সূত্র জানায়, বিগত শতকের সত্তরের দশকের আগে দেশের মানুষের কাছে সুপেয় পানির প্রধান উৎস ছিল পুকুর-নদী-খাল আর বৃষ্টির জমিয়ে রাখা পানি। আর সত্তরের দশকের শুরুতে কৃষিকাজের জন্য এদেশে প্রথম ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার শুরু হয়। আশির দশকে তা ব্যাপকতা পায়। তারপর ভূগর্ভস্থ পানির ব্যাপক ব্যবহার আর থামানো যায়নি। পাশাপাশি দেশের উজানে পদ্মা ও তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোতে ভারত কর্তৃক বাঁধ নির্মাণসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির চাহিদাও বেড়ে গেছে। গত চার দশকে দেশে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়েছে প্রায় শতভাগ। খাবার পানি, রান্না, গোসল, সেচসহ সব কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে মানুষ। এখন সুপেয় ও চাষাবাদের পানির চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই মেটাতে হচ্ছে ভূ-গর্ভ থেকে। অপরিকল্পিতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ দ্বারা ওই পানি উত্তোলনের ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা ওয়াসা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। ওই মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় ২০২১ সাল নাগাদ ঢাকায় ৭০ ভাগ পানি ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস থেকে সরবরাহ করার জন্য কাজ চলছে। ঢাকা ওয়াসা ৩টি বড় পানি শোধনাগার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার নামে একটি শোধনাগার চালু করেছে। ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির উৎসের নির্ভরতা কমে ৫৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ হয়েছে। আরো ৩টি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। তাছাড়া রাজশাহী ওয়াসা দৈনিক ২৭ মিলিয়ন লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন শহীদ কামারুজ্জামান শোধনাগার নির্মাণ করেছে। খুলনা ওয়াসা ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘খুলনা পানি সরবরাহ’ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। সেটি বাস্তবায়ন হলে দৈনিক ১১ কোটি লিটার ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ৩ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে। সুপেয় পানি ও কৃষিকাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর অধিক হারে নির্ভরশীলতার কারণেই পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পুকুর খনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রায়োগিক গবেষণা চালানো হচ্ছে। ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে পুকুর খনন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।