মন্দা শেয়ার বাজারেও দুর্বল কোম্পানির দাপট

87

দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এখন ৬ হাজার পয়েন্টের মনস্তাত্ত্বিক সীমা ভেঙে নিচে নেমে এসেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। কিন্তু বাজারের এ অবস্থা কেন? চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘ফ্লোরপ্রাইস’ প্রত্যাহারের পর বাজারে সূচক ও লেনদেন দুইই বাড়তে থাকে। কিন্তু জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই সময় ভালো কোম্পানির চেয়ে মন্দ কোম্পানির শেয়ারের দরই বেশি বেড়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক বন্ধ কোম্পানির শেয়ার দরও কারসাজি করে বাড়ানো হয়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ারদর এখন কমতে শুরু করেছে। একই সময়ে দেশের শেয়ার বাজারে ভালো কোম্পানি হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দরও কমেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, বাজার নিয়ে নানা গুজব। বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে একটি চক্র বাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। যার প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগকারীদের ওপর। টানা পাঁচ সপ্তাহ ধরে বাজারে দরপতন হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীরা বলেন, গত কিছুদিন ধরে বাজারে লেনদেনে যেসব কোম্পানি দাপট দেখিয়েছে, তার অধিকাংশই মন্দ কোম্পানির শেয়ার। ফলে বাজারে যে বড় দরপতন হবে-এটা ছিল শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। মন্দ ও বন্ধ কোম্পানির ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত ছিল। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদায়ি সপ্তাহের সর্বশেষ কার্যদিবসে লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানির মধ্যে সাতটিই মন্দ কোম্পানি। একই লেনদেন চিত্র অন্যান্য দিনগুলোতেও। এসব কোম্পানির শেয়ার দর এখন কমতির দিকে। গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪৪ দশমিক ৭২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৪১ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট। তার আগের তিন সপ্তাহে প্রধান সূচকটি কমে যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৪২ পয়েন্ট, ৬২ দশমিক ৩০ পয়েন্ট এবং ৩৭ দশমিক ১০ পয়েন্ট। অর্থাৎ পাঁচ সপ্তাহের ব্যবধানে সূচকটি কমেছে ৪০৫ দশমিক ৩২ পয়েন্ট। এছাড়া, বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৪২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট। আর ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ৩৬ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি বিদায়ি সপ্তাহে লেনদেনও কমেছে। বিদায়ি সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৭৯৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন কমেছে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনকৃত মোট কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৬৯টির, কমেছে ৩০১টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টির দর। যার প্রভাব পড়েছে ডিএসইর বাজার মূলধনের ওপর। গত এক সপ্তাহেই ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। বিএসইসির সঙ্গে ডিএসইর দ্বন্দ্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও গুজব। ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা বাজারের সার্বিক স্বার্থে কাজ করি। ডিএসইর সাথে আমাদের কোনো দূরত্ব নেই। কমিশন এবং এক্সচেঞ্জ পুঁজিবাজারের জন্য একই উদ্দেশ্যে নিয়ে কাজ করে।