মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস পালিত

203

‘সুস্বাস্থ্যেই সুবিচার, মাদক মুক্তির অঙ্গীকার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে উদ্যাপিত হয়েছে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উদ্যোগে মানববন্ধন, র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর থেকে র‌্যালিটি বের হয়ে জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এসে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। র‌্যালিতে জেলার উন্নয়ন সংস্থা প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেবেন্দ্র নাথ উরাঁওয়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান খান, বিজিবির নায়েব সুবেদার আবু সাইদ, সংবাদকর্মী জাকির হোসেন পিংকু ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলামসহ অন্যরা।
র‌্যালি ও আলোচনা সভায় জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এনজিওসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আলোচনা সভা শেষে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
রচনা প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্রুপে সদর উপজেলার হরিপুর ১নং উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী বুশরা তাসনিম প্রথম ও একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. তাহাসিন আলম দ্বিতীয় এবং ভোলাহাটের বাচ্চামারী উচ্চ বিদ্যালয়ের মোসা. ইসরাত জাহান তৃতীয় হয়েছেন। ‘খ’ গ্রুপে নামোশংকরবাটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোসা. নূরজাহান খাতুন তামান্না প্রথম, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বাদশ শে্িরণর শিক্ষার্থী আবু সালেহ দ্বিতীয় ও একই কলেজের দ্বাদশ শে্িরণর শিক্ষার্থী মো. মুজাহিদ হাসান সিফাত তৃতীয় হয়েছেন।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার ‘ক’ বিভাগে ৯ বছর পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফ আহমদ রোহান দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী জারিন সায়মা। ‘খ’ বিভাগে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নূরে আশরাফি, দ্বিতীয় গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জুবাইদা নাহার ও তৃতীয় হয়েছেন ফুলকুঁড়ি একাডেমির তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইসা রহমান ¯েœহা। ‘গ’ বিভাগে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা রহমান হাসি, দ্বিতীয় গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনদ্বীপ কর্মকার ঐশিফ ও তৃতীয় হয়েছেন নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী দ্বিবা রানি।
এছাড়াও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার ‘ঘ’ বিভাগে অংশ নেয় প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোররা। সেখানে প্রথম হয়েছেন সুইড বাংলাদেশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার্থী শাওন, দ্বিতীয় জান্নাতুন ও তৃতীয় হয়েছেন মোছা. জোহরা খাতুন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, জীবন আমার, সিদ্ধান্তটা তাই আমারই, লাভ-লসও আমার। আমার মা-বাবা আমাকে সময় দেয় না তাই বলে কি আমি মাদক গ্রহণ করব? এটা কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হলো? আমার মা-বাবা যদি আমাকে সময় না দেয় তবে আমি আরো বেশি লেখাপড়া করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেব এবং বলতে পারব আমি তোমাদের সময় দেয়া ছাড়াই আমি আমার লক্ষে পৌঁছাতে পেরেছি। তিনি সকল অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, আমার ঘরে যদি মাদকাসক্ত কেউ থাকে তবে আমার সব অর্জন, সকল প্রাপ্তি ম্লান হয়ে যাবে। প্রত্যেকটা মানুষের সফলতার মাপকাঠি হচ্ছে তার পরিবারে অবস্থান। যার সন্তান যত ভালো অবস্থানে আছে তার পরিবারও তত ভালো অবস্থানে আছে। সবকিছুরই সাথে তাল মিলিয়ে আমরা সন্তানের লেখাপড়া, ভালো-মন্দটাকে গুরুত্ব দেব। সন্তানের জন্য কিছু সময় বের করে নিব। সন্তানের ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করার জন্য কিছুটা হলেও সময় দিব। এ সময় তিনি জেলা প্রশাসনকে মাদক ও ধূমপানমুক্ত করার কথা এবং ডোপ টেস্টে মাদক পেলে সরকারি চাকরি হবে না বলে জানান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতামুলক বার্তা তুলে ধরে বলেন, যদি আপনি ভয় পান তবে আপনি হেরে যাবেন। যারা ছাত্র আছ তারা কিন্তু হেরে যাবা। তোমাদের এখন প্রতিরোধ করার সময়। যদি বন্ধু মাদকাসক্ত হয় তবে বন্ধুকে বলতে হবে, এ কাজ করো না। সবাই মিলে যদি আমরা দায়িত্ব নেই তাহলে এ দেশকে মাদকমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এ সময় তিনি আরো বলেন, কোনো মাদকাসক্ত সরকারি কেনো চাকরি পাবে না। এরই মধ্যে সরকার ঘোষণা দিয়েছে, চাকরিতে ঢোকার আগে প্রত্যেকের ডোপ টেস্ট করা হবে এবং সেই টেস্টে মাদক পাওয়া গেলে তার চাকরি হবে না।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান খান তার বক্তব্যে বলেন, দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে সুস্বাস্থ্যেই সুবিচার, মাদক মুক্তির অঙ্গীকার। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বর্তমান সরকার মাদককে মানবতার ও আইনের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান এবং শান্তি উন্নয়ন ও প্রগতির অন্যতম অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করে মাদকের বিরুদ্ধে একটি নীতি ঘোষণা করেছেন এবং সে নীতিতে বর্তমান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমরা সবাই জানি যে, সামাজিক অপরাধ শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এজন্য আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে ব্যাপক সচেতনতার মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম বলেন, আমার কাছে এটা মনে হয় শুধু আলোচনা বা র‌্যালি করলেই হবে না। ব্যক্তি থেকে এ কাজটা আমাদেরকে করতে হবে। আমি আমার পরিবারকে ঠিক রাখব, আমি আমার বন্ধুদেরকে ঠিক রাখব। আমরা যদি মাদকদ্রব্যের কাছে না যাই তাহলে তো মাদক আমাদের কাছে আসতে পারবে না। সুমাইয়া আরো বলেন, এখানে তো অনেকেই আছে প্রত্যেকেই যদি তাদের বন্ধুদের মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ ছোবল থেকে বাঁচাতে পারে তাহলে তো চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদকের কোনো ছোঁয়ায় থাকবে না। আমরা সুস্থভাবে বাঁচতে চাই, সুন্দর একটি সমাজ চাই। আমরা যদি একটা সুন্দর সমাজ পাই অবশ্যই আমরা আপনাদের মতো অবস্থানে যেতে পারব।

গোমস্তাপুর : দিবসটি উপলক্ষে গোমস্তাপুর উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল র‌্যালি, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ। সকালে র‌্যালিটি উপজেলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে রহনপুর পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এক আলোচনা সভার মাধ্যমে শেষ হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব রায়হানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুমায়ুন রেজা। বক্তব্য দেন গোমস্তাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জসিম উদ্দিন।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুদ হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌসী বেগম, উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল বাশার শামসুজ্জামান প্রমুখ।
আলোচনা শেষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

ভোলাহাট : দিবসটি উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার সকাল ১০টার দিকে ভোলাহাট উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে একটি র‌্যালি উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
পরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা পারভিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রভাষক রাব্বুল হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান গরিবুল্লাহ দবির, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহানাজ খাতুন, ভোলাহাট থানার অফিসার ইনচার্জ নাসিরউদ্দিন মন্ডল, ভোলাহাট সদর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইয়াজদানী জর্জ, গোহালবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, দলদলী ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাজহারুল ইসলাম পুতুল, জামবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মশফিকুল ইসলাম তারা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সরদার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বরুণ কুমার পালসহ অন্যরা।