ভারতে শিক্ষার্থী আত্মহত্যার হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে
ভারতে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মহত্যার বার্ষিক হার দেশটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং সামগ্রিক আত্মহত্যার প্রবণতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। নতুন একটি রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যারিয়ার ও কলেজ কাউন্সেলিং স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা আইসি-৩ গতকাল বুধবার (২৮ আগস্ট) ‘স্টুডেন্ট সুইসাইডস: অ্যান এপিডেমিক সুইপিং ইন্ডিয়া’ নামক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) ডেটার ওপর ভিত্তি করে এটি তৈরি করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে সামগ্রিক আত্মহত্যার বার্ষিক সংখ্যা ২ শতাংশ বেড়েছে। আর শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা চার শতাংশ বেড়েছে। যদিও শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনাগুলো ততটা সামনে আসে না।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত দুই দশকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার উদ্বেগজনকহারে বার্ষিক চার শতাংশ বেড়েছে, যা জাতীয় আত্মহত্যার গড় পরিসংখ্যানের দ্বিগুণ। ২০২২ সালে ভারতে মোট শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ৫৩ শতাংশ ছিল পুরুষ শিক্ষার্থী। ২০২১-২০২২ সালে পুরুষ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ৬ শতাংশ কমলেও নারী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এইসব আত্মহত্যার হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং সামগ্রিক আত্মহত্যার প্রবণতা- উভয়কেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য বলছে, ভারতে গত এক দশকে, যেখানে শূন্য থেকে ২৪ বছর বয়সীদের জনসংখ্যা ৫৮ কোটি ২০ লাখ থেকে ৫৬ কোটি ১০ লাখে নেমেছে সেখানে শিক্ষার্থীর মাঝে আত্মহত্যার সংখ্যা ৬ হাজার ৬৫৪ থেকে বেড়ে ১৩ হাজার ৪৪ হয়েছে। আরসি-৩’র রিপোর্ট বলছে, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু এবং মধ্যপ্রদেশে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই অঙ্গরাজ্যে যে পরিমাণ আত্মহনন বেড়েছে তা গোটা ভারতে আত্মহত্যার তিন ভাগের এক ভাগ। দক্ষিণ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে আত্মহত্যার হার ২৯ শতাংশ।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত ডায়রির তথ্যের উপর ভিত্তি করে আত্মহত্যার তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছে এনসিআরবি। ফলে এটা বলাই বাহুল্য যে, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত কম রেকর্ড করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এজন্য বিভিন্ন কারণ দায়ী হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে আত্মহত্যাকে ঘিরে সামাজিক কলঙ্ক এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারার অধীনে আত্মহত্যার চেষ্টা ও সহায়তার অপরাধীকরণ। আইসি-থ্রি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গণেশ কোহলি বলেন, এই প্রতিবেদনটি আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জরুরি প্রয়োজনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবশ্যই আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়ানোতে মনোযোগী হতে হবে যাতে এটি তাদের সামগ্রিক মঙ্গলকে সমর্থন করে। তাদের একে অপরের মধ্যে প্রতিযোগিতা থামাতে হবে।’ শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার গভীর বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন তিনি।