ধরনের মন্দ পরিণতি বয়ে আনে।আয়াতে এটাও তুলে ধরা হয়েছে যে, খোদায়ি আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার ও শাস্তির যে ব্যবস্থা দেখা যায় তা পুরোপুরি ন্যায়-বিচারপূর্ণ। কারণ, মানুষের শাস্তি ও পুরস্কার তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল।সূরা জাসিয়ার ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ‘নভোম-ল ও ভূ-ম-লের রাজত্ব আল্লাহর। যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন মিথ্যাপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’বস্তুত আল্লাহতায়ালা বিশ্বজগতের সবকিছুর মালিক। তিনি এই জগতকে করেছেন পরকালের জন্য ক্ষেত্রতুল্য। তাই দুনিয়ার এই ক্ষেতে কেউ মিথ্যার আবাদ করলে, পরকালে সে এর পরিণামই ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন পুরোপুরি দেউলিয়া হবে মিথ্যাবাদীরা, মিথ্যার অনুসারীরা। কারণ তারা দুনিয়ার জীবন বৃথা নষ্ট করেছে এবং কোনো ধরনের ফায়দা হাসিল করা তো দূরের কথা বরং শুধু ক্ষতি ও দুঃখ কামাই করেছে।মানুষের আয়ু ও বুদ্ধিমত্তাসহ জীবনের জন্য আল্লাহর দেওয়া নানা উপকরণ- ইহকালে মানব জীবনেরই কিছু পুঁজি। যারা সত্যকে স্বীকৃতি দেয়নি তারা বিচার দিবসে নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে প্রত্যক্ষ করবে। তারা সেদিন বলবে, হায়! কিভাবে নিজের সর্বনাশ নিজেই করেছি। কিন্তু তখন আর কোনো লাভ হবে না।
এ সূরার পরে আয়াতে কিয়ামত দিবসের এক জীবন্ত চিত্র তুলে ধরে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রাসূল! সেদিন তথা কিয়ামতের দিন আপনি প্রত্যেক উম্মতকে দেখবেন নতজানু অবস্থায়। প্রত্যেক উম্মতকে তাদের আমলনামা দেখতে বলা হবে। তারা যা করতো তা তাদের কাছে বলা হবে বা তুলে ধরা হবে, আর বলা হবে যে, আজ তোমারদেরকে সেসব কাজের প্রতিফল দেওয়া হবে।’এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসলামি স্কলাররা বলেন, কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে সমবেত হবে সব মানুষ। তারা সেদিন আল্লাহর ন্যায়বিচারের দরবারে উপস্থিত হবে যাতে তাদের কর্মতৎপরতা, বিচার বিশ্লেষণ করা যায়। সেদিন মানুষেরা মহাআতঙ্কের কারণে নতজানু হয়ে থাকবে এবং হতভম্ব হয়ে পড়বে। যে আমলনামা তাদের দেওয়া হবে তাতে তারা দেখবে, তাদের ভালো ও মন্দ সব কাজ তথা নোংরা ও অশালীন কাজসহ ছোট-বড় সব কাজই রেকর্ড করা হয়েছে।তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বলা হবে, ‘আমাদের কাছে রক্ষিত এই আমলনামা তোমাদের সম্পর্কে সত্য কথা বলবে তথা তোমাদের কাজগুলোর বিস্তারিত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তুলে ধরবে। তোমরা যা করতে আমরা তা লিপিবদ্ধ করতাম।’