মক্কা জাদুঘর ও কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা

764

কাবা শরিফের কাছেই মক্কা জাদুঘর। জাদুঘরটিতে প্রবেশে কোনো টিকিট কাটতে হয় না। তবে একটা অদ্ভুত নিয়ম আছে। জাদুঘরটি আপনাকে দেখতে হবে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে।
একদিন দুপুরে জাদুঘরটি দেখতে যেয়ে ফিরে আসতে হয়। ‘ইয়া সাদিক, ইয়া হাবিব’- বলে অনেক ঘাইগুই করে দ্বাররক্ষীর মন গলাতে পারলেও বড় বাবুর মন গলাতে পারলাম না। অগত্য ফিরে আসতে হলো। না জানার কারণে আমাদের মতো অনেকেই দিনে জাদুঘরটি দেখতে এসে ফিরে যান। মজ্জা জাদুঘরে সময় দেখার ঘড়িসহ ইসলামের প্রাচীন নিদর্শন। ছবি: মুফতী এনায়েতুল্লাহ। তবে দিনে জাদুঘরটি বন্ধ থাকে এমন নয়, দিনের বেলায় বড় বড় কাফেলা নিয়ে গেলে দেখার সুযোগ মেলে। আর সন্ধ্যায় একক কিংবা দুই তিনজনের ক্ষুদ্র দলের। সন্ধ্যায় অনুমতি নেই বড় কাফেলা নিয়ে প্রবেশের। মক্কা জাদুঘরে সৌদি আরবের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের বেশি কিছু নেই বললেই চলে। যা আছে, তার সবই কাবাকেন্দ্রিক। তবে সৌদি আরবের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরিচ্ছদ, আসবাব, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদির কিছু নমুনা এখানে আছে। দেখতে পারবেন প্রাচীন ধাতব মুদ্রার সামান্য সংগ্রহ। হাজরে আসওয়াদ এর জন্য বিশেষ কাঠামো। ছবি: মুফতি এনায়েতুল্লাহ বস্তুত মক্কা মিউজিয়াম হলো, কাবা শরিফ ও মসজিদে নববীর বর্তমান রূপের আগে বিশেষ করে তুর্কি আমলের ব্যবহৃত জিনিপত্রের সংরক্ষণাগার। জাদুঘরে প্রবেশের মুখে রাখা হয়েছে ২০৫০ সাল নাগাদ বর্তমান সৌদি সরকারের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেমন হবে মসজিদে হারাম ও মক্কার অবয়ব- তার একটি রেপ্লিকা। তদ্রƒপ জাদুঘরের ভেতরেও রয়েছে মদিনার মসজিদে নববীর ভবিষ্যত রূপের একটি রেপ্লিকা। কাবার গিলাফ তৈরির পুরনো যন্ত্র। জাদুঘরে রয়েছে ১২৯৯ হিজরি সনে জমজম কূপ থেকে পানি উত্তলনের পুরনো যন্ত্রপাতির সংগ্রহ। এখানে পুরনো আমলের হাতে লেখা পবিত্র কোরআনের অনেকগুলো কপি আছে। সুন্দর কারুকাজ এবং বিভিন্ন ডিজাইনের লেখা স্বর্ণ ও রুপার রংমিশ্রিত কালিতে লেখা এসব কোরআনের কপির কোনোটি ৩৮১ হিজরি সনের, আবার কোনোটি ৬৮৫ সনের। তবে মক্কা জাদুঘরের সবচেয়ে দামী সংগ্রহ হলো- হজরত উসমান (রা.)-এর আমলের হাতে লেখা কোরআন- মাসহাফে উসমানির একটি কপি। মক্কা জাদুঘরে রয়েছে মসজিদে হারাম কিংবা কাবার ঘরের স্থাপনায় বিভিন্ন সময়ে আরবি আয়াত উৎকীর্ণ পাথর খ-, বেশ কিছু ক্যালিওগ্রাফি, মুসলিম ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর অনেক নমুনা। হাতে লেখা পুরনো কোরআন। ছবি: মুফতি এনায়েতুল্লাহ। কাবা ঘরে ব্যবহৃত দু’টি কাঠের দরজা, ৯৬৬ হিজরি সনে অটোম্যান শাসক সুলতান সোলাইমান বিন সালিম খানের দেওয়া কাবার দরজার বিশেষ নকশা, মাকামে ইবরাহিমের নমুনা, আগের দিনের মিনারের ডিজাইন, ১৪০৪ হিজরি সনে ব্যবহৃত কাবার অভ্যন্তরের কাঠের বাক্স, কাবার দরজার গিলাফ, হাতে কাবার গিলাফ বুননের যন্ত্র, আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের কর্তৃক নিমিত ৬৫ হিজরি সনে ব্যবহৃত কাবার ভেতরে ব্যবহৃত কাঠের খুঁটি, হাজরে আসওয়াদ সংরক্ষণের জন্য বানানো বিশেষ ফ্রেম, কাবার ছাদের পানি নিষ্কাষণের বিশেষ পাইপ, ১২৪০ সনে ব্যবহৃত কাবায় প্রবেশের জন্য কাঠ নিমিত কারুকাজ সম্পন্ন বিশেষ সিঁড়ি, অনেক দূর থেকে সময় দেখার প্রাচীন আমলের বিশাল ঘড়ি, জমজম কূপের পানি বিতরণের চিত্র ও কাবাকেন্দ্রিক মক্কার প্রাচীন আমলের বিবর্তনের বিভিন্ন ধরনের ছবি। মক্কা মিউজিয়ামের পাশে কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা। জায়গাটির নাম উম্মুল জুদ। এর ভেতরে সবসাধারণের যাওয়ার অনুমতি নেই। বাইরে থেকে, গেটের ফাঁকগলে যতটুকু দেখা যায় তাতেই তৃপ্তি, কাবার গিলাফ বানানো কারখানা বলে কথা! এই কারখানাটি ১৩৯৭ হিজরি সনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ রাস্তার পাশেই মক্কাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা রাবেতা আলম আল ইসলামি বা মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের অফিস। রয়েছে অফিস সংলগ্ন একটি সুন্দর মসজিদ। সংস্থাটি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত।