মর্যাদার সহিত পালিত হল মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস

236

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামাংকিত স্মৃতিফলক এবং জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করে সকাল ৮টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডা. আ.আ.ম. মেস্বাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) স্টেডিয়ামে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, বি-এন-সিসি, আনসার, গার্ল গাইডস, স্কাউটস, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিশু-কিশোর, যুব সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের অভিবাদন গ্রহণ এবং কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সারাদেশের সাথে একযোগে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে আমাদের গর্ব, আমাদের ঐতিহ্য এবং আমাদের অহংকারের প্রতীক জাতীয় পতাকা, শান্তির প্রতীক পায়রা, রংবেরংয়ের বেলুন, মহান স্বাধীনতার দিবসের ফেস্টুন উত্তোলন করা হয়। এবারে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন ৬৮টি প্রতিষ্ঠান এবং ডিসপ্লে তে অংশ নেন অংশ নেন ১৪টি প্রতিষ্ঠান।
কুচকাওয়াজে : ‘ক-গ্রæপ’ থেকে ১ম স্থান অধিকারী দল পুলিশ লাইন্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২য় স্থান অধিকারী দল এসএম হক আইডিয়াল স্কুল, ৩য় স্থান অধিকারী দল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাব দল। ‘খ-গ্রæপ’ থেকে ১ম হয়েছে মাসুদ উল হক ইনস্টিটিউট গার্লস গাইড দল, ২য় হয়েছে এমএম হক আইডিয়াল স্কুল গালর্স গাইডস দল, ৩য় হয়েছে গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয় সমন্বিত দল। ‘গ-বিভাগ’ থেকে ১ম হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইন রোভার্স দল, ২য় হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত রোভার্স গ্রæপ, ৩য় হয়েছে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ রোভার্স দল।
ডিসপ্লে-তে : ‘ক-গ্রæপ’ থেকে ১ম স্থান অধিকারী দল এম এম হক আইডিয়াল স্কুল কাব দল, ২য় স্থান অধিকারী দল সুইড বাংলাদেশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী দল, ৩য় স্থান অধিকারী দল ইম্পেরিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। ‘খ-গ্রæপ’ থেকে ১ম হয়েছে সরকারি শিশু পরিবার, ২য় হয়েছে ফুলকুঁড়ি আসর, ৩য় হয়েছে নামোসংকরবাটি উচ্চ বিদ্যালয় সমন্বিত দল। ‘গ-বিভাগ’ থেকে ১ম হয়েছে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ রোভার্স দল, ২য় হয়েছে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ বিএনসিসি দল, ৩য় হয়েছে ইম্পেরিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সুখ আর সমৃদ্ধির ভবিষ্যত গড়ার জন্য নতুন প্রজন্মকে এই দিনেই নিতে হবে দেশপ্রেমের দীক্ষা। নিজ দেশের প্রতি তোমাদের অবিচল ভালোবাসা আর সুদৃঢ় দেশপ্রেম আমাদের উন্নয়ন আর অগ্রগতির চালিকাশক্তি হবে, এটাই প্রত্যাশা। তোমাদের জন্য আজকের এই দিন হোক তোমাদের অনুপ্রেরণা আর দীপ্ত শপথ গ্রহণের উপযুক্তক্ষণ।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০১৯ উপলক্ষ্যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সম্মান সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হকের সভাপতিত্বে, বিশেষ অতিথি ছিলেন সদর আসনের সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ফেরদৌসি ইসলাম জেসি। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম বিপিএম পিপিএম, সাবেক চেয়ারম্যান ও বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব রুহুল আমিন এবং জেলা আইনজীবী বার সমিতির সভাপতি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা এ্যডভোকেট আব্দুস সামাদসহ অন্যরা।
সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেবেন্দ্রনাথ উঁরাও। এরপর বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান ও বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব রুহুল আমিন। এসময় তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কাজ করে দিচ্ছেন তা ভুলবার নয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নতুন নির্মাণাধীন মডেল ভবনটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এটি একটি সুখবর। তাই আমাদেরকেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম বিপিএম পিপিএম বলেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমার দরজা খোলা থাকবে তবে কোন দালালকে নিয়ে যাবেন না আপনারা। আপনি আপনার সাথে আপনার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নিয়ে যাবেন কিন্তু দালালকে ধরবেন না। বাইরে যে কোন দরখাস্ত লেখার জন্য আপনারা টাকা প্রদাণ করেন এর জন্য আপনাদের আর বাইরে লিখতে হবে না এবং টাকাও দিতে হবে না আপনার আমার অফিসে আসবেন আমার অফিস সহকারি আপনাকে বিনা পয়সায় দরখাস্ত লিখে দিবে। যখনি প্রয়োজন হবে আমরা পাশে আপনাদের থাকবো। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ফেরদৌসি ইসলাম জেসি বলেন অসাম্প্রদায়িক উন্নয়নশীল চাঁপাইনবাবগঞ্জ গড়ে তুলব আমরা। সোনার বাংলা গড়া প্রত্যয় নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করেছিলেন তার মূল লক্ষ্য ছিল ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। আমিও ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত অসাম্প্রদায়িক উন্নয়নশীল চাঁপাইনবাবগঞ্জ গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ। সবশেষে জেলা প্রশাসক এ জেডএম নুরুল হক বলেন এই সরকার মুক্তিযোদ্ধাবান্ধব সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এই সরকাজ কাজ করে যাচ্ছেন। এসময় তিনি আরো বলেন, আপনারা ৭১ সালে অনেক ত্যাগ শিকার করেছেন। ব্যক্তিগত সুখ বিসর্জন দিয়ে আপনারা যুদ্ধ করেছেন। শ্রম দিয়েছেন ঘাম দিয়েছেন রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করেছেন এটা পরবর্তী প্রজন্ম যেন শুনতে থাকে। আর এখন আমার এর সুফল ভোগ করছি। বড় বড় ব্যবসা করছি চাকরী করছি কিন্তু পাকিস্তান থাকলে আমরা এটা পেতাম না একশভাগ নিশ্চিত। এখনো ১০০ ভাগ মানুষ ক্ষুধা থেকে মুক্ত না। আমরা যেন আপনাদের অসমাপ্ত কাজটা শেষ করতে পারি এটা দোয়া করবেন। উল্লেখ্য, এসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৬ মার্চের ঘটনা তুলে ধরেন উপস্থিত অতিথিরা। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারসহ গনমাধ্যমকর্মীরা। ইসলামি ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আলোচনা সভা, দোয়াও মিলাদ মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত। ইসলামি ফাউন্ডেশনের আয়োজনে জেলা কার্যালয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা, দোয়াও মিলাদ মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকালে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা কামাল, আলোচক হিসেবে ছিলেন সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক ড. ইমদাদুল হক এবং সভাপতি হিসেবে ছিলেন ইসলামি ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক আবুল কালাম। দেশের শান্তি ও কল্যাণে মিলাদ মাহ্ফিলে মোনাজাত করেন মহাডাঙ্গা জামে মসজিদের ইমাম ময়েজ উদ্দিন। বিভিন্ন মসজিদ থেকে আসা ইমামগণ এ দোয়ায় অংশ নেন।

এদিকে, গোমস্তাপুরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত হয়েছে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রথম প্রহরে উপজেলা পরিষদ চত্তরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণের করেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাইরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিহাব রায়হান, গোমস্তাপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুর রহমান, থানার অফিসার ইনচার্জ জসিমউদ্দিনসহ সরকারী কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভা ও স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।