রেডিও মহানন্দা ৯৮.৮ এফএম

ভারতে বিচারপতিদের পাল্টাপাল্টি জেল

ভারতে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি সাজা ঘোষণা করেছেন। সেখানকার সংবাদমাধ্যমগুলো এ ঘটনাকে বলছে ‘নজিরবিহীন’। এক দিনের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার আদালত অবমাননার অভিযোগে বিচারপতি সি এস কারনানকে ছয় মাসের কারাদ-ের আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। যে ৮ বিচারপতির বিরুদ্ধে কারনান কারাদ-ের নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রধান বিচারপতিসহ তাদেরই ৭ জন তার বিরুদ্ধে আদালত অমনানার রায় ঘোষণা করেন। গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সি এস কারনান সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে প্রধান বিচারপতিসহ ৮ বিচারপতিকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ- ঘোষণা করেন। রায়ে তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ারও আদেশ দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের প্রথমদিকে, কারনান সুপ্রিম কোর্টের ২০ জন বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলান। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানান। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কারনানের সংঘাতের সেই শুরু। এরপর তফসিলি জাতিভুক্ত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বৈষম্য হচ্ছে বলে মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন কারনান। সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়। বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত বিচারপতির বেঞ্চের রায়ে তাকে বিচার বিভাগীয় ও প্রশাসনিক কাজ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
৩১ মার্চ প্রধান বিচারপতি কারনানেরর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। গত ৪ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চার সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে এলে তিনি তা করাতে অস্বীকার করেন। ৮ মে-র মধ্যে সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে পেশ করার নির্দেশ থাকলেও গত সোমবার উল্টো সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ মোট ৮ বিচারপতিকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদ-ের সাজা দেন কারনান। তফসিলি জাতি/উপজাতির উপর অত্যাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের ওই বিচারপতিদের তিনি কারাদ- দিয়েছেন বলে বিচারপতি কারনান জানান। তবে সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছিল, গত ৮ ফেব্রুয়ারির পর কারনানের দেওয়া সব নির্দেশ গুরুত্বহীন।
মাদ্রাজ হাইকোর্ট থেকে কলকাতা হাইকোর্টে বদলি হওয়ার পর, সেই বদলির নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন বিচারপতি কারনান। প্রথা ভেঙে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বিচারবিভাগের নিন্দা করার জেরেই বিচারপতি কারনানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়। সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি কারনানের জিম্মায় থাকা বিচার ও প্রশাসনিক বিষয়ের সব ফাইল কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কারনানের বিচারবিভাগীয় ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সাময়িক ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়। গত সোমবার তিনি দেশের প্রধান বিচারপতি-সহ সুপ্রিম কোর্টের মোট ৮ বিচারপতির পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ-ও ঘোষণা করলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বিচারপতি কারনানের রায় এখন মূল্যহীন। তাই প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের অন্য বিচারপতিদের জেলে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
যে ভাবে বার বার দেশের শীর্ষ আদালতকে বিচারপতি কারনান অগ্রাহ্য করছেন, তা গুরুতর আদালত অবমাননার সামিল বলে সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে। আদলত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেই তাকে ছয় মাসের জন্য জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনায় তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে পুলিশি হেফাজতে নিতে বলা হয়েছে।